কর্মক্ষেত্রে অশান্তি সম্ভাবনা। মাতৃস্থানীয় কারও শরীর-স্বাস্থ্যের অবনতি। প্রেমে সফলতা। বাহন ক্রয়-বিক্রয়ের যোগ। সন্তানের বিদ্যা-শিক্ষায় উন্নতি।প্রতিকার— ... বিশদ
‘জেনারেশন আমি’র পর আবার বাবা-ছেলে এক ছবিতে। কী বলবেন?
ঋতব্রত: মৈনাকদা কিন্তু এত তাড়াতাড়ি বাবা-ছেলেকে নিয়ে আবার একটা ছবি করতে চাননি। কিন্তু আমাদের জুটি নিয়ে দর্শক যে খুবই উত্তেজিত সেটা ট্রেলার প্রকাশের পর বেশ বুঝতে পারছি।
শান্তিলাল: শুরুতে এই ছবিতে আমার থাকার কথা ছিল না। কিন্তু এখন বিষয়টা আলাদা (হাসি)। তাই নতুন কিছু না করলে তো আমরা ব্যর্থ হতাম। আগের ছবির তুলনায় এখানে কিন্তু আমাদের বন্ডিংটা অনেক ভালো। আশা করছি দর্শক পছন্দ করবেন।
আপনাদের জুটিকে ব্যবহারের জন্য অন্যান্য পরিচালকদের তরফেও নিশ্চয়ই আরও অফার ছিল?
শান্তিলাল: একদম নয়। ‘রক্ত রহস্য’তে আমরা স্বাধীন চরিত্রে রয়েছি।
ঋতব্রত: আর বাবা ছেলে হিসেবে তো একদমই নয় (হাসি)।
ঋতব্রত ফ্লোরে সহ অভিনেতা হিসেবে বাবার উপস্থিতির সুবিধা ও অসুবিধা কী কী?
ঋতব্রত: শুধু বাবা কেন, আজকে সহ অভিনেতা যদি চন্দনকাকু (সেন) , বেণুজ্যেঠু (সব্যসাচী চক্রবর্তী) বা রনিকাকু (রজতাভ দত্ত) হন তাহলে সুবিধা অনেক বেশি।
শান্তিলাল: (মুচকি হেসে) এটাকেই হয়তো বলে স্বজনপোষণ!
ঋতব্রত: ছোট থেকে এঁদের দেখে আসছি। চোখে আঙুল দিয়ে ভুলগুলো শুধরে দিতে পারেন। আর অসুবিধা এটাই যে বাবা থাকলে ফ্লোরে বেশি ইয়ার্কি মারা যায় না (হাসি)।
শান্তিলাল: তাহলে একটা মজার ঘটনা বলি। ‘বাঘ বন্দি খেলা’র শেষ গল্পটায় প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমিও ছিলাম। একটা দৃশ্যে একটি মেয়েকে বুম্বাদার মুখে থুতু ছেটাতে হবে! মেয়েটি নতুন, সেই প্রথম ক্যামেরা ফেস করবে। শটটা শুনে মেয়েটি রীতিমতো ভয়ে কাঁপছে। জীবনের প্রথম শট আর এতটা কঠিন! নতুনদের এই আড়ষ্টতা বা ভয় কিন্তু ঋতব্রতর ক্ষেত্রে হবে না।
শান্তিলাল আপনি ছেলেকে কতটা সাহায্য করলেন?
শান্তিলাল: ফ্লোরে একদমই করিনি। শুরুতে চিত্রনাট্য পড়ার সময় ওর সঙ্গে একদিন আলোচনা হয়েছিল। ওর থেকে বিক্রম (ছবিতে ঋতব্রতর চরিত্র) কতটা আলাদা সেটাই ছিল আলোচনার বিষয়। ব্যস।
শট দেওয়া নিয়ে বাবা-ছেলের মধ্যে প্রতিযোগিতার আঁচ পাওয়া গিয়েছিল নাকি?
শান্তিলাল: না না। শটের আগে তো রিহার্সাল হতো। তাই অনেকটা সুবিধা হতো। তাছাড়া এই ছবিতে আমাদের এত সংলাপ রয়েছে যে রিহার্সাল ছাড়া উপায় ছিল না।
ঋতব্রত: তাছাড়া আমি বাবার দলে নাটক করি। তাই দু’জনের মধ্যে একটা আলাদা কেমিস্ট্রি রয়েইছে।
শান্তিলাল ইন্ডাস্ট্রিতে আপনার সহকর্মীদের মধ্যে অনেকেরই ছেলেমেয়েরা এখন অভিনয় করছে। তাঁদের মধ্যে আলাদা করে যখন ঋতব্রত প্রশংসিত হয় তখন বাবা হিসেবে আপনার অনুভূতি জানতে চাই।
শান্তিলাল: দেখুন ওদের প্রজন্মের মধ্যে এখন নিয়মিত অভিনয় করছে ঋদ্ধি (সেন)। খরাজের ছেলে বিহু ও শ্রীকান্তর ছেলে মহুল মাঝেমধ্যে অভিনয় করে। সম্প্রতি উজান বেশকিছু ছবি করছে। চৈতি ঘোষালের ছেলে অমর্ত্য আর শিলাজিতের ছেলে ধি এই মুহূর্তে পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত। তাই নিয়মিত হয়তো ঋতব্রত, ঋদ্ধি আর উজানকেই দেখা যাচ্ছে। আমার তো এক ছেলে নয়, এরা প্রত্যেকই আমার পুত্রসম। ঋতব্রত প্রশংসিত হলে যতটা আনন্দ হয় ঋদ্ধি জাতীয় পুরস্কার পাওয়ায় ঠিক ততটাই খুশি হয়েছিলাম। আসলে ওদের প্রজন্মের সবাই যদি খুব ভালো কাজ করে, সকলের যদি নামডাক হয় তাহলে আমার ভীষণ আনন্দ হবে। কারণ একজন ভালো কাজ করলে তো আর ইন্ডাস্ট্রি বাঁচবে না! এই প্রজন্মটার দিকেই তো আগামী দিনের বাংলা ছবি তাকিয়ে রয়েছে। তার পাশাপাশি নতুনরাও আসবে।
ঋতব্রত এখন তুমি তুলনামূলক সাহিত্যের ছাত্র। ভবিষ্যতে কেরিয়ার সম্পর্কে কিছু ভেবেছ? অভিনয় নাকি অন্য পেশা?
ঋতব্রত: তুলনামূলক সাহিত্য বা অভিনয় দুটোই ভালোবেসে করছি। এখন সবকিছু বদলাচ্ছে। ক্রিয়েটিভ কাজের সঙ্গে আমার যুক্ত থাকার ইচ্ছা রয়েছে। ভবিষ্যতে কী হবে সেটা এখনই বলা খুব মুশকিল।
কেরিয়ার নিয়ে পরিবারের তরফে কোনও চাপ?
ঋতব্রত: না, আমার বাড়ি থেকে কোনওরকম চাপ নেই। আত্মীয়স্বজনরা আগে অনেক কিছু বলত। কিন্তু অনেকগুলো ছবিতে অভিনয় করেছি দেখে তাঁরা এখন আর কিছু বলতে পারেন না।
শান্তিলাল: যেভাবে প্রযুক্তি এগচ্ছে আর চারদিকে কর্মী ছাঁটাই শুরু হয়েছে তাতে চাকরির অবস্থা বেশ খারাপ । ভবিষ্যতে আরও খারাপ দিন আসছে। কিন্তু রোবট তো আর কবিতা বলতে পারবে না বা ছবি আঁকতে পারবে না। তাই সৃষ্টিশীল কাজ কিন্তু থামবে না।
বাংলা ইন্ডাস্ট্রির ধর্মঘট, বকেয়া পারিশ্রমিক বা সিঙ্গল স্ক্রিনের বেহাল অবস্থা দেখেও ছেলেকে অভিনয়কে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার পরামর্শ কি ঝুঁকিপূর্ণ নয়?
শান্তিলাল: কোন পেশায় অনিশ্চয়তা নেই বলুন তো! আমাদের সময় বিয়ের বিজ্ঞাপনে স.চা অর্থাৎ সরকারি চাকরি লেখা হতো। ছেলের সরকারি চাকরি মানে মেয়ের বাবারা নিশ্চিন্ত হতেন। আর আজকে রেল এ ছাঁটাই, বিএসএনএল-এ কর্মীদের মাইনে হচ্ছে না। তাহলে?
শান্তিলাল আপনি কেরিয়ারে অজস্র সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। কিন্তু ছেলের পাশে বসে একসঙ্গে সাক্ষাৎকার দিতে বসার মধ্যে আলাদা কোনও প্রাপ্তি খুঁজে পান?
শান্তিলাল: (মৃদু হেসে) অবশ্যই এবং সেটা ভাষায় বলা কঠিন। আমার পরিবারে আমিই প্রথম অভিনয়ে এসেছিলাম। আজকে আমার আত্মীয়দের মধ্যে অনেকেই অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত। ছেলের জন্য এখন দায়িত্ব বেড়েছে। ছেলেকে নিয়ে বেরতে হবে। ছবির প্রচার পর্ব সেরে সন্ধ্যায় রিহার্সাল সেরে আবার একসঙ্গে বাড়ি ফেরা।
ঋতব্রত বাবার দৌলতে ছোট থেকে টলিউডকে দেখেছ। তখন বাইরে থেকে, এখন ভিতর থেকে। কোনও পার্থক্য চোখে পড়ে?
ঋতব্রত: প্রযুক্তি উন্নত হয়েছে। বাণিজ্যিক মশালা ছবি দর্শক হয়তো আর দেখতে চাইছেন না। দর্শকদের পছন্দ অনুযায়ী অভিনেতাদের নিজেকে বদলাতে হচ্ছে। বাবা এবং তাঁর সমসাময়িক অনেকেই এখন ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পাচ্ছেন দেখে আমার আরও বেশি ভালো লাগছে। এটা কিন্তু অনেক আগেই হতে পারত।
শেষ প্রশ্ন। সুযোগ পেলে একে অপরকে কোন গোয়েন্দা চরিত্রে কাস্ট করতে চাইবেন?
ঋতব্রত: শার্লক হোমস বা রুদ্র সেন।
শান্তিলাল: ও বিক্রমের চরিত্রে অভিনয় করল। আপাতত অন্য কোনও গোয়েন্দার চরিত্রে অভিনয় করার প্রয়োজন নেই (হাসি)।