গুমট অন্ধকার মঞ্চে। আচমকা বিকট শব্দ। তীব্র আলো। দরজা খুলে লাফিয়ে পড়ল এক চরিত্র। ভাইরাস। করোনা ভাইরাস। সঙ্গে আরও বেশ কয়েকজন ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে এদিক ওদিক। কয়েক বছর আগে ঠিক যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল করোনা ভাইরাস। সম্প্রতি মডার্ন মাইম সেন্টার প্রযোজিত মাইম শো ‘ভাইরাস’-এ ফিরে এল চার বছর আগের সেই ভয়াবহ স্মৃতি। মানুষের মূল্যবোধ, গণমৃত্যু, বন্দিদশা, স্বাস্থ্যকর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রম, বিজ্ঞানীদের নিরন্তর প্রয়াস— সবই ফুটে উঠল কেবল অভিব্যক্তিতে। শিশির মঞ্চে আয়োজিত এই শো মনে করিয়ে দিল মানুষের শুভবুদ্ধির কাছে ‘ভাইরাসরূপী’ শয়তানের পরাজয় নিশ্চিত। ওই অনুষ্ঠানে টুকরো কয়েকটি নিবেদনের মাধ্যমে চারবছর আগের সেই অনভিপ্রেত অধ্যায় ফিরে এসেছিল। প্রথম প্রয়াস ছিল ‘জীবাণুর পদার্পণ’। মঞ্চ সেখানে হয়ে উঠল সমগ্র পৃথিবী। ভাইরাসের আগমন, ছড়িয়ে পড়া, শরীরচর্চার মাধ্যমে সুরক্ষিত থাকা— দৃশ্যকল্পে উঠে এল সবটা। পরবর্তী অধ্যায়ে এল শিশুজীবনের কাহিনি। ‘স্বাধীনতার খোঁজে’। এই পর্যায়ে শিশুশিল্পীদের অভিনয় অপূর্ব। বন্দিদশার আবহে বন্ধুদের জন্য ছটফটানি তুলে ধরা হয়েছে সুচারু ভঙ্গিতে। পাশাপাশি মানুষ ‘বন্দি’ আর পশুপাখিরা ‘মুক্ত’— উঠে এসেছে এই রূপকও। কষ্ট হয় তৃতীয় নিবেদন ‘যোদ্ধার পুরস্কার’ দেখে। দিনরাত এক করে রুগীর সেবার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু তাদেরই আবার জনতার রোষের শিকার হতে হয়। এই বিশেষ অংশটি মোচড় দেয় দর্শক মননে। প্রশ্ন তোলে, মানুষের মূল্যবোধ নিয়েই। চতুর্থ নিবেদন ‘গণমৃত্যু’ আবেগে পরিপূর্ণ। মৃত্যুমিছিল, উপচে পড়া শবদেহের স্তুপ, সংক্রমণের ভয়াল পরিবেশ, মানুষের প্রতি মানুষের অবিশ্বাস— সমাজের ভয়াল বাস্তবরূপ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন নির্মাতারা। এই অংশটির জন্য প্রত্যেক শিল্পীকে কুর্নিশ। শেষ নিবেদন ‘জীবাণুর পুনর্জন্ম’ দেখায়, প্রতিরোধ করা সম্ভব ঠিকই। কিন্তু ভাইরাসের অন্ত নেই। তবে সব অন্ধকার কেটে আলো একদিন আসবেই, এই বিশ্বাসকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে নিবেদনে।
মূকাভিনয়ের গল্প রচনা, অভিনয় ও পরিচালনায় ছিলেন শিল্পী কমল নস্কর। বিষয় ভাবনায় সমগ্র প্রযোজনাটি অভিনব। ভালো লাগে জীবাণুর চরিত্রে দেবাশীষ পোদ্দারের অভিনয়। এছাড়াও বৃষ্টিকণা নস্কর, শুভ্রা সান্যালের অভিনয় অতুলনীয়। সমগ্র প্রযোজনা মাতিয়ে রেখেছিল বাকসারা হাইস্কুল ও নেতাজি নগর বালিকা বিদ্যমন্দিরের ছাত্রছাত্রীরা। ভালো লাগে তাদের প্রয়াস।
শান্তনু দত্ত