কর্মোন্নতি ও কর্মের প্রসার। সামাজিক সুনাম বৃদ্ধি। শারীরিক সমস্যার আশঙ্কা। ধনাগম মন্দ নয়। দাম্পত্যে চাপ, ... বিশদ
জারা বাদারফোর্ড আধা ব্রিটিশ আধা বেলজিয়ান। মাত্র ১৯ বছর বয়সেই সে নাকি খবরের শিরোনামে! বাবা ও মা দু’জনেই পাইলট। তাই ছোট থেকেই প্লেন ওড়ানোর নেশা তাঁকে পেয়ে বসেছিল। প্রশিক্ষণও নিয়েছিলেন তিনি নিয়ম মতো। তারপর অপেক্ষায় ছিলেন প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার। আঠারো পেরিয়ে উনিশে পা দিতে না দিতেই জীবনে অন্য কিছু করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন জারা। একা প্লেন উড়িয়ে গোটা বিশ্বভ্রমণে বেরিয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। বেলজিয়ামে বাড়ি, তাই বাড়ি থেকে সবচেয়ে কাছের একটি এয়ারপোর্ট থেকেই শুরু করবেন তাঁর বিশ্বভ্রমণ। তাঁর এই একক যাত্রার সঙ্গী শার্ক আল্ট্রালাইট এয়ারক্রাফ্ট। গতিতে এটি সুপারফাস্ট। এখনও পর্যন্ত একক মহিলা প্লেন চালিকার খেতাব ধরে রেখেছেন মার্কিন দেশের কন্যা সায়েস্তা ওয়াইস। কিন্তু খুব শিগগিরি তাঁর ওই খেতাবে দ্বিতীয় নামটি যুক্ত করে ফেলবেন জারা। মোট ৭০টি স্টপ থাকবে জারার বিশ্ব ভ্রমণে। মোটামুটি ৫২টি দেশ তিনি ঘুরে ফেলবেন ১৯ দিনে। এই যাত্রাপথে বিষুবরেখা পারাপার রয়েছে দু’বার। প্রতিটি দেশেই হোম স্টে বা ছোটখাট মোটেল গোছের থাকার জায়গা বেছে নিয়েছেন জারা। তিনি বললেন দেশ দেখার মজা তো আর স্টার হোটেলে থাকলে মিলবে না। গোটা ট্রিপটাই তাঁর কাছে একটা অ্যাডভেঞ্চার। ফলে সেই অ্যাডভেঞ্চার সম্পূর্ণভাবে উপভোগ করার জন্য তিনি ছোটখাট হোটেল, হোম স্টে এমনকী, লোকের বাড়িতে থেকেও ঘোরার কথা ভেবেছেন। বাবা আর মা এই দু’জনকে দেখেই তাঁর প্লেন চালানোর শখ হয়েছিল প্রথম। তাই মাত্র চোদ্দো বছর বয়স থেকেই বাবার অধীনে প্রশিক্ষণ শুরু হয় তাঁর। সেই থেকে সম্পূর্ণ ট্রেনিং শেষ করে মাত্র গত বছরই প্লেন ওড়ানোর লাইসেন্স পেয়েছেন জারা। লাইসেন্স পাওয়ার পর একটা গোটা বছর নিজের উড়ান দক্ষতা বাড়িয়ে তুলেছেন। দিন-রাত প্লেন উড়িয়েছেন। ভোরের আলোর সঙ্গে নিজের চোখকে সইয়েছেন, রাতের অন্ধকারেও প্লেন চালিয়েছেন। এইভাবে নিজেকে প্রস্তুত করার পর এবার তিনি বিশ্বভ্রমণের জন্য তৈরি বলে মনে করছেন। জারার প্রাক্তন স্কুল সেন্ট সুইথুন তাঁর এই ভ্রমণটি স্পনসর করছে। স্কুলের অধ্যক্ষ জানান জারা বরাবরই চৌখস। মেয়েদের উন্নত জীবন তাঁর ভাবনায়। সেই ভাবনা থেকেই এমন একটা পেশায় সে নিজেকে পারদর্শী করে তুলেছে যেখানে পুরুষদের আধিপত্য। অক্টোবরে যাত্রা শুরু করে নভেম্বরের ৪ তারিখ নাগাদ বাড়ি ফেরার কল্পনা নিয়ে আকাশে উড়বেন জারা। তাঁর যাত্রাপথে আমাদের শুভেচ্ছা রইল।
অসামান্য সামান্যা
বারামুল্লা শহরের মেয়ে সামান্যা ভাট এখন সফল রেডিও জকি। কাশ্মীর অঞ্চলের প্রথম মহিলা রেডিও জকি তিনি। মাত্র ১৯ বছর বয়সেই কাশ্মীরের নতুন রেডিও চ্যানেল রেডিও চিনার-এ জকির কাজে নিযুক্ত হয়েছেন। বরাবরই মিডিয়া ও জার্নালিজম নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে ছিল সামান্যার। সেই পথেই এগিয়ে তিনি বিভিন্ন বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপের জন্য আবেদন করেন। গ্র্যাজুয়েশন যখন প্রায় শেষের দিকে তখনই কোভিড জ্বরে আক্রান্ত হল গোটা বিশ্ব। স্কলারশিপেরও দফারফা। সবাই ঘরে বন্দি। এমন অবস্থায় বিদেশে পড়াশোনার স্বপ্ন বাতিল করতে হল সামান্যাকে। দেশেই পরবর্তী পড়াশোনার খোঁজখবর নিচ্ছিলেন তিনি। আর ঠিক তখনই নতুন রেডিও চ্যানেল ‘চিনার’ চালু হওয়ার সংবাদ পান। মোট ২৫০ জন পুরুষ ও মহিলা সেই চ্যানেলে রেডিও জকির আবেদনে সাড়া দিয়েছিলেন। তার মধ্যে থেকে আরও কয়েক জনের সঙ্গে সামান্যাকেও বেছে নেওয়া হয়। নতুন চ্যানেলে স্থায়ী পদে চাকরি পেলেন ঠিকই, তবে এটাই যে তাঁর প্রথম রেডিওতে কাজ তা নয়। এর আগে অল ইন্ডিয়া রেডিওতে কিছুদিন টেম্পোরারি পোস্টে কাজ করেছিলেন। পড়াশোনা চলাকালীনই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেন। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েই এই ইন্টারভিউতে সফল হয়েছেন বলে মনে করছেন সামান্যা। একটি অসামান্য অনুষ্ঠান শুরু করেছেন সামান্যা ভাট। অনুষ্ঠানের নাম হল্লা বোল। তাতে মেয়েদের জীবনের ইতিবাচক দিকগুলো শ্রোতাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন সামান্যা। প্রচণ্ড দুঃসময়েও সবাই যাতে ভালো থাকার রসদ খুঁজে নিতে পারেন সেই চেষ্টাই সারাক্ষণ করছেন তিনি। সামান্যার এই নতুন প্রয়াস শ্রোতাদেরও খুবই ভালো লেগেছে। এবং খুব অল্প দিনে তাঁর এই অনুষ্ঠানটি প্রাইম টাইম স্লটে চলে গিয়েছে। সামান্যার সাফল্যে কাশ্মীরের বাচ্চা-বুড়ো সকলেই আনন্দিত। মহিলাদের উন্নতির পথে এটি একটি পদক্ষেপ বলে মনে করছেন সকলেই। নিজের রাজ্যের অল্পবয়সি মেয়েদেরও অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন সামান্যা।
অবন্তিকার নতুন প্রয়াস
অবন্তিকা কাম্পানার বয়স ১৪ বছর। স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী সে। কিন্তু অন্যান্য নবম শ্রেণির ছাত্রীদের তুলনায় ভীষণ অন্যরকম তার ভাবনাচিন্তা। ছোট থেকেই নিজের তুতো ভাই বোনদের সঙ্গে মিশে দেখেছে বাচ্চারা যা দেখে, তাই নিয়েই প্রশ্ন করে। আর তা থেকেই বাচ্চাদের জন্য একটি অভিনব লার্নিং টুল বা খেলনা তৈরি করার ইচ্ছে জাগে তার মনে। ‘শিখ’ নামে এই খেলনাটিতে অবন্তিকা বাচ্চাদের বিচিত্র প্রশ্নের উত্তর ভরে দিতে শুরু করে। বাচ্চাদের জগৎ ঘিরেই তাদের জিজ্ঞাসা। তাই এই জগতকে কেন্দ্র করেই প্রশ্ন তৈরি করতে শুরু করে অবন্তিকা। বাচ্চাদের বিকাশ ও শেখার ইচ্ছে, তাদের মস্তিষ্কচালনা ইত্যাদি নিয়েও প্রচুর পড়াশোনা করেছে সে। এবং সেই পড়াশোনা থেকেই তার শিখ লার্নিং টুল-এর প্রশ্ন ও উত্তরগুলো তৈরি করেছে। কার্ডে প্রশ্ন ও উত্তর দেওয়া রয়েছে। মোট ৭২টি কার্ড। প্রতিটিতে ছ’টি করে সেকশন। এক একটি সেকশনে এক এক রকম প্রশ্ন ও তার উত্তর। কিন্তু জি কে বইয়ের তুলনায় এই লার্নিং টুল অনেকটা আলাদা। অবন্তিকার বক্তব্য খেলার ছলে যদি বাচ্চাদের প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়া যায় তাহলে তা তাদের মনে গেঁথে যায়। শুধু তাই নয়, তাদের সেই উত্তর পড়তে বা জানতে আগ্রহও বেশি থাকে। নিজের এই প্রচেষ্টার পিছনে ইয়ং অন্ত্রপ্রোনর অ্যাকাডেমির শিক্ষকদের ভূমিকা প্রচুর বলে জানিয়েছে অবন্তিকা। তার কথায়, ‘আমাকে সঠিক পথে চালনা করেছেন আমার তিন শিক্ষাগুরু, নমিতা থাপার, অতীত সাংভি এবং গরিমা জিন্দাল। আমি তো ভেবেই খালাস ছিলাম। কিন্তু সেই ভাবনাগুলোকে সঠিকভাবে চালনা করতে না পারলে আজ আমার শিখ কোনও পর্যায়ে পৌঁছত না। ফলে তাঁদের কাছে আমি চিরঋণী।’