কর্মোন্নতি ও কর্মের প্রসার। সামাজিক সুনাম বৃদ্ধি। শারীরিক সমস্যার আশঙ্কা। ধনাগম মন্দ নয়। দাম্পত্যে চাপ, ... বিশদ
শ্রীশ্রীমা সারদা দেবী। ভারতবর্ষের যুগযুগান্তের মাতৃসাধনার পরম সিদ্ধি। মাতৃত্বের এই শাশ্বত প্রতিমাকে ফিরে ফিরে দেখবে শাশ্বত কাল। যুগাবতার সঙ্গে এনেছিলেন যুগজননীকে— যুগের প্রয়োজনেই। সে প্রয়োজন— যুগজননীরই মুখের কথায়— ‘মাতৃভাব প্রচার’। অকারণ ভালোবাসা অদোষদর্শিতা, ক্ষমা, সেবা, নিঃস্বার্থপরতার পরাকাষ্ঠা— সকলের প্রতি— এই হল মাতৃভাবের মূলকথা। স্বার্থসর্বস্ব পৃথিবীতে প্রেমের এই নিশ্চিন্ত নীড়টুকুই আজ হারিয়ে গিয়েছে মানুষের জীবন থেকে। তার একান্ত প্রয়োজন অমনই একটি পরম আশ্রয়— মাথা রাখবার একটি কোল।
এই ‘জন্মজন্মান্তরের মায়ের আবির্ভাবের তাৎপর্য নিয়ে সারা পৃথিবীতে বহু চর্চা হয়ে গিয়েছে। সে তাৎপর্য বহুমাত্রিক, বহুবর্ণিল। আগামী যুগে মহাশক্তির বিকাশ তার মধ্যে অন্যতম। মানবসত্তার চিদাকাশে শ্রীশ্রীমায়ের অনিঃশেষ উদয়ের মধ্যে এই অভূতপূর্ব উদ্ভাসেরই আভাস দেখেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। শ্রীশ্রীমাকে তিনি বলতেন, ‘জ্যান্ত দুর্গা’। আর্ষদৃষ্টি দিয়ে উপলব্ধি করেছিলেন: ‘আমাদের দেশ সকলের অধম কেন? শক্তিহীন কেন?— শক্তির অবমাননা সেখানে বলে। মা-ঠাকুরানী ভারতে পুনরায় সেই মহাশক্তি জাগাতে এসেছেন, তাঁকে অবলম্বন করে আবার সব গার্গী, মৈত্রেয়ী জগতে জন্মাবে। ...এই জন্যই তাঁর মঠ প্রথমে [স্থূলাক্ষর স্বামীজিকৃত] চাই।’’
আমেরিকা থেকে গুরুভাইদের লেখা অন্তত সাতটি চিঠিতে স্বামীজির সুতীব্র আর্তি প্রকাশ পেয়েছে শ্রীশ্রীমায়ের একটি নিজস্ব বাড়ির জন্য। সেগুলির কোনও-কোনওটি পড়লে মনে হয় স্বামীজি চেয়েছিলেন মায়ের বাসগৃহটিই হবে মায়ের মঠ অর্থাৎ তাঁর কন্যাদের মঠ। স্বামী রামকৃষ্ণানন্দকে লেখা চিঠিটিতে (১৮৯৫) যেমন: ‘মা-ঠাকুরানীর জন্য পত্রপাঠ জায়গা অনুসন্ধান করিবে।... একটা বড় জমি প্রথমে চাই...। আমাদের মঠ (সন্ন্যাসীদের মঠ) ধীরে ধীরে হবে, ভাবনা নাই।’
চিঠিগুলি পড়লে অনেক সময় মনে হয়, যুগাচার্যের ভাবনা মেয়েদের মঠের জন্যই বেশি ছিল: ‘শক্তির কৃপা না হলে কি ঘোড়ার ডিম হবে! ...আমার চোখ খুলে যাচ্ছে, দিন দিন সব বুঝতে পারছি। সেইজন্য আগে মায়ের জন্য মঠ করতে হবে। আগে মা আর মায়ের মেয়েরা, তারপর বাবা আর বাপের ছেলেরা...। দাদা, এই দারুণ শীতে গাঁয়ে গাঁয়ে লেকচার করে লড়াই করে টাকার যোগাড় করছি— মায়ের মঠ হবে।... আমাদের (সন্ন্যাসীদের) মঠের চিন্তা নাই, আমি দেশে গিয়ে সব ঠিকঠাক করব।’
নারীর যখন চরম দুর্দশা, সেই অন্ধকার সময়ে দাঁড়িয়েই স্বামী বিবেকানন্দ পরিকল্পনা করেছিলেন বহুমুখী শিক্ষাদীক্ষা দিয়ে নারীকে উন্নত জীবনযাপনের সুযোগ দেওয়ার। ত্যাগ, বৈরাগ্য, সংযমের জীবনযাপন করতে আগ্রহী ও উপযুক্ত মেয়েদের জন্য গড়ে দিতে চেয়েছিলেন স্বতন্ত্র মঠ, শ্রীশ্রীমাকে কেন্দ্র করে। বেলুড় মঠের নিয়মাবলি প্রণয়নকালে সর্বপ্রথম নিয়মেই স্বামীজি পুরুষমঠের অনুরূপ একটি নারীমঠ স্থাপনের কথা ঘোষণা করেছিলেন। নিজের পরিকল্পনাগুলির কার্যকারণ পরম্পরা তাঁর কাছে ছিল খুবই স্পষ্ট: ‘জগতের কল্যাণ স্ত্রীজাতির অভ্যুদ্বয় না হইলে সম্ভাবনা নাই... সেই জন্যই আমার স্ত্রীমঠ স্থাপনের জন্য প্রথম উদ্যোগ।’
ক্রান্তদর্শী ঋষির আকাঙ্ক্ষা সফল হল তাঁর দেহত্যাগের বাহান্ন বছর পর। ১৯৫৪ সালে, শ্রীশ্রীমার জন্মশতবার্ষিকীর পুণ্যলগ্নে বেলুড় মঠ কর্তৃপক্ষ স্থাপন করলেন শ্রীসারদা মঠ— স্বামীজির ইচ্ছে শিরোধার্য করে, গঙ্গার পূর্বকূলে দক্ষিণেশ্বরে। শ্রীশ্রীমায়েরই মন্ত্রশিষ্যা ও সেবিকা সরলা দেবী— পরবর্তীকালে প্রব্রাজিকা ভারতীপ্রাণামাতাজি— বৃত হলেন সে মঠের প্রথম অধ্যক্ষার পদে। পৃথিবীতে এই প্রথম স্বাধীন সন্ন্যাসিনী সঙ্ঘ। স্বামীজির স্বপ্ন ছিল, শ্রীশ্রীমা সেখানে ‘central figure হয়ে বসবেন।’ সে স্বপ্ন আক্ষরিক অর্থেই সত্যি হয়েছে। ১৯৮১ সালে সারদা মঠে মন্দির প্রতিষ্ঠার সময় গর্ভমন্দিরে শ্রীরামকৃষ্ণ ও স্বামীজির মাঝে শ্রীশ্রীমা-ই কেন্দ্রমণি হয়ে বসেছেন।
শ্রীশ্রীমায়ের মঠের সবচেয়ে বড় উৎসব মায়ের জন্মতিথি পালন। ‘মঠ’ কেন্দ্র মানেই সেখানে পূজা ও আনুষঙ্গিক বিষয়গুলি গুরুত্ব পায়। সারদা মঠ মূলকেন্দ্রে মন্দিরে শ্রীরামকৃষ্ণদেব, শ্রীশ্রীমা ও স্বামীজির নিত্য দশোপচার পূজা এবং শ্রীশ্রীঠাকুর ও মায়ের নিত্য অন্নভোগ আছে। দশোপচার পূজার দশটি উপকরণ হল: পাদ্য, অর্ঘ্য, আচমনীয়, স্থানীয়, গন্ধ (চন্দন), পুষ্প, বিল্বপত্র, ধূপ, দীপ, নৈবেদ্য। শ্রীরামকৃষ্ণের সন্ন্যাসী পার্ষদবৃন্দের জন্মতিথি এবং আরও কয়েকটি বিশেষ তিথিতে শ্রীরামকৃষ্ণদেবের ষোড়শোপচার পূজা হয়।
আমরা মনোনিবেশ করছি শ্রীশ্রীমায়ের জন্মতিথির দিনটিতে— পৌষ কৃষ্ণা সপ্তমী। সাধারণত ডিসেম্বরের যে কোনও সময় বা জানুয়ারির প্রথমে মায়ের তিথিপূজা পড়ে। এদিন শ্রীরামকৃষ্ণ ও সারদা দেবী উভয়েরই ষোড়শোপচার পূজা হয়। ষোড়শোপচার পূজার ক্ষেত্রে ষোলোটি উপকরণ: আসন, পাদ্য, অর্ঘ্য, আচমনীয়, মধুপর্ক, পুনরাচমনীয়, স্নানীয়, বস্ত্র, আভরণ, গন্ধ, পুষ্প, বিল্বপত্র, মাল্য, ধূপ, দীপ, নৈবেদ্য। প্রতিটি উপচার নিবেদনের আলাদা মন্ত্র থাকে। এছাড়া স্নানীয়ের পূর্বে গন্ধতৈল, আভরণের পর সিন্দুর-অলক্তক, নৈবেদ্যের পর পানীয়-তাম্বুল ইত্যাদি সবই পৃথক পৃথক মন্ত্র সহকারে নিবেদিত হয়। বিভিন্ন শাস্ত্রমতে ষোলোটি উপচার ভিন্ন ভিন্ন; তাই সঙ্ঘের পরম্পরাক্রমে যেভাবে মায়ের পূজা হয় সেটিই বলা হল। মন্ত্রগুলি ভারি সুন্দর। যেমন আসন নিবেদনের মন্ত্র:
‘ওঁ প্রসীদ জগতাং মাতঃ সংসারার্ণববতারিণি।
ময়া নিবেদিতং ভক্ত্যা আসনং সফলং কুরু।।’
—ভবসমুদ্র থেকে ত্রাণকারিণী হে জগজ্জননী, তুমি প্রসন্ন হও; ভক্তিপূর্ণ অন্তরে তোমায় যে আসন নিবেদন করেছি তাকে সফল করো (অর্থাৎ এই আসনে এসে বোসো)। আবার, উল্লিখিত মধুপর্ক হল এরকম পানীয় বা প্রস্তুত হয় নির্দিষ্ট অনুপাতে ঘি, মধু, চিনি, দই এবং নারকেলের জল মিশিয়ে। সেটি নিবেদনের মন্ত্র:
‘মধুপর্কং মহাদেবি মধ্বাদ্যৈঃ পরিকল্পিতম্।
ময়া নিবেদিতং ভক্তা গৃহাণ পরমেশ্বরি।।’
—হে মহাদেবী, মধু প্রভৃতি দ্বারা প্রস্তুত মধুপর্ক ভক্তিপূর্ণ চিত্তে তোমায় নিবেদন করছি।’ হে পরমেশ্বরী, গ্রহণ করো।
তিথিপূজার কয়েকদিন আগে থেকেই পরিকল্পনা অনুযায়ী বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে মঠে এসে নানা কাজে যুক্ত হন সন্ন্যাসিনী ও ব্রহ্মচারিণীরা। আসেন বহু স্বেচ্ছাসেবিকা, তাঁরা মঠের গেস্ট হাউসে থাকেন। সেদিনের সভা ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য মন্দিরের পশ্চিম দিকের মাঠে তৈরি হয় বিশাল প্যান্ডেল। মন্দিরের সামনের মাঠে অল্প দূরত্বে ছোট্ট কারুকার্যময় প্যান্ডেলে নহবত বসে। ভোর চারটে থেকেই দক্ষ বাজনদারদের সানাইয়ের সুরে আবিষ্ট হয় মঠের আকাশ-বাতাস। সাড়ে চারটের মঙ্গলারতির পর শ্রীশ্রীমায়ের বেশ কিছু স্তবস্তোত্র ও গান করেন সন্ন্যাসিনী-ব্রহ্মচারিণীরা। সূর্যোদয়ের পর থেকে শুরু হয় পূজা। নাটমন্দিরে চলে চণ্ডীপাঠ। ইতিমধ্যে মন্দিরের পশ্চিমের প্যান্ডেলে শ্রীশ্রীমার সুসজ্জিত বিশাল প্রতিকৃতির সামনে চলতে থাকে সন্ন্যাসিনী-ব্রহ্মচারিণীদের বৈদিক মন্ত্রপাঠ ও মাতৃবন্দনা। স্বর্গীয় সুরমূর্ছনা ছড়িয়ে পড়ে সারা মঠে। সকাল থেকে মঠে আসতে শুরু করেন অগণিত ভক্ত নারী-পুরুষ এবং বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে সন্ন্যাসিনী-ব্রহ্মচারিণীরা। মন্দিরে স্বেচ্ছাসেবিকাদের সযত্ন তত্ত্বাবধানে সুশৃঙ্খলভাবে প্রণাম নিবেদন করে তাঁরা কেউ মন্দিরে বসেন, কেউ বা প্যান্ডেলে। সেখানে সারাদিন চলতে থাকে পাঠে আলোচনায় গানে সন্ন্যাসিনী ও ভক্ত মহিলাদের শ্রদ্ধা নিবেদন।
পরমপূজনীয়া প্রেসিডেন্ট মাতাজির বাসভবনের বিপরীতদিকে আর একটি বড় প্যান্ডেল। মন্দিরে প্রণাম নিবেদন করে এসে পুরুষ ভক্তরা সেখানে বসে বিশাল পর্দায় দেখেন মন্দিরে চলতে থাকা পূজা-হোম-আরতি এবং প্যান্ডেলের অনুষ্ঠানাদি। সেখানেই অন্নপ্রসাদ গ্রহণ করেন তাঁরা। মন্দিরের সামনের মাঠে মঠের তিনটি বিভাগের তিনটি স্টল-মঠের বাংলা মুখপত্র ‘নিবোধত’ পত্রিকার একটি, প্রকাশন বিভাগের একটি এবং কম্পিউটার শিক্ষাকেন্দ্র ‘রসিক ভিটা ছাত্রীমঙ্গল’-এর একটি। যথাস্থানে এগুলির মূল বিক্রয়কেন্দ্র থাকা সত্ত্বেও উৎসবের বিপুল ভক্তসমাগম উপলক্ষ্যেই এই অতিরিক্ত কেন্দ্রগুলির ব্যবস্থা।
সকাল দশটা নাগাদ পরমপূজনীয়া প্রেসিডেন্ট মাতাজি ও ভাইস প্রেসিডেন্ট মাতাজির প্রণাম শুরু হয়। এর জন্য সানন্দে দীর্ঘ লাইনে ভক্তরা অপেক্ষা করেন।
সাধারণত সকাল দশটার মধ্যে শ্রীশ্রীঠাকুর ও মায়ের ষোড়শোপচার ও স্বামীজির নিত্যবিহিত দশোপচার পূজা শেষ হয়ে হোম আরম্ভ হয়। মন্দিরে তখন তিল ধারণের স্থান থাকে না। রোজকার মতোই এগারোটায় অন্নভোগ নিবেদিত হয়। বস্তুত যত বিশেষ পূজাই থাকুক না কেন, এগারোটায় ভোগ নিবেদনের ব্যত্যয় হয় না কোনওদিনই, কারণ শ্রীশ্রীঠাকুর ‘রাক্ষুসে বেলা’য় খেতে পারতেন না। বিবিধ অন্নব্যঞ্জন, বহুরকম মিষ্টান্ন অতি শুদ্ধাচারে রন্ধন করে নিবেদন করা হয়। এদিনের ভোগরান্না ও তার প্রস্তুতির জন্য কয়েক দিন আগে থেকেই বিভিন্ন শাখাকেন্দ্র থেকে রন্ধনপটু সন্ন্যাসিনীরা মঠে সমবেত হন। সাড়ে এগারোটায় ভোগারতির পর মন্দির বন্ধ হয়ে যায়।
বেলা এগারোটা থেকেই শুরু হয় পুরুষ ও মহিলাদের আলাদা আলাদা প্যান্ডেলে প্রসাদ বিতরণ— শীতের রকমারি সব্জি সহযোগে সুস্বাদু গরম গরম খিচুড়ি ও চাটনি। প্রায় বিকেল পর্যন্ত অগণিত ভক্ত প্রসাদ গ্রহণ করেন।
বেলা সাড়ে তিনটেয় মন্দির খুললে প্যান্ডেলে আবার আরম্ভ হয় অনুষ্ঠান। সন্ন্যাসিনীরা মাতৃপ্রসঙ্গ করেন, বিভিন্ন পাঠচক্র ও ভক্তসঙ্ঘ থেকে আসা মায়ের মেয়েরা নিবেদন করেন মাতৃসঙ্গীত। বিকেলেও অব্যাহত থাকে ভক্তসমাগম এবং প্রণামাদি। শীতের বেলা ছোট— বিকেল প্রায় পাঁচটা নাগাদ সন্ধ্যারতি শুরু হয় (বস্তুত সারা বছরই সূর্যাস্ত অনুযায়ী সন্ধ্যারতি হয়)। নিত্যদিনের মতোই ‘খণ্ডন ভববন্ধন’, ‘ওঁ হ্রীং ঋতম্’, ‘প্রকৃতিং পরমাং’ এবং ‘সর্বমঙ্গলমঙ্গল্যে’, তারপর মাতৃসঙ্গীত।
সান্ধ্যভজনশেষে ভক্তরা ফিরে যাওয়ার পর উৎসব-কোলাহল শান্ত হয়। সারাদিন বিভিন্ন বিভাগে সেবা করে সন্ন্যাসিনী-ব্রহ্মচারিণীদের মধ্যে কারও কারও এইসময় একটু ফুরসত মেলে। প্যান্ডেলে শ্রীশ্রীমায়ের সামনে সমবেত হয়ে তাঁরা প্রবল উৎসাহ ও উল্লাসে মাতৃসঙ্গীতে মেতে ওঠেন। শীতের রাতে হারমোনিয়াম-তবলা-খঞ্জনির নিস্বনের সঙ্গে মিলে যায় সুরধুনীর কলতান। সারাদিনের প্রচণ্ড কর্মব্যস্ততার পর পর মধুর এই একান্তে মাতৃসান্নিধ্য আস্বাদন।
জন্মতিথি উৎসবের অন্তিম অঙ্গ সন্ন্যাস। স্বামীজির কৃপায় এ যুগের মেয়েরা বৈদিক সন্ন্যাসের অধিকার পেয়েছে। বৈদিক সন্ন্যাসের আগে আত্মশ্রাদ্ধ বিধেয়, তাই তিথিপূজার পূর্বদিন ব্রতধারিণীদের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হয়। জন্মতিথির পরদিন প্রভাতে মুণ্ডিতমস্তকে গৈরিকবসনে নতুন নামে নবীন সন্ন্যাসিনীরা মঠের শোভা বর্ধন করেন। আগে সন্ন্যাস ও ব্রহ্মচর্য দুটি অনুষ্ঠানই এইদিনে হতো। বর্তমানে সংখ্যাধিক্যের কারণে স্বামীজির তিথিপূজায় ব্রহ্মচর্য এবং মায়ের তিথিপূজায় সন্ন্যাস হয়।
আটবছরে গৌরীদান না করলে পরিবারকে একঘরে হতে হতো যে-সমাজে, সেই সমাজের মেয়েদের জন্য কত স্বপ্ন ছিল স্বামী বিবেকানন্দের চোখে! সেই স্বপ্ন আজ কিছুটা হলেও সার্থক হয়েছে। ‘আত্মনো মোক্ষার্থং জগদ্ধিতায় চ’— এই লক্ষ্যে কাজ করে নারীপুরুষ উভয়েরই আত্যন্তিক কল্যাণ হবে, এই ছিল তাঁর আশা। শ্রীসারদা মঠ ও রামকৃষ্ণ সারদা মিশন সেই আদর্শেই এগিয়ে চলেছে।