সম্পত্তিজনিত মামলা-মোকদ্দমায় জটিলতা বৃদ্ধি। শরীর-স্বাস্থ্য দুর্বল হতে পারে। বিদ্যাশিক্ষায় বাধাবিঘ্ন। হঠকারী সিদ্ধান্তের জন্য আফশোস বাড়তে ... বিশদ
গরমের ছুটির সেই মজা আর নেই। কারণ টানা দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ। ক্লাস চলছে অনলাইনে। তবুও গরমের ছুটি বললেই মনটা কেমন নেচে ওঠে। তোমাদের বন্ধুরা কে কীভাবে কাটাচ্ছে এবারের গরমের ছুটি তারই পরিকল্পনা ফাঁস করা হল।
আগামী বছর গ্রীষ্মের ছুটিতে পাহাড়ে যাব
গরমের ছুটি একটা দারুণ মজার সময়। ফার্স্ট টার্ম পরীক্ষার পরে আমাদের স্কুলে ছুটি পড়ে। সে ছুটি বাড়িতে থাকার আর আনন্দে কাটানোর। কিংবা পাহাড়ে বেড়াতে যাওয়ার। যেমন আমরা আগে যেতাম। এবার সেইসব বেড়ানোর কথাগুলো মনে পড়ছে। পাহাড়ের কোনও ঝর্ণার ছবি চোখে ভাসছে অথবা জঙ্গলের পথে হাঁটতে হাঁটতে কোনও পাখির ডাক যেন কানে আসছে। এ বছর, গতবারের মতোই বাড়িতে বসে আছি। গরমের ছুটি বলে তাই আলাদা করে কিছু বুঝতে পারছি না। সবকিছু স্বাভাবিক চললে, এই ছুটিতে পড়ার বই বন্ধ করা থাকে, পড়াশোনার থেকে কিছুদিনের ‘ছুটি’ মেলে। এখন তার উপায় নেই। অনলাইন ক্লাস চলছে। পরীক্ষাও চলছে। পড়াশোনাও তাই বন্ধ নেই। আমি অবশ্য এ নিয়ে মন খারাপ করি না। ছবি আঁকি। জলরঙের ছবি আমার খুব পছন্দ। আমি গান শুনি, গল্পের বই পড়ি। বাকি সময় গাছের দেখাশোনা করতেও পছন্দ করি। কোন গাছে ফুলের কুঁড়ি এল, কোন গাছে পিঁপড়ে বাসা বাঁধছে বা কোন গাছ পুষ্টির অভাবে নুয়ে পড়ছে এগুলো আমার নজরে থাকে। বড়দের সেটা সময়মতো জানানো আমার কাজ। আমাদের বাড়ির নতুন আনা গাছগুলো অনেকটা বড় হয়েছে। ফুলগাছে কুঁড়ি এসেছে। আমি জানি কীভাবে টবে গাছ বসাতে হয়, টব পাল্টাতে হয়। এবার বাড়িতে বসে স্কুলের কথা খুব মনে পড়ছে। অনেকদিন, মনে আছে গ্রীষ্মে স্কুল ছুটির আগে আকাশ কালো মেঘে ঢেকে যেত। ঠান্ডা হাওয়া বয়ে যেত। আমরা অপেক্ষা করতাম কখন ছুটি হবে। স্কুলের শেষ পিরিয়ডগুলোয় আর পড়ায় মন থাকত না। ঝড় উঠত বা বৃষ্টি শুরু হতো। অনেকদিন ভিজে ভিজে বাড়ি ফিরেছি। জমা জল ভেঙে হেঁটেছি। খুব মজা হতো। এখন জানালা দিয়ে শুধু আকাশ দেখি। মেঘ জমে। বৃষ্টি হয়। বিদ্যুতের ঝলক দেখে ভয় হয়। আবার আনন্দও হয়। মনে হয়, আবার সব ঠিক হয়ে যাবে। স্কুল খুলবে। গরমের ছুটিতে বই বন্ধ করে রেখে আমরা সবাই আবার পাহাড়ে বেড়াতে যাব।
অনন্যব্রত সামন্ত, ষষ্ঠ শ্রেণি
বরানগর রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম উচ্চ বিদ্যালয় (উ.মা.)
অনলাইনে রবীন্দ্রজয়ন্তী উদযাপন
এবারে গ্রীষ্মের ছুটি অন্য বারের চাইতে আলাদা। করোনা আবহে দীর্ঘতর ছুটির কবলে পড়েছি আমরা। প্রবল গ্রীষ্ম ও সংক্রমণের কারণে ছুটি কিছুটা আগেই ঘোষিত হয়েছে। আমি অবশ্য এই ছুটি কাজে লাগাচ্ছি নানাভাবে। বাড়ির পাশের একখণ্ড জমিতে গড়ে তুলেছি আমার শখের বাগান। পড়াশোনার পাশাপাশি এ কাজ আমার ভালোই লাগে। দুপুরবেলাটা বাগানের কাজেই সময় কাটছে। ফুলগাছের কুঁড়ি থেকে ফুল ফুটেছে দেখতে খুব ভালো লাগে। এছাড়া গল্পের বই পড়ছি। আমি আবৃত্তি করি। সেটার চর্চা করছি। স্কুলের পরে বাড়ির বাইরে কোথাও পড়তে যাওয়া এখন আর নেই। সবই অনলাইন। গ্রীষ্মের ছুটিতেও অনলাইনে স্কুলের ক্লাস হচ্ছে। এবারে ছুটিতে আমার দেশের বাড়ি যাওয়া হয়নি। এর জন্য আমার মন খারাপ। ওখানে গেলে বন্ধুরা মিলে অনেক আনন্দ করি। তবে এবার আমরা রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করতে পেরেছি। এমনিতে আমাদের স্কুলে প্রতিবছর ২৫ বৈশাখ খুব উৎসাহ ও আনন্দের সঙ্গে পালন করা হয়। এবার সেটা করা গিয়েছে। অবশ্য অনলাইনে। তা হোক। সেখানে অনেকে গল্প পাঠ করেছে। অনেকে আবৃত্তি করছে। বক্তব্য রেখেছে অনেকে। আমি গান গেয়েছি। রবীন্দ্রনাথের গান। রবীন্দ্রজয়ন্তীতে কবির নিজের ছাড়া অন্য কারও গান আমরা যেন ভাবতেই পারি না। তাঁর গানে তাঁকে শ্রদ্ধা জানানোই যেন রীতি। এবারের গ্রীষ্মের ছুটি কিছুটা অন্যরকম ঠিকই। তবে এই নিয়ম পালনের মধ্যে থেকেই আগামীদিন রোগমুক্ত ও সুন্দর হয়ে উঠবে বলে আমার বিশ্বাস।
শুভ্রনীল মজুমদার,
নবম শ্রেণি
বারাসত প্যারীচরণ সরকার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
একঘেয়েমি কাটাতে গল্পের বই পড়ছি
এবছর করোনা সংক্রমণ কিছুটা হ্রাস পেলে আবার আগের নিয়মে যথারীতি বিদ্যালয় চালু হয়। সমস্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনেই আমরা বিদ্যালয়ে নিয়মিত পঠন-পাঠন শুরু করলাম। কিন্তু পুনরায় সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে শুরু করল। মাত্র দু’ মাস স্কুল হওয়ার পর এপ্রিল মাসে সরকার গ্রীষ্মের ছুটি ঘোষণা করল। হিসাব মতো মে মাসে আমাদের গ্রীষ্মের ছুটি আরম্ভ হয়। একটানা দু’ মাস গ্রীষ্মের ছুটি পাওয়ায় আমাদের প্রথম পর্যায়ক্রমিক পরীক্ষার সিলেবাস অসমাপ্ত থেকে যায়। তাই এই বাড়তি ছুটির দিনগুলিতে শিক্ষক-শিক্ষিকারা আবার অনলাইন ক্লাস শুরু করে আমাদের সিলেবাস শেষ করেন। অনলাইনে আমরা সবাই পরীক্ষা দিই। পড়াশোনা করা ছাড়াও গৃহবন্দি জীবন থেকে দূরে থাকার জন্য আমি বাড়িতে ঘর সাজানোর শৌখিন জিনিস তৈরি করি। সঙ্গীতচর্চা করি, ছবি আঁকি। পাশাপাশি বাগান পরিচর্যা করি। গল্পের বই পড়ি। বিভিন্ন গাছ রোপণ করে পরিবেশকে কিছুটা হলেও দূষণমুক্ত করার চেষ্টা করছি। বন্ধুরা এসো আমরা সবাই হাতে হাত রেখে শপথ করি আগামী দিনে সব রকম স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রত্যেক মানুষকে স্বাস্থ্যসচেতন করে তুলব। প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসকে উপেক্ষা করে অসুস্থ পৃথিবীকে সুস্থ করে তুলব।
দেবমিতা রায় নন্দী, নবম শ্রেণি
রহড়া ভবনাথ ইনস্টিটিউশন
ডায়েরির পাতায় গল্প কবিতা লিখছি
একঘেয়েমি আটপৌরে জীবন থেকে ক্লান্ত মন একটু অবকাশ খোঁজে। কিন্তু সেই অবকাশ যদি করোনার তাণ্ডবে দীর্ঘমেয়াদি, অনির্দিষ্টকালের হয় তখন ছুটি হয়ে ওঠে অসহনীয়। দীর্ঘ এক বছর শ্বাসরুদ্ধ পরিস্থিতিতে থাকার পর মানুষ মাস্কহীন বাতাস গ্রহণ করতে না করতেই করোনার দ্বিতীয় থাবায় পুনরায় লকডাউন।
আমরা ছাত্রছাত্রীরা এখন স্কুলের বেঞ্চ, ব্ল্যাকবোর্ড ছেড়ে কম্পিউটার, স্মার্টফোনের স্ক্রিনে বান্ধবহীন জীবন কাটাচ্ছি।
গরমের ছুটির অবসর যাপনে মুক্তির বাতাস আনতে আমি আঁকড়ে ধরলাম শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘শ্রীকান্ত’, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আরণ্যক’। আবার কখনও পাড়ি দিচ্ছি ‘চাঁদের পাহাড়ে’। কখনও দেখছি রামায়ণ, মহাভারত। ছবিও আঁকছি কখনও-সখনও। ডায়েরির পাতা ভর্তি করছি আবোল-তাবোল গল্প কবিতায়। বাবা-মায়ের কাছে পুরনো দিনের অনেক গল্প শুনেছি। ফিট থাকতে নিয়মিত শরীরচর্চা করছি। এভাবেই কাটিয়ে চলেছি আমার অবসর দিনযাপন।
আশা রাখছি, খুব শীঘ্রই অবসর জীবন কাটিয়ে ফিরে আসব আমরা নিজেদের পরিচিত অঙ্গনে।
সায়ক বসু মল্লিক,
মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী
গভর্নমেন্ট স্পনসর্ড মাল্টিপারপাস স্কুল ফর (বয়েজ) টাকি হাউস
বেশি করে নাচ অনুশীলন করছি
স্কুলে গরমের ছুটি চলছে, তাই অনলাইন ক্লাসও বন্ধ। যেহেতু লকডাউন চলছে তাই চিড়িয়াখানা, জাদুঘর, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল সবই বন্ধ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এসব জায়গায় যেতে পারতাম। তবে বাড়িতে সময় কাটানোর জন্যও নানারকম কাজ আছে। যেমন আমি গল্পের বই পড়তে খুব ভালোবাসি। ছুটিতে পড়ার ফাঁকে ফাঁকে আমি প্রচুর গল্পের বই পড়ব। আমি নাচ শিখি। তাই কিছুটা সময় নাচও প্র্যাকটিস করছি। আমি আঁকতে খুব ভালোবাসি। রোজ ছবিও আঁকি। আমি আশা করছি, এই করোনা মহামারী থেকে আমরা খুব তাড়াতাড়িই মুক্তি পাব। বন্ধুরা সবাই ভালো থাকো।
সুমনা পাল, পঞ্চম শ্রেণি
বাগবাজার বহুমুখী বালিকা বিদ্যালয়
অনেক ভ্রমণ-কাহিনি পড়ছি
লাগামছাড়া কোভিড সংক্রমণ, আর তার মধ্যেই ক্রমশ চড়ছে তাপমাত্রার পারদ। তাই আপাতত স্কুলের অনলাইন ক্লাস থেকে আমাদের ছুটি। কিন্তু কলকাতার বাইরে গিয়ে ছুটি কাটানোর পরিস্থিতি এখন নেই। তার মধ্যে চারদিকে মৃত্যু মিছিল, অক্সিজেনের সঙ্কট এইসব দেখে মনটা খুবই ভারাক্রান্ত। তাই এবছরের গরমের ছুটিটা খুব একটা উপভোগ্য নয়। ভেবেছি নবনীতা দেবসেনের বিভিন্ন ভ্রমণকাহিনি পড়ে ভ্রমণের আনন্দটা উপভোগ করব। রোমাঞ্চকর গল্প যেমন, প্রফেসর শঙ্কুর ডাইরি, ফেলুদার গল্প পড়ে সময় কাটাব। বাড়ির বাগানে বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগিয়ে মায়ের সঙ্গে তাদের যত্ন করব। তাছাড়া ভালো সিনেমা ও বিভিন্ন গান শুনব। আঁকব মনের মতো ছবি। শরীর সতেজ রাখার জন্য সকালে ছাদে গিয়ে ব্যায়াম বা যোগাসন করব। বর্তমানের কোভিড পরিস্থিতির জন্য প্রতিবেশীদের কিছু প্রয়োজন হলে মা-বাবার পরামর্শ নিয়ে তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেব। আর স্কুলের দেওয়া বাড়ির কাজগুলো করে পড়াশোনা এগিয়ে রাখব। যেহেতু স্কুল, খেলার মাঠ সবকিছু বন্ধ তাই ফোনের মাধ্যমে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে যোগাযোগ রাখব।
দেবপ্রিয় দত্ত, নবম শ্রেণি
নব নালন্দা হাইস্কুল
ব্যালকনিতে একটা ছোট্ট বাগান করছি
আমাদের স্কুল ১৪ জুন পর্যন্ত গরমের ছুটি ঘোষণা করেছে। এবারের গরমের ছুটি পরিবারের সঙ্গে বাড়িতেই কাটাব। এই ছুটিতে আমার একটা ভালো পরিকল্পনা আছে। আমি এই সময়ে আমাদের ব্যালকনিতে একটা ছোট্ট বাগান করছি। আমার এই উদ্যোগ মায়ের খুব পছন্দ হয়েছে। আমি আরও ভেবেছি কিছু ফুলের গাছ এবং সব্জির গাছ বাগানে লাগাব। এছাড়া নাচ, গান, আঁকা ইত্যাদি করে অবসর সময়টাকে কাটাব। অবশ্য শরীরচর্চারও প্রয়োজন আছে। সেইজন্য বিকেলবেলাতে ছাদে গিয়ে শরীরচর্চা করব। বন্ধুরা সবাই তোমরা বাড়িতে থাকো, সুস্থ থাকো। বাড়িতে থেকে সবাই যেন গরমের ছুটি উপভোগ করতে পারে এটাই আমার কাম্য।
পমি চৌধুরী, ষষ্ঠ শ্রেণি
ক্যালকাটা এয়ারপোর্ট ইংলিশ হাইস্কুল
সাহায্য করছি বন্ধুদের
ছোট থেকেই গরমের ছুটি সঙ্গে নিয়ে আসে অনেক মজা, অনেক আনন্দ, পাহাড়ে ঘুরতে যাওয়া, বন্ধুদের সঙ্গে মিলে ক্রিকেট, ফুটবল প্রভৃতি খেলা। কিন্তু এ বারের ছুটিতে বাইরে বেরতে পারব না বলে অনেক গল্পের বই পড়ব। ইচ্ছে আছে ভালো ভালো সিনেমা দেখার।
এ বারের ছুটি অন্যরকম, মনখারাপ করা। এরই মধ্যে একটা খবর আরও মন খারাপ করে দেয়। কিছুদিন আগে মা-বাবার সঙ্গে আমি একটা হোমে গিয়েছিলাম। সেখানে আমারই সমবয়সি অনেক ছেলেমেয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়েছিল। করোনার সময় পর্যাপ্ত অনুদান না পাওয়ায় তারা খুবই কষ্টে আছে। আমরা বন্ধুরা মিলে ঠিক করেছি ওদের পাশে থাকব এই অসময়ে। পাশাপাশি নিজের আঁকা ছবি, গ্রিটিংস কার্ড, পোস্টার ইত্যাদি নিয়ে অনলাইনে একটি প্রদর্শনী করে সেগুলি বিক্রি করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
অরণ্য ভাওয়াল, পঞ্চম শ্রেণি
পাঠভবন স্কুল, ঢাকুরিয়া