উকিল ও ডাক্তারদের কর্মব্যস্ততা বাড়বে। পত্নী/পতির স্বাস্থ্য আকস্মিক ভোগাতে পারে। মানসিক অস্থিরভাব। ... বিশদ
অমরত্বের প্রত্যাশা তাই নেই আমাদের। তবু নীরোগ ও সুস্থ অবস্থায় দীর্ঘায়ু লাভের চাহিদা বেড়েছে। এখন ভারতে মানুষের গড় আয়ু ৭০-৭২ বছর। তবে এই গড় আয়ুকে অনেকটা বাড়িয়ে ৯০ পার করেও দিব্য সুস্থ রয়েছেন।
জন টিনিসউড হলেন এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে প্রবীণ মানুষ। যদিও লিভারপুলে জন্ম নেওয়া এই মানুষটি সম্প্রতি গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, তাঁর এত দীর্ঘ জীবনের নেপথ্যে আলাদা করে কোনও রহস্য নেই। একে ‘ভাগ্য’ হিসেবেই মেনে নিতে চাইছেন তিনি। তবে তাঁর শৈশবের কথা বলতে গিয়ে তিনি যা যা বলেছেন, তাতে নিয়মানুবর্তী জীবন ও কঠোর শারীরিক পরিশ্রমের কথা উঠে এসেছে। টিনিসউড বলেন, ‘আমি ছোটবেলায় বেশ কর্মঠ ছিলাম এবং অনেক হাঁটতাম।’ তাহলে কি শুধু হাঁটা আর পরিশ্রমই শেষ কথা? বয়স্ক মানুষদের চিকিৎসা করেন যাঁরা, সেই জেরিয়াট্রিক বিশেষজ্ঞরা অবশ্য পরিশ্রম ও নিয়মের সঙ্গে যোগ করেন আরও নানা কিছু ‘এক্স ফ্যাক্টর’।
বয়স্ক হিসেবে চিহ্নিত করা হয় ৬০ পেরলে। কিন্তু বয়স বাড়ার নানা ছাপ শরীরে পড়তে শুরু করে বয়স ৪৫ পেরলেই। এই বয়সের পর থেকেই নিজের শরীর ও মনের আলাদা খেয়াল রাখা জরুরি বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের। শরীরের রোগ-অসুখ ও কিছু লাইফস্টাইল ডিজিজের সঙ্গে বংশগত ধারার সম্পর্ক আছে। আবার কিছু অসুখ আছে জিনঘটিত। দুরারোগ্য কোনও রোগের কবলে না পড়লে, সেসব অসুখের সঙ্গে যুঝেও দীর্ঘায়ু ও সুস্থ জীবন পাওয়া সম্ভব। শুধু খেয়াল রাখুন কিছু বিষয়ে।
কী কী খেয়াল?
সবকিছুর আগে খাবার পাতে নজর দিন। আজকাল যা-ই খান, তার বেশিরভাগ ভেজাল নয়তো নানা রাসায়নিক মেশানো। তাই চেষ্টা করুন পাতে সুষম খাবার রাখতে। পাতে যেন প্রোটিন, ফ্যাট ও কার্বোহাইড্রেটের মাত্রা ঠিক থাকে। সঙ্গে ভিটামিন, মিনারেল ও জলের পরিমাণও ঠিকঠাক বজায় রাখতে হবে। বয়স ৪০ পেরলেই একজৱ ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিয়ে নিজের খাবার রুটিন ঠিক করুন। সময়মতো খান। দুপুর ও রাতের খাওয়ার সময়ে অনিয়ম করবেন না। এটি খুব জরুরি। এর সঙ্গে ধূমপান বা মদ্যপানের নেশা থাকলে তা অবিলম্বে ছাড়তে হবে। শরীরে বাইরে থেকে নিকোটিন বা অ্যালকোহলের মতো কোনও টক্সিক উপাদান প্রবেশ করানো যাবে না। খাওয়াদাওয়ার পাশাপাশি একজন বয়স্ক মানুষকে সামাজিক হতে হবে। নিত্য যেসব হালকা কাজ বাইরে বেরিয়ে সম্ভব, তা তাঁদের করতে হবে। বাড়ির লোকজন পড়ে যাওয়ার ভয়ে বা কোথায় কী ঘটবে এই চিন্তায় বহু বয়স্ক ব্যক্তিকে গৃহবন্দি করে ফেলেন। এতে তাঁদের শারীরিক সক্ষমতা খুব দ্রুত কমতে থাকে। হাঁটাহাঁটি বা এক্সারসাইজ কমে গেলে ওজনও বাড়ে। বরং দৈনন্দিন হাঁটাহাঁটি, সাঁতার বা ব্যায়াম বজায় রাখুন। এতে ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকলে নানা অসুখ দূরে থাকবে। পাড়ার লোকজনের সঙ্গে মেলামেশা করুন, নানা সামাজিক কাজে অংশ নিন। এতে সময় যেমন কাটে, বেঁচে থাকার আনন্দ ও রসদও খুঁজে পাবেন।
দূরে রাখতে হবে স্ট্রেসকে। জীবনে নানা চাপ থাকবেই। তাদের সামলে নেওয়ার মতো ক্ষমতাও রাখতে হবে। সেসব সামলাতে প্রয়োজনে মেডিটেশন করুন। গান শুনুন অবসরে, নিজের শখের পরিচর্যা করুন। একান্তই স্ট্রেস সামলাতে না পারলে কোনও মনোবিদের দ্বারস্থ হন, কথা বলে ও জীবনশৈলীর নানা পরিবর্তন এনে তিনি আপনাকে স্ট্রেস সামলানোর উপায় বাতলে দেবেন। শরীরচর্চা করলেও স্ট্রেস এড়ানো যায়।
এতকিছুর পরেও দিনে নির্দিষ্ট ৬-৭ ঘণ্টা ঘুমের খুব প্রয়োজন। সারাদিনে যেটুকু পরিশ্রম করছেন, তাতে যা এনার্জির প্রয়োজন— তার অনেকটাই আসবে ঘুম থেকে। ঘুম ভালো হলে কোষের মেরামতির কাজও ভালো হয়। তাই বয়স ৪৫-এর কোঠা পেরলেই ঘুম ও জীবনশৈলীর নানা দিকে খেয়াল রাখুন। আয়ু বাড়ানোর মন্ত্র শুরু হোক এই বয়স থেকেই।
ঋণ: ডাঃ অরুণাংশু তালুকদার (জেরিয়াট্রিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ)
লিখেছেন মনীষা মুখোপাধ্যায়