প্রায় সম্পূর্ণ কাজে আকস্মিক বিঘ্ন আসতে পারে। কর্মে অধিক পরিশ্রমে স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা। ... বিশদ
আমাদের পৃথিবী থেকে রাতের আকাশে আমরা চাঁদ দেখতে পাই। আর এই চাঁদ হল পৃথিবীর উপগ্রহ। এই উপগ্রহটি পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে। সেই সুপ্রাচীন কাল থেকেই চাঁদকে নিয়ে বিজ্ঞানীদের আগ্রহের শেষ নেই। পৃথিবীর কিন্তু একটাই উপগ্রহ এই চাঁদ। আমাদের সৌরজগতে প্রায় সব গ্রহেরই এক বা একাধিক উপগ্রহ রয়েছে। এমনকী অতি দূরের বামন গ্রহ প্লুটোরও এমন উপগ্রহ রয়েছে। শুধু ব্যতিক্রমী দু’টি গ্রহ— বুধ ও শুক্র। সৌরজগতের আটটি গ্রহের মধ্যে আমরা যদি বুধ ও শুক্রে থাকতাম, তাহলে চাঁদ দেখতে পেতাম না। আবার মঙ্গলে থাকলে দেখা যেত জোড়া চাঁদ। কিন্তু কেন শুধু বুধ ও শুক্রেরই উপগ্রহ নেই? আবার অনেক গ্রহের একাধিক রয়েছে? পৃথিবীরই বা শুধু একটা উপগ্রহ কেন?
এর কারণ লুকিয়ে রয়েছে মহাকর্ষ বলের মধ্যে। ছোট্ট বন্ধুরা, তোমরা তো জানোই মহাকর্ষ বল কাকে বলে। তাও আর একবার বলে নিই। মহাবিশ্বে প্রত্যেক বস্তুই একে অন্যকে আকর্ষণ করে। এই আকর্ষণকেই বলে মহাকর্ষ বল। এই বলের জন্যই প্রত্যেকটি বস্তু নিজের অবস্থান বা কক্ষপথের বাইরে যেতে পারে না। আর যে বস্তুর ওজন যত বেশি, তার আকর্ষণ বলও তত বেশি। সৌরজগতে সবচেয়ে শক্তিশালী কে? সূর্য। শুধু পৃথিবী কেন, অন্যান্য গ্রহের চেয়ে বহু বহু গুণ বড় সূর্য। ফলে সূর্যের মহাকর্ষ বল অনেক বেশি। তাই সূর্য সৌরজগতের সমস্ত গ্রহ, গ্রহাণু, মহাকাশীয় বস্তুকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরতে বাধ্য করে। তবে এত বেশি শক্তি হলেও সূর্য কিন্তু সবাইকে একেবারে নিজের কাছে টেনে নিতে পারে না। কেন? এক্ষেত্রে দূরত্ব এবং মহাকর্ষ বল অর্থাৎ পারস্পরিক আকর্ষণ বলের জন্যই গ্রহ ও সৌরজগতের অন্যান্য বস্তুকে গিলে নিতে পারছে না সূর্য। আবার সেগুলি সূর্যকে ছেড়ে যেতেও পারছে না। দূরত্ব যত বাড়বে আকর্ষণ বল তত কমবে, আর দূরত্ব কমলে আকর্ষণ বল বাড়বে। তবে মনে রেখ, এটা একেবারেই প্রাথমিক ব্যাখ্যা। বড় হয়ে আরও বিস্তারিতভাবে বুঝতে পারবে।
এই মহাকর্ষ বলই বুধ ও শুক্রের উপগ্রহ না থাকার কারণ বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। বুধ সৌরজগতের সবচেয়ে ছোট গ্রহ। তা সূর্যের সবচেয়ে কাছে ঘুরছে। আকার ছোট হওয়ায় বুধের মাধ্যাকর্ষণ বলও কম। ফলে এই গ্রহের নিজের দিকে কোনও কিছুকে টেনে রাখা কঠিন। তাহলেই বুঝতে পারছ, বুধের যদি কোনও উপগ্রহ থাকত, তাহলে তার সূর্যের আকর্ষণ উপেক্ষা করে টিকে থাকা কঠিন হতো। বুধের কোনও উপগ্রহ থাকলে তাকে ঘুরতে ঘুরতে একসময় সূর্যের পাশ দিয়ে যেতে হতো। তখন কিন্তু সূর্যের আকর্ষণ এড়িয়ে বুধের ওই উপগ্রহের ফিরে আসা কঠিন হতো। সোজা ঢুকে যেত সূর্যের পেটে। একই কারণ শুক্র গ্রহের ক্ষেত্রেও। সৌরমণ্ডলের দ্বিতীয় এই গ্রহটি বুধের চেয়ে সামান্য বড়। কিন্তু সূর্যের কাছে থাকার কারণেই এর কোনও উপগ্রহ নেই। বিজ্ঞানীদের একাংশের ধারণা, সৌরজগৎ গড়ে ওঠার পর ভাঙাগড়া তো কম কিছু হয়নি। একটা সময় হয়তো শুক্রেরও উপগ্রহ ছিল। কিন্তু তা কবেই সূর্যের গ্রাসে চলে গিয়েছে। আর পৃথিবী সৌরমণ্ডলের তৃতীয় গ্রহ। পৃথিবী সূর্য থেকে বুধ ও শুক্রের তুলনায় অনেকটাই দূরে। ফলে পৃথিবীর চাঁদ টিকে গিয়েছে। তারপরের গ্রহগুলির একাধিক উপগ্রহ। পৃথিবীর পরের গ্রহ মঙ্গলের দু’টি উপগ্রহ— ফোবস ও ডিমোস। পরের গ্রহ বৃহস্পতি। সৌরমণ্ডলের সবচেয়ে বড় গ্রহ। এর উপগ্রহ সংখ্যা ৯৫। পরের গ্রহ শনি আকারে বৃহস্পতির তুলনায় ছোট হলেও এখনও পর্যন্ত এর ১৪৬টি উপগ্রহের হদিশ মিলেছে। ইউরেনাসের ২৮ ও নেপচুনের ১৬টি উপগ্রহ এখনও পর্যন্ত চিহ্নিত করা গিয়েছে।