ধর্মকর্মে সক্রিয় অংশগ্রহণে মানসিক তৃপ্তি ও সামাজিক সুনাম। পেশাদার শিল্পীদের শুভ সময়। ... বিশদ
তখন সেই চারতলার শার্সি বেয়ে নেমে আসা জল ভেদ করে তাকায় দু’টি চোখ। সুন্দর, গভীর, অস্পষ্ট বলিরেখা চারপাশে। ফলে বিষণ্ণ। সে চোখে আকাশ ছেয়ে থাকা কালো মেঘের ছায়া। বৃষ্টির জল লাগেনি, তবুও ভিজে। মেঘ করলে মন খারাপ হয় মিসেস চ্যাটার্জির। চোখ অকারণেই ভেজে, নাকি কারণে, কে জানে। তবে প্রবল বৃষ্টির প্রাবল্যেও ফ্ল্যাটের চকচকে মার্বেল জলে ভেজে না। বৃষ্টি কোনওভাবেই হামলা করতে পারে না সাজানো ঘরের অন্দরমহলে। অনাবিল সুখ ঘিরে রাখে মিসেস চ্যাটার্জির ফ্ল্যাট। তবুও কেন যে মেঘের কালোয় চোখ ভেজে! কেন যে বর্ষার দুপুরগুলোয় নিজের একলা থাকার কথা বারবার মনে পড়ে! ‘জাহাজটা পেড়ে দাও না... জাহাজটা পেড়ে দাও না...’ ভারি বায়না করছে বিল্টু। তার বায়নায় তাল কাটে চিন্তার। ফ্রিজের উপর রাখা জাহাজটা পেড়ে ছেলেকে দেন মিসেস চ্যাটার্জি।
অফিস ট্যুরে দুবাই গিয়ে জাহাজটা কিনে এনেছিলেন বিল্টুর বাবা। সে এক মস্ত জাহাজ। তার ডেকে খেলার মাঠ, সুইমিং পুল, রেস্তরাঁ। চাবি ঘোরালে ডেকে থাকা সেলাররা নড়াচড়া করে। মাঠে বল গড়ায়। মিউজিক বেজে ওঠে। বিল্টুর মনে হয়, এমন বৃষ্টিতে বে অব বেঙ্গলটা ওর বাড়ির কাছে চলে আসবে। তখন একতলায় গিয়ে জাহাজটা ভাসাবে ও। আজ থইথই রাস্তা দেখে ওর দৃঢ় ধারণা হয়েছে, সমুদ্র চলে এসেছে। ফলে মায়ের কাছে বায়না, জাহাজ নিয়ে নামতে দিতে হবে রাস্তায়। মিসেস চ্যাটার্জি এই অবেলায় ছেলেকে ভিজতে দিতে রাজি নন। ফলে ফ্ল্যাটের দরজা খুলবে না। জানলার সামনে গিয়ে ঘ্যানঘ্যান শুরু হল বিল্টুর।
নীচে সেই জল থইথই রাস্তা থেকে ছেলেকে হিড়হিড় করে টেনে ঘরে ঢোকাচ্ছে মালতি। ভাত নেমেছে সবে। ঘর ভেসে যাচ্ছে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই খাওয়াতে হবে ছেলেকে। নিজেও খাবে, ভাত-ছোট মাছের ঝাল। বৃষ্টি একটু ধরেছে। নিজের পোড়া কপালের কথা ভেবে চোখে জল আসে মালতির। চারতলার জানলায় তখনও বিল্টুর অভিমানী মুখ। মালতির ছেলে সন্টু তাক থেকে অঙ্কের খাতাটা নিয়ে পাতা ছিঁড়ল একটা। অপটু হাতে ছোট নৌকা হল একটা। জলে দুলতে দুলতে কে জানে হয়তো বে অব বেঙ্গল চলল সেই নৌকা। তা দেখে, নিজের বড় জাহাজটার না ভাসার কষ্টে বুকটা যেন ফেটে যাচ্ছে বিল্টুর। পাশের ঘরে মিসেস চ্যাটার্জির চোখ কে জানে কেন আরও ছলছল। মেঘের পরে মেঘ জমে। আঁধার করে আসে। বৃষ্টি আসে আবার। নৌকা ভিজে চুপচুপে। জলের ভার সইতে পারল না আদরের নৌকো। কাত হল। টপ করে ডুবল রাস্তার জলে। এবার চোখে জল সন্টুরও।
ঘরঘোর বরষা কেন যে কেবল ডোবায়-কাঁদায়-ভাসায়। কেন যে মন খারাপের জলছবি এঁকে চলে গোটা দুপুর। বরষণমন্দ্রিত অন্ধকার কেন যে ঘিরে ধরে ফ্ল্যাট বাড়ি, টালির ঘর... ‘জানি নে , জানি নে কিছুতে কেন যে মন লাগে না...!’