ধর্মকর্মে সক্রিয় অংশগ্রহণে মানসিক তৃপ্তি ও সামাজিক সুনাম। পেশাদার শিল্পীদের শুভ সময়। ... বিশদ
বাড়িতে পুজো করার ভাবনা কীভাবে এল? নন্দিনী বললেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরেই বাড়িতে পুজো করার জন্য যেন একটা ঐশ্বরিক নির্দেশ পাচ্ছিলাম। বাড়ির ছাদে মা ফুলগাছ করেন। সেখানে একটি বেলগাছ হয়েছে। বেলগাছের নীচেই তো দুর্গা মায়ের বোধনের কাজ হয়। এইসব নানারকম নির্দেশ থেকে মনে হচ্ছিল বাড়িতে পুজো হোক, এটা মায়েরই ইচ্ছে। তখন থেকেই সিরিয়াসলি ভাবতে শুরু করি। রুমা, সেমন্তী, পৌলমী এবং আমাকে নিয়ে তৈরি ‘শুভমস্তু’র মূল টিম। আমরা গত ১০ বছর ধরে এই কাজই করছি। যখন বাড়িতে পুজো করার সিদ্ধান্ত নিলাম, ওরাও সমর্থন করে।’
নন্দিনীর এই পুজোর কিছু বিশেষত্ব রয়েছে। অনেকদিন ধরে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ‘এই পুজোটা বিশেষভাবেই আমরা করতে চাই। একবছর ধরে মায়ের স্নানের জল এবং মাটি আমরা একটু একটু করে সংগ্রহ করেছি। বৃষ্টির জল, শিশিরের জল, নদীর জল, বিভিন্ন তীর্থের জল, সাত সমুদ্রের জল সারা পৃথিবী থেকে সংগ্রহ করেছি। বিভিন্ন মাটিও এভাবেই সংগ্রহ হয়েছে,’ বললেন নন্দিনী। পুজোয় যে মাটি ব্যবহার হবে, তারও বিশেষত্ব রয়েছে। তা কীরকম? ব্যাখ্যা করে নন্দিনী বললেন, ‘পুরাণে যেভাবে মায়ের স্নানের বর্ণনা রয়েছে, আগেকার দিনে সেসব মাটির উপযোগিতা, প্রয়োজনীয়তা এবং সহজলভ্যতা ছিল। এখন দিন বদলে গিয়েছে। বৃষশৃঙ্গ মৃত্তিকা, গজদন্ত মৃত্তিকা— এগুলো এখন পাওয়া যায় না। ফলে সারা ভারত থেকে বিভিন্ন তীর্থের মাটি জোগাড় করেছি। কেদারনাথ, বদ্রীনাথের মাটি সংগ্রহ করেছি আমরা। তাই দিয়ে মায়ের পুজো হবে।’
দীর্ঘদিন পৌরোহিত্য করার অভিজ্ঞতা থেকে নন্দিনী বিশ্বাস করেন, দুর্গাপুজো আসলে প্রকৃতি পুজোর সমার্থক। তাঁর কথায়, ‘মা প্রথমে নিমগাছের ডাল দিয়ে দাঁতন করে একটু গরমজল দিয়ে মুখ ধুচ্ছেন, এই দিয়ে গল্প শুরু...। আমাদের বাড়িতে নিমগাছও আছে। সেই নিমের ডাল নিয়েই মায়ের দাঁতন হবে। নবপত্রিকার প্রতিটি গাছ শেকড় সমেত জোগাড় করেছি। আসলে দুর্গাপুজোর যে দর্শন, সেটি সবার সামনে তুলে ধরব।’
পশুপতি রুদ্র পালের হাতের ছোঁয়ায় সেজে উঠছে সাবেকি মাতৃমূর্তি। ‘শুভমস্তু’র পুজোয় বরাবরই গানের বড় ভূমিকা থাকে। এবার সেখানেও অভিনবত্ব রয়েছে। নন্দিনীর কথায়, ‘আমরা সবসময় মন্ত্রনির্ভর পুজো করি না। মন্ত্রের সঙ্গে সঙ্গীতনির্ভর পুজোও করি। পাঁচদিনে অন্তত ২০টা গান থাকে। এবার আমরা সব ক’টা গান স্টুডিও রেকর্ডিং করে নিয়েছি। আশু চক্রবর্তী মিউজিক অ্যারেঞ্জমেন্ট করেছেন। ফলে গোটা বিষয়টা অনেক বেশি চিত্তাকর্ষক হবে বলে মনে করি। আমাদের কাছে গানও কিন্তু মন্ত্রই।’
নন্দিনীর পরিবারে দুর্গাপুজোর প্রাচীন ইতিহাস রয়েছে। তাঁর হাত ধরে যেন পারিবারিক বৃত্ত সম্পূর্ণ হচ্ছে। তিনি বললেন, ‘আমার শ্বশুরবাড়ি জলপাইগুড়িতে। সেখানে দুর্গাপুজো হতো। আমি কয়েকবার সেখানে গিয়েওছি। কিন্তু তারপর লোকাভাবে তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আবার পুজো শুরু হল বাড়িতে, সেটা ভাবতে ভালোই লাগছে।’