উকিল ও ডাক্তারদের কর্মব্যস্ততা বাড়বে। পত্নী/পতির স্বাস্থ্য আকস্মিক ভোগাতে পারে। মানসিক অস্থিরভাব। ... বিশদ
জ্বর কেন হয়
জ্বর কোনও অসুখ নয়, অসুখের উপসর্গ মাত্র। এ কথা আমরা জানি। তবে যা বুঝতে পারি না, সেটি হল জ্বর হয় কেন? একদিন হঠাৎ দেখেলেন, গা ম্যাজম্যাজ করছে বা সর্দিকাশি আছে সঙ্গে গা-হাত-পা ব্যথা। কারও হয়তো হঠাৎ প্রবল শীত করছে, তারপরেই শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করল। কিন্তু কেন এমন হল?
আসলে আমাদের শরীর মাঝেমধ্যেই ‘ফরেন বডি’ বা রোগজীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়। আবার শরীরে প্রদাহ তৈরির মতো ঘটনাও ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে মানবদেহের স্বাভাবিক প্রতিরক্ষাবলয় কিন্তু চুপ করে থাকে না। সেই ‘বিদেশি শত্রু’-কে বাধা দিতে নিজের মতো করে প্রতিরক্ষা সাজায়। তাই প্রাথমিক ওষুধপত্র শুরুর আগেই শরীর কিছু রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ শুরু করে। চিকিৎসা পরিভাষায় একে বলে ‘অটাকয়েড’। বাইরের জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে মানবশরীর প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন জাতীয় একটি অটোকয়েড নিঃসরণ করে। এই প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন নিঃসরণ শুরু হলেই শরীরের অভ্যন্তরস্থ আঘাত বা প্রদাহে ব্যথা শুরু হয়। অনেক সময় জায়গাটা ফুলে যায়। শরীরে এই প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিনের পরিমাণ বেড়ে গেলে দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। তাকেই তখন জ্বর বলে। তাই জ্বর উপসর্গ, অসুখ নয়।
প্রাথমিক ওষুধ প্যারাসিট্যামল কেন?
শরীরে যে অটোকয়েড প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন নিঃসরণ হয়, তা তৈরি হয় কক্স উৎসেচক দিয়ে। প্যারাসিটামল রক্তের সঙ্গে মিশে এই উৎসেচক তৈরিতে বাধা দিতে পারে। এদিকে কক্স ছাড়া প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন তৈরি হতেই পারে না। ফলে প্যারাসিট্যামল খেলে প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিনের অভাবে শরীরের তাপমাত্রা কমতে শুরু করে। শুধু তা-ই নয়, যে জীবাণুর কারণে জ্বর, সেও দুর্বল হয়ে পড়ে ও জ্বর ছাড়ে। তাহলে কি জ্বরের একমাত্র ওষুধ এটিই? এই প্রশ্ন অনেকেই করে থাকেন। বিশেষ করে দিন কয়েক জ্বর হলেই রোগীর পরিজন ভাবতে শুরু করেন অ্যান্টিবায়োটিক দিলে হয়তো তাড়াতাড়ি সেরে যাবে! সে ধারণা সবসময় ঠিক নয়। জ্বর মূলত ভাইরাস, ব্যাকটেরয়িা ও কিছু ক্ষেত্রে ফাঙ্গাসের আক্রমণে হয়। যেসব জ্বর ভাইরাসঘটিত, তা যতই রোগীকে কষ্ট দিক না কেন, কোনও অ্যান্টিবায়োটিক সেখানে দিয়ে লাভ নেই, কারণ অ্যান্টিবায়োটিক ভাইরাস বা ছত্রাকের উপর কাজ করে না। শুধুমাত্র ব্যাকটেরিয়াল হানায় হওয়া জ্বরকেই অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। কোন জ্বরে অ্যান্টিবায়োটিক লাগবে, আর কোথায় নয়, সেটি নানা পরীক্ষা ও উপসর্গের উপর নির্ভর করে ঠিক করবেন চিকিৎসক।
কী কী উপসর্গ
অনেক সময় দেখা যায়, সাধারণ সর্দি-কাশি, বেশি তাপমাত্রা দিয়ে একটি জ্বরের পর্ব শুরু হল। সাধারণ ভাইরাল ফ্লু-এর মতো প্রথমদিকে সর্দি তরল ও নাক দিয়ে জল পড়ার মতো উপসর্গ আছে। কিন্তু কিছুদিন পর থেকেই সর্দি সবুজ ও হলুদ রঙের হতে শুরু করল, শুরু হল কাশি। তখন ধরে নিতে হয়, ভাইরাসের সঙ্গে কোনও ব্যাকটেরিয়াও শরীরে প্রবেশ করেছে ও শক্তিশালী হয়েছে। আর শুধু প্যারাসিটামলে কাজ হবে না, তখন প্রয়োজন অ্যান্টিবায়োটিকের। তাছাড়া জ্বর হলে জেনে নিতে হবে রোগীর প্রস্রাবে জ্বালা, বুকে কফ জমে থাকার মতো উপসর্গ আছে কি না, জানতে হবে জ্বরের প্রকৃতি কী। সেই অনুসারে কিছু পরীক্ষা করাতে হবে। তবেই নিশ্চিত হওয়া যাবে কখন অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন। নইলে প্যারাসিট্যামল ও প্রচুর ফ্লুইড ডায়েট দিয়েই জ্বর আয়ত্তে আনা হয়।
কী কী পরীক্ষা
এই সময়ে জ্বর হলেই তিনদিনের মাথায় ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া পরীক্ষা করানো খুবই গুরুতর। তবে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার ক্ষেত্রে টোটাল ব্লাড কাউন্ট (সিবিসি), ইউরিন ফাংশন টেস্ট (জ্বরের সঙ্গে প্রস্রাবে জ্বালা থাকলে), চেস্ট এক্স রে ইত্যাদি করতে হবে। এসব টেস্টের রিপোর্টির উপর ভিত্তি করে যদি দেখা যায়, শরীরে ব্যাকটেরিয়া রয়েছে, তবেই অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করতে হবে। সুগার রোগী ও শিশুদের বেলায় এই পরীক্ষাগুলি দ্রুত করে নিতে হবে। নইলে সমস্যা দ্রুত হাতের বাইরে বেরিয়ে যেতে পারে।