সম্পত্তিজনিত মামলা-মোকদ্দমায় জটিলতা বৃদ্ধি। শরীর-স্বাস্থ্য দুর্বল হতে পারে। বিদ্যাশিক্ষায় বাধাবিঘ্ন। হঠকারী সিদ্ধান্তের জন্য আফশোস বাড়তে ... বিশদ
তরমুজ, কিউয়ি, আম, পেয়ারা, পেঁপে, প্লাম, স্ট্রবেরি, আঙুর, আনারস আর লিচু— এই সব রসাল ফলের উপযোগিতা তুলনাহীন। এর মধ্যে বেশিরভাগই সহজলভ্য, জানালেন সঞ্চিতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুরু করা যাক তরমুজ দিয়ে। কোভিডের চোখরাঙানির মধ্যে জেনে রাখুন তরমুজে ভিটামিন-সি-র প্রাচুর্য রয়েছে। সঙ্গে থাকা পটাসিয়াম, কপার, ভিটামিন-ডি ফাইভ এবং বিটা কেরাটিন থেকে তরমুজ আমাদের ভিটামিন-এ দেয়। এতরকম ভিটামিন থাকায় ত্বক এবং গোটা শরীরের জন্য তরমুজের জুড়ি মেলা ভার। সবচেয়ে বড় কথা ত্বক ও শরীরের জলের ভারসাম্য রাখতে তরমুজ কাজ দেয় অপূর্ব। সঞ্চিতা বলেন, তরমুজ খাওয়া তো সবসময়েই ভালো। তার সঙ্গে ত্বকে তা কাজে লাগানোর উপায়ও বললেন তিনি।
তরমুজ কাটার সময় খোসাটা একটু বেশি মোটা করে কেটে রাখুন। যাতে খানিকটা তরমুজ ওতে লেগে থাকে। এরপর খোসা থেকে সেটা খুঁচিয়ে তুলে নিন। ওই সাদা-লাল মেশানো অংশের সঙ্গে একেবারে লাল দুটো টুকরো নিয়ে পুরোটা মিক্সিতে পিষে নিন। তাতে যে রস বেরোবে, সেটাকে ছেঁকে নিয়ে আইস ট্রে-তে ভরে রাখুন। যাঁরা ঠান্ডা সহ্য করতে পারবেন, তাঁরা ওই বরফ-তরমুজের দুটো টুকরো নিয়ে মুখে ঘষে ঘষে মেখে নিন। দেখবেন ম্যাজিকের মতো কাজ হবে। সর্দি লাগার ধাত থাকলে বা রোদ্দুর থেকে এসে এটা কখনও লাগাবেন না। লাগানোর পরে সাধারণ ঠান্ডা জলে মুখ ধুয়ে ফেলুন। চ্যাটচ্যাটে ভাব চলে যাবে। আর কেউ যদি ভাবেন, এত সময় করে তরমুজ-বরফ করা মুশকিল, তাহলে দু’ টুকরো তরমুজ এমনিই ফ্রিজারে রেখে দিন। ওটাই পরে ঘষে নিন। কিছুটা কাজ তো হবেই। যতদিন তরমুজের মরশুম থাকে, এটা রোজ করতে পারলে খুব ভালো, বললেন সঞ্চিতা। ত্বকের ফাঙ্গাল ইনফেকশন, মাসল ক্র্যাম্প দূর করতেও কাজে দেয় এই ফল। ইমিউনিটি বুস্টার হিসেবেও তরমুজ খুব ভালো। তবে সারাদিন ডায়েটে তরমুজ কখনওই নয়, ডায়াবেটিক হলে তো নয়ই।
এবার আসি আমের কথায়। আম খেতে সবাই ভালোবাসেন। ত্বকের জন্য আমের উপযোগিতার কথা জানালেন বিউটিশিয়ান সঞ্চিতা। পাকা আমেও ভিটামিন-সি পাবেন। ত্বকের কোলাজেন রক্ষায় সাহায্য করে এই আম। ব্লাড সার্কুলেশন ভালো হয়। চোখের জন্য ভালো। পাকা আমের পাল্পে অতি মাত্রায় নিয়াসিন থাকে। এটি কার্ডিও ভাসকুলার হেল্থ ভালো রাখে। শুষ্ক ত্বক যাঁদের, তাঁরা পাল্প মুখে লাগানোর জন্য একটি পাত্রে একটু মধু নিন, তাতে পাল্পটা মিশিয়ে পেস্ট করে মুখে আর গলায় লাগিয়ে নিন। মনে রাখবেন, তিরিশের পর থেকে গলার যত্ন কিন্তু জরুরি একটি বিষয়। না হলে একটু বয়স না হতেই গলার ত্বক কুঁচকে যায়। আমের পাল্প মেশানো এই প্যাক ২৫ মিনিট মতো রেখে দিন, তারপর শুকিয়ে উঠলে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
গুণের অভাব নেই পেঁপেরও। খুব গুরুতর সমস্যা না থাকলে পেঁপে-কলা-পেয়ারা সবাইকে খেতে বলেন সঞ্চিতা। এগুলো এমনিতেই পেট পরিষ্কারের সহায়ক। তাই ত্বক ভালো রাখতে এই ফল কাজ দেবে, সন্দেহ নেই। কাঁচা পেঁপে আবার উল্টো ফল দেয়। তাই পাকা পেঁপে খেতে হবে। পাকা পেঁপে-তেও ভিটামিন -সি, পটাসিয়াম ও ক্যালসিয়াম পাবেন। ফলে মহিলাদের জন্য তা বিশেষভাবে উপযোগী। ডায়েটে পাকা পেঁপে তাই খুব ভালো। ইমিউনিটি বাড়ায়। পেঁপে-কলা-পেয়ারা তিনটে চটকে টি স্পুনে অল্প করে নিয়ে মধু আর টক দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে নিন। তারপর মুখে লাগান। শুষ্ক ত্বকের জন্য এটা ভালো। সেনসিটিভ বা অয়েলি স্কিনের ক্ষেত্রে এই প্যাকে ওটসের গুঁড়ো মিশিয়ে নিন। এর সঙ্গে হলুদ অথবা চন্দনবাটা দিতে পারেন যদি ত্বকে কালো ছোপ থাকে। এটাও ২৫ মিনিট রেখে ঠান্ডা জলে ধুয়ে ফেলুন।
এরপর আসা যাক প্লামসের কথায়। প্লামস একটু দামি ফল। ব্রেস্ট ক্যান্সার রুখতে প্লামস উপযোগী। এর সঙ্গে কাজে লাগান আনারস। ফ্যাট ঝরাতে আনারস উপযোগী। তবে আনারস এমন একটা ফল, যা অন্য ফলের সঙ্গে খাবেন না। এতে ফাইবার ভালো আছে, পটাসিয়াম আছে, কার্বোহাইড্রেট একদম কম, ভিটামিন-এ এবং সি এবং আয়রন থাকে। তবে গর্ভবতী মহিলাদের এই ফল খেতে বারণই করা হয়। আনারস মুখে লাগানোর চেয়ে খাওয়াই ভালো। লিচু এমনিতে ভালো। তবে ডায়াবেটিক রুগীরা খেতে পারেন না। আর অনেকে হজমও করতে পারেন না। সহজপাচ্য নয়।
আঙুর লাল বা সবুজ, যা-ই হোক শুকিয়ে খেলে (বেরি) ফাইবার প্রচুর পাবেন। আছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। আঙুর খেলে শরীরের কোষ উজ্জীবিত থাকে। বয়স হয়ে যাওয়া বা বার্ধক্য আটকাতে পারি না আমরা। কিন্তু সেটার প্রক্রিয়াটা কিছুটা শ্লথ হয় এই সব ফল খেলে বা স্কিনে প্রয়োগ করলে।
স্ট্রবেরি আর কিউই ভালো কোয়ালিটির পেলে খান। স্ট্রবেরি দিয়ে ঘরোয়া লিপ বাম তৈরি করতে পারেন। বাইরে থেকে কেনা জিনিসের থেকে ন্যাচারাল আইটেম কাজে দেবে অনেক বেশি, জানালেন সঞ্চিতা। সাধারণ ট্রান্সপারেন্ট অ্যালোভেরা জেল-এর মধ্যে স্ট্রবেরির রস ছেঁকে নিয়ে মেশান। তার মধ্যে একটু এসেনশিয়াল অয়েল দিয়ে মিশিয়ে ভালো করে মিক্সিতে ফেটিয়ে ফ্রিজে রেখে দিন। এটি ঠোঁটের জন্য খুব ভালো। লাগাতে পারেন কনুইতেও। ত্বকের যেখানে যেখানে বেশি খসখসে হয়ে গিয়েছে মনে হবে, সেখানেই দিতে পারেন এই মিক্স।