ধর্মকর্মে সক্রিয় অংশগ্রহণে মানসিক তৃপ্তি ও সামাজিক সুনাম। পেশাদার শিল্পীদের শুভ সময়। ... বিশদ
চিকিৎসাবিজ্ঞানে ‘সাইকোপ্যাথ’
মনোবিজ্ঞানে আর ‘সাইকোপ্যাথ’ শব্দটা ব্যবহৃত হয় না। এখন ‘অ্যান্টি সোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার’ বলা হয়। আগে ‘সাইকোপ্যাথ’ সেই সমস্ত ব্যক্তির জন্য ব্যবহার হতো, যারা ঠান্ডা মাথায় যে কোনও ক্রাইম করতে পারে। তারা নিয়ম-কানুন, আইনের তোয়াক্কা করে না। সাইকোপ্যাথ বিষয়টা একদিনে হয় না। ধীরে ধীরে অবচেতন মনের মধ্যে নানা কুপ্রভাব পড়ার কারণে মনে প্রভাব পড়ে। অনেক শিশুর ‘অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার-অ্যাক্টিভ ডিজঅর্ডার’ (এডিএইচডি) থাকে। এই সময় বিদ্যালয় থেকে অনেক অভিযোগ আসে শিশুর সম্পর্কে। বাচ্চাটি ভীষণ চঞ্চল, দুরন্ত হয়। কিছু না কিছু ভাঙে। কোনও জায়গায় স্থির হয়ে বসে না। আরেকটু বড় হলে শুরু হয় অন্যরকম সমস্যা—কনডাক্ট ডিজঅর্ডার। মিথ্যা বলার প্রবণতা বাড়ে। অন্যের ক্ষতি করে। মারামারি করে। এই স্বভাবগত বৈশিষ্ট্যগুলি যদি ছোটবয়সে পরিবর্তন না করা যায়, তবে তা অ্যান্টি সোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার বা সাইকোপ্যাথে পরিণত হতে বাধ্য। আর এই সাইকোপ্যাথি যাদের থাকে, তারা ভবিষ্যতে ‘সাইকো কিলার’ও হয়ে উঠতে পারে।
সাইকোপ্যাথি কি ‘জেনেটিক’?
কিছুটা অবশ্যই জিনগত। আর কিছুটা নির্ভর করে আর্থ-সামাজিক পরিবেশের উপর। ধরা যাক, কোনও শিশুর জিনে এই সমস্যা রয়েছে। কিন্তু তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ খুব ভালো। সেক্ষেত্রে তার সমস্যাগুলি কম প্রস্ফুটিত হবে।
সাইকোপ্যাথদের চেনা যায়?
বাইরে থেকে দেখে আলাদা করে চিহ্নিত করার কোনও রাস্তা নেই। তবে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে ইতিহাস, ব্যাকগ্রাউন্ড জানলে আঁচ পাওয়া যেতে পারে। অ্যান্টি সোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার থাকা এমন অনেক ব্যক্তি রয়েছে, যাদের ব্যবহার অসম্ভব ভালো।
সাইকোপ্যাথদের কি শৈশবে সমস্যা থাকেই?
আগেই বলা হয়েছে, সমস্যাটা জেনেটিক ও পারিপার্শ্বিক। সমস্ত সাইকোপ্যাথদেরই শৈশব খারাপ হয় না। তার যদি আচরণগত সমস্যা থাকে, তাহলে সে কেবল ‘মজার’ জন্যই মানুষের ক্ষতি করতে পারে। তার সঙ্গে পূর্বের কোনও জিঘাংসা বা প্রতিশোধের সম্পর্ক নাও থাকতে পারে। আবার শৈশবের কিছু স্মৃতি অবশ্যই প্রভাব ফেলে।
শিশুর প্রতি অভিভাবকের যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন। কোনও বাচ্চা কুকুরকে ঢিল মেরে আনন্দ পাচ্ছে। বিড়ালের লেজ ঘুরিয়ে দিচ্ছে। বন্ধুদের অসম্মানজনক কথা বলছে। নারীদের প্রতি মনোভাব ভালো নয়। তৎক্ষণাৎ বোঝাতে হবে, এগুলি ভুল। মানুষকে শ্রদ্ধা করা, প্রাণীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার মতো বিষয়গুলি ছোট থেকেই রপ্ত করানো উচিত।
সাইকোপ্যাথি কি মনোরোগ?
একটা সূক্ষ্ম যোগাযোগ রয়েছে। তবে আইনগতভাবে মনোরোগ (মেন্টাল ডিজঅর্ডার) ও স্বভাবদোষ (পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার)কে একই গোত্রে ফেলা যায় না। সাইকোপ্যাথ স্বভাবগত দোষ, মজ্জাগত। তার সঙ্গে মনোরোগকে গুলিয়ে ফেলা ঠিক নয়।
আদালত কি সাইকোপ্যাথদের সাজা কম করে?
একটা কথা মনে রাখা প্রয়োজন, প্রতিটি অপরাধমূলক কার্যকলাপ অপরাধী মন দ্বারা সমর্থিত। কোনও অন্যায় বা নিষিদ্ধ কাজ যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে বা অবহেলাক্রমে করে থাকে, তবে তাকে সে কাজের জন্য দায়ী হতেই হয়। ইচ্ছাকৃত কাজের ক্ষেত্রে ধরে নেওয়া হয়, অপরাধীর একটি অসৎ অভিপ্রায় বা দোষী মন ছিল। এটিকে বলা হয় মেনসরিয়া। সাধারণত সাইকোপ্যাথ বা সাইকোকিলারদের এটি থাকে। সাইকোপ্যাথরা কিন্তু মানসিকভাবে অসুস্থ নয়। বরং অপরাধ কীভাবে করতে হবে, সেই চিন্তাভাবনা করতে তারা সক্ষম।
তাই তাদের সাজা কমানোর কোনও প্রশ্নই নেই। যদি কোনও অভিযুক্তর মানসিক অসুস্থতা থাকে, সেক্ষেত্রে একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়। তাঁরা রিপোর্ট দেন। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী প্রমাণ করা যায়, অভিযুক্তর মেনসরিয়া আছে (অপরাধমনস্ক হয়ে অপরাধ করতে সক্ষম) নাকি নেই। যদি থাকে, সেক্ষেত্রে আইনের ধারা অনুযায়ী তার বিচার হয়। যদি তিনি সক্ষম না হন, প্রকৃতই মানসিকভাবে অসুস্থ হন, সেক্ষেত্রে ট্রায়াল পর্যন্ত হয় না। বিএনএস-এর ৩৬৭ ও ৩৬৮ ধারা এক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়। অনেক সময় আদালতে অভিযুক্তর মানসিক অসুস্থতা বলে ‘ভুয়ো’ দাবিও করা হয়। সেক্ষেত্রে মেডিক্যাল বোর্ড নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখে সেই দাবির যথার্থতা। যদি দাবি ভুল হয়, তাহলে ওই ব্যক্তি অপরাধ অনুযায়ী শাস্তি পায়।
সাইকোপ্যাথদের চিকিৎসা কী?
তেমন কোনও চিকিৎসা নেই। অপরাধপ্রবণতা থেকে এরা সরে আসতে পারে না। তবে কিছুদিনের জন্য ‘ভালো’ সেজে থাকতে পারে। সিনেমার মতো একেবারে শুধরে যায় না।