কর্মে সাফল্য ও সুনাম বৃদ্ধি। ব্যবসায় অগ্রগতি ও প্রসার। অর্থাগম যোগ শুভ। স্বাস্থ্য বিশেষ ভালো ... বিশদ
তাতা ফুলপ্যান্ট পরে না। আজ পরেছে। খুব ঠান্ডা যে! গলায় মাফলার। মাথায় মাঙ্কিটুপি। গায়ে সোয়েটার। এই সোয়েটারটা বেশ পুরনো। ব্যাগি টাইপের। গায়ে হলুদ-কালো বরফি বরফি কাজ। তাও এটা তাতার খুব পছন্দের। উবু হয়ে বসেছে এসে ঝোপটার পাশে। পা ছড়িয়েই বসত... কিন্তু ঘাসভর্তি শিশির যে! অনেকক্ষণ হয়ে গেল...। দুপুরবেলা ঠিক এই সময়টাতেই বেরিয়ে আসার কথা ছিল কিম্ভূতকিমাকার জন্তুটার। আর যে ধৈর্য থাকে না! তাহলে কি উঠে যাবে? বাড়ি যেতে বিকেল গড়ালেই যে মেজমামা ধরবে। কানটা মুলে দেবে। বড্ড ব্যথা লাগে। খুব রাগ হয়। মনে হয়, দেব ডেকে একদিন ষষ্ঠীচরণকে। মেজমামাকে নিয়ে লোফালুফি খেলবে ষষ্ঠীচরণ। দিব্যি মজা হবে। দীর্ঘশ্বাস ফেলল তাতা। গুরুজন যে! তাই তো পারে না! ঝোপের মধ্যে একটা শব্দ হচ্ছে। বিদঘুটে শব্দ। উঠে দাঁড়াল তাতা... এই তো এসেছে। এবার আর তাতা ঘাবড়ে যাবে না। রেডি হয়ে এসেছে ও নিজেও। হিজিবিজ্বিজ্ যদি এবার কিংকর্তব্যবিমূঢ় বলে, তাহলে ও বলবে পঞ্চকষায়। আর যদি প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব বলে, তাহলে তাতা বলবে ক্ষারমৃত্তিকা। শব্দটা এল। বিকট শব্দ। এটাই নাকি হাসি! হিজিবিজ্বিজ্ হাসছে। মানুষ না বাঁদর, প্যাঁচা না ভূত... বোঝাই দায়! হাত পা ছুড়ে হাসছে... আর বলছে, ‘এই গেল গেল—নাড়ি-ভুঁড়ি সব ফেটে গেল!’ তাতাকে দেখেই একটু থমকে গেল হিজিবিজ্বিজ্।
—তুমি এসেছ দেখছি!
—আমি আসব তুমি জানতে নাকি?
—বিলক্ষণ জানতাম। ১০০ বছর ধরে ভাবছি, কবে আসবে... আবার কবে আসবে...। ভাবতে ভাবতেই যা হাসি পেল...!
বলেই সাংঘাতিক রকমের হাসতে শুরু করল হিজিবিজ্বিজ্। বিরক্ত হল তাতা।
—আমি আসব বলে হাসির কী আছে? আমি কি জোকার?
হেসে মাটিতে গড়িয়ে পড়ল হিজিবিজ্বিজ্। তারপর একটু দম নিয়ে বলল, ‘ভাবলাম, তুমি আসতে গিয়ে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে পড়লে, আর... আর... ভোটকর্মীরা বলল, খোকা তোমার যা বয়স, তাতে সাড়ে চারটের বেশি ভোট দিতে পারবে না। সেটা শুনে তুমি রেগে গিয়ে ঘামতে শুরু করলে, আর ভোটকেন্দ্র তোমার ঘামে ভেসে গেল... হ্যা, হ্যা, হ্যা..।’ বলেই মাটিতে শুয়ে হাত-পা ছুড়তে লাগল হিজিবিজ্বিজ্।
—আমি খামোখা ভোট দিতে যাব কেন? আমার বয়স আট বছর তিন মাস। এই বয়সে ভোট দেওয়া যায়?
—উঁহু, হল না... হল না...।
একেও চেনে তাতা। কাকেশ্বর কুচকুচে। ফোকরওয়ালা গাছটার মাঝখান থেকে ঠিক ৪৫ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে যে ডালটা বেরিয়ে রয়েছে, তাতে বসে দুলে দুলে মাথা নাড়ছে।
—কী হল না?
—তুমি এখনও অঙ্কটা বুঝলে না।
—কোন অঙ্কটা? আর এখনও বুঝলাম না মানে?
—তোমার বয়স। ওটা আট বছর তিন মাস হতেই পারে না।
—কেন পারে না? আমাকে দেখে কী মনে হয়?
—সাঁইত্রিশ।
গলার অন্য শব্দ শুনেই নীচে তাকাল তাতা। এই যাঃ, দেড় হাত লম্বা বুড়োটাও এসে গিয়েছে। ঠিক ওই পা পর্যন্ত সবুজ দাড়ি। হাতে একটা হুঁকো। তাতে আজও কলকে নেই। মাথা ভর্তি টাকে একটাও চুল গজায়নি। কিন্তু তাতা বুঝতে পারল না, এটা উধো না বুধো।
—কার বয়স সাঁইত্রিশ।
—কেন? তোমার...!
—মোটেই না। আমাকে দেখে কি অত বড় মনে হয় নাকি?
ঘাড় কাত করে এতক্ষণ দাঁড়কাকটা তাকিয়ে ছিল তাতার দিকে। এবার বলল, ‘মনে হওয়া দিয়ে কী আসে যায়? কিন্তু তোমার বয়স আট বছর তিন মাস হতেই পারে না।’
ভীষণ রেগে গেল তাতা... ‘তাহলে কত?’
—১০৮ টাকা তিন আনা সাড়ে আট পাই।
—মানে?
বুড়ো নাক গলাল। ‘আ হা, ও বলতে চেয়েছে ১০৮ বছর ৩ মাস সাড়ে ৮ ঘণ্টা।’
—এঃ। তা আবার হয় নাকি? আমার পাশের বাড়িতে কাতুকুতু দাদু থাকে। ওর বয়স ১০৮। আগে কেউ জানত না, কোন সড়কের পারে ওর বাড়ি। এই কয়েক মাস আগে আমাদের পাড়ায় এসেছে। হাতে একটা পালক নিয়ে বসে থাকে। কাছে গেলেই ওর ভয়ানক গল্প শুনতে হয়। না হাসলেই পালকটা দিয়ে কাতুকুতু দেয়। কিন্তু জানো! ও কত্ত বুড়ো! চামড়া ঝুলে গিয়েছে। এত্ত বড় দাড়ি। তোমার থেকেও বেশি।
উধো না বুধোর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলল তাতা। খ্যাঁক করে উঠল বুড়ো।
—আমি বুড়ো? আমার বয়সের কাঁটা ঘুরিয়ে দিয়েছি কবে! এখন আমি ১২ বছর সাড়ে ন’মাস। আর তোমার সাঁইত্রিশ, সাঁইত্রিশ, সাঁইত্রিশ।
কাকেশ্বর ছোট্ট করে একটা হাই তুলল... ‘ভদ্দরলোকের এক কথা।’
—কে ভদ্রলোক? ও? মোটেই না। সারাক্ষণ গজগজ করে, টাকের উপর শ্লেট পড়লে ও মা, ও পিসি, ও শিবুদা বলে কাঁদে... আর বুধো বুড়োর সঙ্গে মারামারি করে...।
মাৎ মাৎ করে তেড়ে এল বুড়ো... ‘কার টাক? আমার? ফের টাক বললে এক গাঁট্টা মারব। না... হল না... হুঁকো দিয়ে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেব। আর হ্যাঁ, আমিই তো বুধো। উধো তো এখনও আসেনি। ও তো গেছে স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড করাতে...’।
—‘কে বলেছে আমি আসিনি!! কোন ইস্টুপিড বলেছে?? এই তো আমি।’
—তবে রে হতচ্ছাড়া উধো! তুই আমাকে ইস্টুপিড বললি?
ঝটাপট, খটাপট, দমাদম, ধমাধম শব্দ... আর সেই সঙ্গে হাতাহাতি। বেশ মজা লাগছিল তাতার। হিজিবিজ্বিজ হাসতে হাসতে আবার মাটিতে লুটিয়ে। বলে কি না, ‘লাগ লাগ লাগ... নারদ-নারদ’। অমনি ক্যাঁ করে উঠল কাকেশ্বর— ‘অ্যাই, এটা তো আমার ডায়লগ!’
—হ্যাঁ, হ্যাঁ, হ্যাঁ... তোমার ডায়লগ তো জলের মতো। ঢাল দেখেই গড়াতে গড়াতে আমার কাছে! হ্যাঁ হ্যাঁ।
উধো-বুধো ততক্ষণে চিৎপাত হয়ে শুয়ে হাঁপাচ্ছে। এক বুড়োর সবজে দাড়ি আদ্দেক ছিঁড়েছে। আর এক বুড়োর টাকে মস্ত আলু। তাতা ভাবল, এই বেশ। এবার দুই বুড়োকে আলাদা করে চেনা যাবে। ততক্ষণে কান্না শুরু হয়ে গিয়েছে... ‘ওরে বুধো রে, আমার দাড়ি কী হল রেএএএএএ...!’ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বুধো বলে, ‘আমার মাথায় কী হল রেএএএএ’। কাকেশ্বর কুচকুচে এতক্ষণ পেন্সিল চিবুতে চিবুতে সব দেখছিল। আর না পেরে বলে ফেলল, ‘মাথা আবার কী? টাক বলো! দুটোই তো টেকো।’
—মানব না।
—আমিও না।
—আমাদের টেকো বলা?
—হ্যাঁ, আমাদের টেকো বলা?
—তাহলে কী করবি?
—নালিশ করব।
—ঠিক বলেছিস... নালিশই করব। উঁ... উঁ... কিন্তু কার কাছে?
—গেছোদাদা।
ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ শব্দ এল। তাতা অবাক হয়ে দেখল, কোথা থেকে টকটকে লাল রঙের বিড়ালটা এসে বসে আছে। আর বিচ্ছিরি করে হাসছে।
—এই যে চশমা...।
তাতার ডাক শুনেই ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ বন্ধ হয়ে গেল। ‘কে চশমা? আমি চন্দ্রবিন্দু’।
—সে যাই হোক। হাসছিলে কেন?
আবার ফ্যাঁচ করে উঠল চন্দ্রবিন্দু... ‘গেছোদাদাকে নালিশ করবে যে, পাবে কোথায়!’
উধো-বুধো একটু দমে গেল। তাহলে এখন কী করা যায়?
—হুম, খুঁজতে হবে।
—ঠিক বলেছিস, খুঁজতে হবে। কিন্তু কোথায় খুঁজব?
—গেছোবউদিকে জিজ্ঞেস করব।
—ব্রেশ ব্রেশ... কিন্তু গেছোবউদিকে পাব কোথায়?
—নিশ্চয়ই কোথাও না কোথাও রান্না করছে!
—চল্ তবে, খুঁজতে যাই।
বলেই দু’জনে গলা জড়িয়ে সুরুৎ করে ফোকরের মধ্যে ঢুকে গেল। হিজিবিজ্বিজ্ বসে বসে গা চুলকোচ্ছিল। হাসি বন্ধ। তাতা জিজ্ঞেস করল, ‘হাসি নেই কেন? গায়ে কী হল?’
—চুলকোচ্ছে।
—কেন?
—ঝোপটা বড্ড বেড়েছে। তুমি আগে যখন এসেছিলে, তখন এতটা ছিল না। রামছাগলটা খুব ফাঁকি মারছে। পাতাগুলো খাওয়ার কথা ছিল, একটুও খায়নি।
‘আমার কথা হচ্ছে বুঝি?’ তাতা দেখল, মস্ত দাড়ি নিয়ে হাজির ব্যা-করণ। শ্রীব্যাকরণ শিং।
—ছিলে কোথায়?
—বাদুড় খুঁজতে গেছিলাম।
—বাদুড় কেন?
—আ হা... মনে নেই! সেই যে বাদুড়টাকে পাওয়া গেল না বলে গতবার ন্যাড়াটাকে ধরে হুতোম সাজা দিয়ে দিল।
মনে পড়ল তাতার। ঠিক তো! ‘তা... সাজা হয়েছে?’
—হয়েছে। তিন মাস জেল শেষ হয়েছে। সাতদিনের ফাঁসি বাকি। ফাঁসি শুরুর আগে বাদুড়গোপালকে খুঁজে বের করতে হবে।
‘উঁহু, পাবে না।’ ঢলঢলে পাজামার মতো পেন্টেলুন আর তাকিয়ার খোলের মতো কোট পরে এক ছোকরা দাঁড়িয়ে আছে। বগলে অদ্ভুত এক বাক্স।
‘মলো যা! এটা আবার কে?’ পেনসিলের পিছনটা চিবুতে চিবুতে বলে উঠল কাকেশ্বর। তাতার কিন্তু একে চেনা চেনা ঠেকছে।
—আমি দাশরথী।
ও হো হো হো... মনে পড়েছে তাতার। এ তো দাশু! এই হযবরল কাণ্ডকারখানার মাঝে দাশুর তো আসার কথাই না! তাই না তাতা চিনতে পারেনি!
—বাদুড়গোপালকে পাবে না। বাদুড়গোপালদের পাওয়া যায় না।
অদ্ভুত ঠেকল তাতার। পাগলটা বলে কী? যদিও ভাবনাটা দুম করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেল। এলাকায় একটা গোলমাল লেগেছে। ঝোল্লা পরা হুতোম এসে গিয়েছে। চোখ দু’টোকে টেনে খোলার চেষ্টা করছে। ওকে বিশ্রী নোংরা পাখা দিয়ে হাওয়া করছে ছুঁচোটা। কালো শামলা পরা কুমির আছে, শেয়ালও আছে। এই বসবে যেন এজলাস। শুধু তকমা আঁটা, পাগড়ি বাঁধা কোলা ব্যাঙটাই নেই। আগেরবার ওটিকেই টপ করে গিলে ফেলেছিল কুমির বাবাজীবন। তাই গোলমালটা বেড়েই চলেছে। মামলা চাই। অথচ, মামলা ডাকবে কে, তারই কি না ঠিক নেই! সর্দিবসা মোটা গলায় কুমির বলতে শুরু করল, ‘ধর্মাবতার... মামলা চাই। মানহানির মামলা।’ তড়াক করে লাফিয়ে উঠল শেয়াল। ‘ঠিক ঠিক, মামলা চাই। আমাদের মানের হানি হয়েছে। আমার সহজন্তু কুমির বাবাজীবন মনে করেন, মান কথার মানে মানকচু। তাঁর কাছে কচু নাকি অতি উপাদেয়। মোটেই নয়। মান কথার মানে জমিয়ে রাখা অপমান। আমাদের অনেক অনেক অপমান জমিয়ে রাখা ছিল। ওই দাঁড়কাকটা যেমন সময় জমিয়ে রাখে, ঠিক তেমনি আমরা অপমান জমিয়ে রাখি। এই ত্যাঁদর ছোকরাটা আমাদের জমানো সব অপমান পাউরুটি আর ঝোলাগুড়ের মতো খেয়ে ফেলেছে।’
জোর বিষম খেল তাতা। এরা দেখি তার উপরই জাল ফেলছে! হুতোম চোখ দু’টো একটু টেনে বলল, ‘নালিশ বাতলাও।’ যেই না বলা, কুমিরটা সঙ্গে সঙ্গে শেয়ালের চোখে খিমচে দিল। খ্যাঁক করে উঠল শেয়ালটা... ‘অ্যাইইই...।’ কাঁদো কাঁদো গলায় কুমির বলে কী, ‘চোখ দিয়ে জল না বেরলে হবে কেমন করে?’ ব্যথায় মুখ কুঁচকে তেড়ে এল শেয়াল... ‘এঃ আমায় কাঁদতে হলে চোখে খিমচাতে হয় নাকি? আমি এমনই কাঁদতে পারি।... ধর্মাবতার, এই ছোকরা আমাদের সব অপমান খেয়ে ফেলেছে। এর বিহিত করুন।’ তাতা কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল। কিন্তু হিজিবিজ্বিজের ভয়ানক হাসি শুনে খেই হারিয়ে ফেলল। পাগলটা আবার খেপেছে। হুতোম পা দিয়ে ছুঁচোকে একটু ঠেলে দিল। ছুঁচো সড়াৎ করে উল্টে পড়ল তাতে। তড়িঘড়ি দাঁড়িয়েই বলে উঠল, ‘অর্ডার... অর্ডার। দলিলপত্র, সাক্ষী-সাবুদ কী আছে?’
একটা ছেঁড়া ধ্যাদধেরে বই বের করল কুমির। তাতা দেখল, ওটা একটা হলদে হয়ে যাওয়া সন্দেশ। তার থেকে একটা পাতা ছোঁ মেরে তুলে নিল শেয়াল... ‘এই দেখুন হুজুর, এখানে কী সব লিখেছে ছোকরাটা... একের পিঠে দুই/ চৌকি পেতে শুই।’
—আ মোলো যা... এটা না। খেঁকিয়ে উঠল কুমির।
—‘ও আচ্ছা, তাহলে আর একটা পাতা দাও দেখিনি।’
—‘না দোবো না। আমিই পড়ব।... চাঁদনি রাতের পেতনীপিসি সজনেতলায় খোঁজনা রে—’।
—আমিইইই পড়ব! বাবা রে বাবা, কী পড়ার ছিরি।
বইটাই কেড়ে নিল শেয়াল। তারপর চশমা এঁটে খুঁজে পেয়ে বলে, ‘এই তো পেয়েছি। শুনুন হুজুর, এই ছোকরা লিখেছে, অমনি কোত্থেকে একটা কালো ঝোল্লা পরা হুতোম প্যাঁচা এসে সকলের সামনে একটা উঁচু পাথরের উপর বসেই চোখ বুজে ঢুলতে লাগল...। বিচারক যে ঘুমোয়, সে কথা কি লেখার? বলুন তো? তারপর লিখেছে দেখুন, ১ নং সাক্ষী, নগদ হিসাব, মূল্য চার আনা... আমরা টাকা দিয়ে সাক্ষী কিনছি, সেটাও লিখে দিয়েছে! পরে তো আবার লিখেছে শুনুন, তাড়াতাড়ি ভুলিয়ে-ভালিয়ে ন্যাড়াকে আসামি দাঁড় করানো হল। আচ্ছা বলুন তো, বাদুড়গোপালদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকতে পারে, তাদের কি আসামি বানানো যায়? তাদের জায়গায় তো ন্যাড়াদেরই দাঁড় করিয়ে কেস ডিসমিস করতে হয়। এসব কি লেখার? এতে আমাদের সব জমানো অপমান বদলে মান হয়ে যাচ্ছে না? এর বিহিত আপনাকে করতেই হবে।’
ঝোল্লা সামলে নড়েচড়ে বসল হুতোম। ঠিক কথা! এর সাজা হবে। ন্যাড়ার তিনমাস জেল সাতদিনের ফাঁসি হয়েছিল। একে ৩০০ বছরের জেল দিতে হবে।
শুনেই চারদিকে হুলুস্থুলু পড়ে গেল। তাতার কথা কেউ শুনল না। ছাগলটা ব্যা ব্যা চিৎকার জুড়ল, ছুঁচোটা কিচকিচ করে হুতোমকে কী সব বোঝাতে শুরু করল। অষ্টাবক্র কুমিরটা কাকে খাবে খুঁজে না পেয়ে হিজিবিজ্বিজের দিকে ধেয়ে গেল, আর সেও এক লাফে গাছে চড়ে ফোকরের ভিতর ঢুকে যাওয়ার মরিয়া চেষ্টা শুরু করল। শেয়াল হাউমাউ করে উঠল, ‘হুজুর, এই সাজা দেবেন না। তাহলে তো এই ছোকরাকে কেউ কোনওদিন ভুলতেই পারবে না। ৩০০ বছর ধরে আমাদের কাণ্ডকারখানা সবাই পড়বে!’ হুতোম সেই শুনে আবার ঝিমোতে শুরু করল। তাতা ভাবছিল, এবার গেছোদাদা এলেই হয়। তখনই শুনল একটা শব্দ... দাশু খিক খিক করে হাসছে, আর মাথা নাড়ছে।
—হাসছ কেন?
—আসবে না।
—কে আসবে না?
—গেছোদাদা।
অবাক হয়ে গেল তাতা। ও যে গেছোদাদার কথা ভাবছে, দাশু জানল কী করে?
—আমি সব বুঝতে পারি। মনের কথা। তোমার থেকেই শেখা। সে যাক... ওসব তুমি বুঝবে না। কিন্তু গেছোদাদা আসবে না।
—কেন?
—গেছোদাদা আসলে গণতন্ত্র। তাকে সামনে রেখে এরা যা খুশি তাই করে যায়। গেছোদাদাকে পাবে কীভাবে?
কেমন একটা গুলিয়ে গেল তাতার। এসব কী বলছে দাশরথী? পাগলটার কথা সত্যি সব সময় বোঝা যায় না... ‘তোমার মাথায় ছিট আছে। কী আবোল তাবোল বলছ? মানে বুঝিয়ে দাও।’
—এঃ, আমার বুঝি আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই? আজ একে ইংরেজি বোঝাব, কাল ওর অঙ্ক কষে দেব, পরশু তোমাকে গণতন্ত্র বোঝাব...!
—এই দাশু, এটা তো জগবন্ধুর ডায়লগ।
খুব রেগে গেল দাশু... ‘তুমি তো ভারি ছ্যাঁচড়া ছোটলোক!’
তাতার চারপাশটা কেমন ঘুলিয়ে যেতে লাগল। ছাগলের মুখটা প্রথমে মেজমামার মতো হয়ে গেল... তারপর হাওয়ায় মিশে গেল। হিজিবিজ্বিজ্ বলতে লাগল, ‘বাজে স্বপ্ন... বাজে স্বপ্ন’। তাতা এখন ভাবছে, এই কথাগুলো ভরসা করে কাকে বলা যায়? শুধুই ছোটদের? নাকি হোঁৎকারাও একটু একটু বুঝবে!