পারিবারিক ঝামেলার সন্তোষজনক নিষ্পত্তি। প্রেম-প্রণয়ে শুভ। অতিরিক্ত উচ্চাভিলাষে মানসিক চাপ বৃদ্ধি। প্রতিকার: আজ দই খেয়ে ... বিশদ
আসন্ন বিড়ম্বনাকে বৈভব করেই ‘মা তারা’ সেজেছেন নবনীতা দাস। ‘মহাপীঠ তারাপীঠ’–এ তারা মা-ই সিরিয়ালের পরিভাষায় ‘প্রোটাগনিস্ট’। সুতরাং দৈব চরিত্রটি জনমনে আদৃত হলে, আর পাঁচজন সেলিব্রিটির তুলনায় তাঁর দৈনন্দিন জীবন অনেকটাই ‘অস্বস্তিকর’ হয়ে উঠতে পারে, সে ব্যাপারে সম্পূর্ণ সচেতন নবনীতা। বস্তুত, তিনি চানও সেই আম-আগ্রহকে উপভোগ করতে। চ্যানেলের অফিসে বসে ‘দীপ জ্বেলে যাই’-এর দিয়া বলেন, ‘সেখানেই তো আমার সাফল্য।’ দিয়া চরিত্র থেকে বেরিয়ে আসাটা যেমন চ্যালেঞ্জিং ছিল, তেমনই ‘মা তারা’ হিসেবে জনমানসে বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করাটাও নবনীতার কাছে সমান চ্যালেঞ্জিং।
‘জানার খিদে, অভিনয়ের খিদে। এই তীব্র আকাঙ্খাটাই আমাকে মা তারা চরিত্রে অভিনয় করতে উৎসাহ জুগিয়েছে। মানছি এরপরে কোনও চরিত্র পেতে আমার অসুবিধে হবে। কিন্তু এখানেই তো একজন শিল্পীর চ্যালেঞ্জ, সে নানা রকম চরিত্রে নিজেকে ঠিকমতো ফুটিয়ে তুলতে পারছে কিনা। দীপ জ্বেলে যাই-এর দিয়া থেকে মন ঘুরিয়ে মানুষ আমাকে ‘মা তারা’ বলে আইডেন্টিফাই করতে পারছেন কিনা। যদি করতে পারেন, তাহলে আমি সফল। আমি জয়ী,’ বললেন নবনীতা। সাফল্য নিয়ে না হোক, খ্যাতির বিড়ম্বনার বিপদটা যে কত, তা কি তিনি আঁচ করতে পারছেন? এ প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে একটু ভাবলেন অভিনেত্রী। বললেন, ‘হ্যাঁ, অভিনয়ের জন্য আমার জীবনযাত্রার ধরন অনেকটাই পাল্টাতে হবে। এত দিন যে পাবলিক শো করেছি, সেগুলোর ধরন বদলাতে হবে। কিন্তু এই পরিবর্তনটার মধ্যে দিয়ে যদি না যাই, যদি এই ঝুঁকিগুলো আমি না নিই, তাহলে সারাজীবন ওই পাশের বাড়ির মেয়ে হয়েই থেকে যাব।’
যেহেতু প্রস্তুতির সময় ছিল কম, তারা মায়ের আবির্ভাব ও তাঁর লীলা-মহিমার কথা-কাহিনী সেভাবে সম্পূর্ণটা জেনে নেওয়ার সুযোগ হয়নি, তাই নবনীতা নির্ভর করছেন ধারাবাহিকটির গল্প বিন্যাসের উপর। তাঁর বক্তব্য, ‘সিরিয়ালটা যেমনভাবে যাবে, তার মধ্যে দিয়েই আমি নিজেকে ক্রমশ প্রস্তুত করে নিতে পারব।’ তাই নিজের সুবিধের জন্য মা তারার উপর লেখা গবেষণা গ্রন্থগুলি ইতিমধ্যেই পড়তে শুরু করেছেন।
মনে মনে ‘কৃষ্ণভক্ত’ হলেও স্বভাবে-প্রকৃতিতে ‘নাস্তিক’ নবনীতা কিন্তু নিজের অন্তর্জগৎ নিয়ে অকপট। চঞ্চল, ছটফটে মেয়ে এখন আগের চেয়ে অনেক শান্ত। জোর দিয়ে বললেন, ‘বিশ্বাস করুন, আমি অনেকটা বদলে গিয়েছি। আস্তে কথা বলি। ধীরে চলাফেরা করি।’ মা তারার চরিত্রে অভিনয় করা নিয়ে নবনীতা ইতিমধ্যে বিপুল প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করছেন পরিজনদের মধ্যে। বোলপুরে শ্যুটিং চলার সময় সেখানকার আত্মীয়দের মধ্যে আগ্রহ, কিংবা প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে ধারাবাহিকটির প্রোমো দেখা পরিচিতদের এগিয়ে এসে পরামর্শ দেওয়া থেকে প্রাথমিক রাউন্ডে ভালোভাবে উতরে যাওয়াকেই সাফল্যের অভিমুখ করছেন তিনি।
অন্যদিকে, ডার্ক টুরিজিম হলোকস্ট-এর গবেষক, অক্সফোর্ডের ছাত্র সব্যসাচী চৌধুরী। রিসার্চ অসম্পূর্ণ রেখে টলিউডের টেলিসংসারে পা রেখেছেন বছর তিনেক আগে অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়র বাবা-মায়ের একপ্রকার বিরুদ্ধাচরণ করেই। ‘মহাভারতে’র যুধিষ্ঠির, ‘সাত ভাই চম্পা’র রাজা নক্ষত্রজ্যোতি, ‘অগ্নিজলে’র নৈঋত থেকে ‘মহাপীঠ তারাপীঠ’-এ সাধক বামাখ্যাপা— ‘অভিনেতা’ সব্যসাচীর ক্রমোন্নতির গ্রাফটা পৌরাণিক সরণি ধরেই। এখনও পর্যন্ত কোনও ড্রয়িংরুম ড্রামায় পাশের বাড়ির ছেলের ইমেজ নিয়ে ছোটপর্দায় হাজির হননি তিনি। তাতে অবশ্য কোনও আক্ষেপ নেই সব্যসাচীর। বেলুড়মঠের বাসিন্দা উল্টে বেশি সাবলীল পৌরাণিক চরিত্রে অভিনয় করতে। তাই বামাখ্যাপা চরিত্রটির মধ্যে ক্রোধ ও কমনীয়তা, সাধনা ও আরাধনা, ভক্ত ও সন্তানের যে বৈচিত্র্যময় বৈপরীত্য রয়েছে, শুধুমাত্র সেগুলিকে সত্যি করে তোলাটা সব্যসাচীর কাছে চ্যালেঞ্জ নয়, একজন গবেষকের মতোই নিবিড় আণুবিক্ষণীক অনুশীলন প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে পরিচালক, গবেষক ঋতম ঘোষালের নির্দেশিত পথে বামাখ্যাপাকে নতুন রূপে সাজাতে চান তিনি।
ফিরে যাবার কথা ছিল জার্মানি। শেষ করার কথা ছিল গবেষণার বাকিটুকু। সেটাকে আপাতত মুলতুবি রেখে, বাবা-মায়ের দীর্ঘশ্বাসকে সঙ্গে নিয়ে সব্যসাচী তন্নতন্ন করে পড়ে চলেছেন বামাখ্যাপার উপর লেখা নানা বই। কখনও মা, কখনও মেয়ে। আবার উল্টোদিকে একটা খ্যাপা ছেলে, যিনি একাধারে সাধক ও সাধারণের সমব্যথী, সেইসঙ্গে ত্রাণকারী তান্ত্রিক। মা তারার সঙ্গে বামাখ্যাপার রসায়নটা তাই ফ্লোরে ঢুকে, মেকআপ নিয়ে, সংলাপ আওড়ে ‘শট’ দিয়েই শেষ হয়ে যা না। তারপরেও যে গভীর অনুধ্যানটা অপরিহার্য, সেটাতেই সিদ্ধিলাভ করতে চাইছেন নবনীতা-সব্যসাচী।
প্রিয়ব্রত দত্ত
ছবি ডি ডি সাহা