করোনাকালে সতর্কতা মেনেই শুরু হয়েছে বিয়ে। কনে সাজানোর সময় বেশ কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হচ্ছে। মেকআপ আর্টিস্ট অনিরুদ্ধ চাকলাদার-এর কাছে তার হদিশ জানলেন অন্বেষা দত্ত। 

সেই কবে থেকে মুখ ঢেকেছে মাস্কে। তাহলে মুখসজ্জার কী হবে? এমনি দিনে কেতাদুরস্ত ম্যাচিং মাস্ক পরে না হয় বাজিমাত করলেন মেয়েরা। কিন্তু কনের সাজ? সেখানে মাস্ক থাকলে যে সবই মাটি! কথা হচ্ছিল সেলিব্রিটি মেকআপ শিল্পী অনিরুদ্ধ চাকলাদারের সঙ্গে। তিনি জানালেন, আজকাল খুব কম কনেই মাস্ক পরছেন। ‘মাস্কে তাঁর সাজের দফারফা হয়ে যাবে, হয়তো সেটা ভেবেই! অনেক কনে আবার ম্যাচিং স্টাইলিশ মাস্ক রাখছেন সঙ্গে। কিন্তু পরছেন না! তবে কনের আশপাশে সবাই মাস্ক পরছেন’, বললেন তিনি।
করোনার চোখরাঙানি কিছুটা দূরে ঠেলে এত দিনে বিয়ের মরশুম জমতে শুরু করেছে। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চে বিয়ে ধরে অনেকেই এগচ্ছেন, বললেন এই মেকআপ আর্টিস্ট। সেই মতোই তাঁর কাছে বুকিংও আসছে। অনেকেই আবার আগামী বছরের শেষ দিকে বিয়ের লগ্ন খুঁজে বুকিং করছেন। অনিরুদ্ধর কথায়, ‘প্রথমে এই বছরের ডিসেম্বর বা আগামী বছরের গোড়ায় বিয়ের কথা ভেবে থাকলেও তাঁরা সেটা পিছিয়ে দিয়েছেন আগামী বছরের শেষ দিকে। সবরকম ঝুঁকি এড়িয়ে যাতে ধীরেসুস্থে শুভকাজ সম্পন্ন করা যায়।’ তাঁর কাছে কনে সাজানোর জন্য যে ধরনের বুকিং আসে, তার অধিকাংশই এনআরআই। বিদেশে কাজ করেন এমন অনেক মহিলা এখন দেশে ফিরতেই পারছেন না। ফলে মা-বাবা এ শহরে থাকলেও বিয়ে নিয়ে এগতে পারছেন না। সেসব বিয়েই তোলা থাকছে আগামী বছরের শেষ দিকের জন্য। 
সাজানোর কথা যদি বলেন, তাহলে এবার সেসব নিয়ে খুব পরীক্ষানিরীক্ষার দিকে যেতে চাইছেন না কেউই। অনিরুদ্ধর মতে, ‘বছরটা মানে মানে শেষ হোক, সকলে হয়তো এটাই ভাবছেন।’ 
করোনা আবহে কনে সাজানোর ক্ষেত্রে এখন অনিরুদ্ধ শুধু কলকাতার সেলিমপুরে তাঁর স্টুডিও থেকেই কাজ করছেন। ফার্ন রোডে তাঁর বাড়িতে সাজানোর জায়গাটি আপাতত বন্ধ। মেকআপের সময়েও সাহায্য করার জন্য তাঁর সঙ্গে রাখছেন মাত্র একজনকে। এছাড়া থাকছেন একজন ফোটোগ্রাফার। 
সাজানোর সময় তাঁরা মাথায় রাখছেন কিছু বিষয়। নিজেরা মাস্ক সবসময় পরে থাকছেন। কনেকে মেকআপ করানোর সময় মাস্ক পরানোর কোনও উপায় নেই। তাহলে তো কাজটাই করা যাবে না। তাই একমাত্র কনেই মাস্ক ছাড়া থাকছেন। তার জন্য সাজানোর ক্ষেত্রে কোনও আপস করা হচ্ছে না। সুরক্ষা মেনে প্রত্যেক কনের জন্য আলাদা করে ব্রাশ সেট রাখছেন। ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে রাখছেন আইশ্যাডো, লাইনার, মাস্কারা আর ব্লাশার ব্রাশ। কালার প্যালেটের ক্ষেত্রেও তাই। একটা সেট ব্যবহার করার পরেই সেগুলো স্যানিটাইজেশনে চলে যাচ্ছে। অন্য কনের জন্য আবার আনা হচ্ছে অন্য ব্রাশের সেট। অনিরুদ্ধ বললেন, আগেও একটা ফাউন্ডেশন ব্রাশ অন্যজনের ক্ষেত্রে তিনি ব্যবহার করতেন না। কারণ তাতে চামড়ায় সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। আর এখন করোনা আতঙ্কে একটু বেশিই খেয়াল রাখা হচ্ছে এগুলোর দিকে। কনেকে লিপস্টিক কিংবা মাস্কারা নিজেরটাই ব্যবহার করতে বলা হচ্ছে। আই পেন্সিল হয়তো একবার ব্যবহারের পরে শার্পেন ও স্যানিটাইজ করে তারপর ব্যবহার করা হচ্ছে। এই সব দিকে খেয়াল রাখতে গিয়ে মেকআপে এখন আগের তুলনায় একটু বেশিই সময়ও লাগছে বলে জানালেন তিনি। তবে সময় ব্যয় করে যদি সুস্থতার আশ্বাস মেলে, তাতে ক্ষতি কী!