কর্মোন্নতি ও কর্মের প্রসার। সামাজিক সুনাম বৃদ্ধি। শারীরিক সমস্যার আশঙ্কা। ধনাগম মন্দ নয়। দাম্পত্যে চাপ, ... বিশদ
এমকিউর ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির শীর্ষে রয়েছেন তিনি। অঙ্কে তাঁর ভীষণ দখল। আবার মহিলাকেন্দ্রিক বিষয় নিয়েও তাঁর চিন্তার অন্ত নেই। তিনি নমিতা থাপার। এমকিউর ফার্মার তিনি এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর। হেল্থ কেয়ারে কাজ করার সুবাদে নমিতা মহিলাদের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার অভাব খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তিনি উপলব্ধি করেছেন যে সাধারণভাবে পরিবারে মহিলা ও তাঁদের স্বাস্থ্য উপেক্ষিত। মেয়েরা নিজেরাও নিজেদের শরীরের প্রতি বেখেয়ালি। আর সেই সুযোগ পুরোদস্তুর উসুল করে নেয় পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। ব্যাপারটা ভাবাত নমিতাকে। তিনি প্রতিকার খুঁজতে চাইতেন। শেষ পর্যন্ত সোশ্যাল মিডিয়ার দ্বারস্থ হলেন। নিজের একটি ইউ টিউব চ্যানেল খুললেন তিনি। সেই চ্যানেলে মহিলাদের বিভিন্ন রোগ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা, ডাক্তারের পরামর্শ ইত্যাদি দিতে শুরু করেন নমিতা। স্ত্রীরোগ বিষয়ক যে ট্যাবু আমাদের সমাজে রয়েছে তা ভেঙে দেওয়াই ছিল নমিতার উদ্দেশ্য। প্রতিটি এপিসোড মাত্র পনেরো মিনিটের। তারই মধ্যে প্রশ্ন ও সমাধান বাতলে দিতেন নমিতা থাপার। তার জন্য কখনও কোনও ডাক্তারের পরামর্শ শোনাতেন কখনও বা কোনও সমাজতত্ত্ববিদের বক্তব্য তুলে ধরতেন। মেয়েদের রোগ যে আদৌ অবহেলা করার জিনিস নয়, তা-ই বলা ও বোঝানোর চেষ্টা করেছেন নমিতা তাঁর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। এই অনুষ্ঠানে শুধু নারীর শারীরিক সমস্যার সমাধানই করেন না নমিতা। একই সঙ্গে তাদের মানসিক সমস্যা নিয়েও আলোচনা করেন। মেয়েরা এখানে নিজেদের বিভিন্ন দুঃখ, অপমানের কথা বিনা দ্বিধায় বলার সুযোগ পায়। নিজেদের ইচ্ছে, সাধ, শখ ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করে। নমিতার কথায়, ছোটবেলায় তিনি দেখেছেন মা কীভাবে নিজেকে বঞ্চিত করে বাকিদের খেয়াল রাখতেন। কিন্তু মায়ের কথা কেউ ভাবত না। সেই থেকেই মেয়েদের জন্য কিছু করার এই ইচ্ছেটা প্রবল হয়ে উঠেছিল। তারপর যত বড় হয়েছেন ততই সমাজে মেয়েদের অবহেলা দেখেছেন, বঞ্চনার কথা শুনেছেন এবং শেষ পর্যন্ত মেয়েদের উন্নতির জন্য নিজের ইউ টিউব চ্যানেলটা চালু করেন। মেয়েদের উন্নতিসাধনই তাঁর আসল লক্ষ্য।
নারীর অধিকারের লড়াইয়ে দৃপ্ত তৃষা
নারী ও পুরুষ যে একে অপরের পরিপূরক, সেই বার্তা এখনও আমাদের সমাজের প্রতিটি কোণে সঠিকভাবে পৌঁছয়নি। আর পৌঁছয়নি বলেই এত বিভেদ এত লাঞ্ছনা। মেয়েদের এই সামাজিক লাঞ্ছনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে উঠেছেন তৃষা শেঠি। তিরিশ বছর বয়সেই
তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন হয়ে উঠেছেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে স্নাতক হওয়ার পর থেকেই জেন্ডার স্টাডিজ বিষয়ে মনোযোগী হয়ে ওঠেন তৃষা। মাত্র পঁচিশ বছর বয়সেই তিনি লিঙ্গবৈষম্য দূর করার জন্য একটি আন্দোলন শুরু করেন। তাঁর বক্তব্য, মেয়েরাই এই সমাজে বদল আনতে পারে। পুরুষের তুলনায় মেয়েদের চিন্তাধারা অনেক বেশি পরিণত ও উন্নত। ফলে একজোট হয়ে কোনও কাজ করতে চাইলে তারা পুরুষের তুলনায় অনেক ভালোভাবে সেই কাজ করতে পারে। কিন্তু মেয়েদের যা নেই তা হল, ঐক্যবদ্ধ হওয়ার মানসিকতা। তবে শুধুই যে ভাবনার স্তরে নিজেকে আবদ্ধ রেখেছেন তা-ই নয়। তৃষা নিজের আন্দোলনের স্তর এতটাই উন্নত করে তুলতে সক্ষম হয়েছেন যে রাষ্ট্রপুঞ্জও তাঁর কাজকে স্বীকৃতি দিয়েছে। রাতবিরেতে মেয়েদের নিরাপত্তা রক্ষার কাজও করেন তৃষা। তার জন্য বিভিন্ন বার, পাব, রেস্তরাঁ ইত্যাদির সঙ্গে পুলিসি সংযোগ স্থাপন করে দেন তিনি। মহিলারা যদি রাতে প্রয়োজনে বা এমনি সেই এলাকায় যাতায়াত করে তাহলে তাদের নিরাপত্তা দিতে পুলিসের সুবিধে হবে। তৃষার কাজের দৌড় সুদূর ব্রিটেন পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে। নারী সুরক্ষার লড়াইয়ের পথে তাঁকে কুর্নিশ জানিয়েছেন সে দেশের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ স্বয়ং। রানির নামে কুইন’স ইয়ং লিডার পুরস্কারও পেয়েছেন তৃশা।
তিনি বলেন, এই ধরনের স্বীকৃতি তাঁকে জীবনে আরও কাজ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছে। তিনি মেয়েদের সম অধিকারের দাবিতে আরও বেশি মাত্রায় সরব হয়ে উঠতে পেরেছেন।