কর্মে সাফল্য ও সুনাম বৃদ্ধি। উকিল, মৃৎশিল্পীদের শুভ। সংক্রমণ থেকে শারীরিক অসুস্থতা হতে পারে। আর্থিক ... বিশদ
ভারতকে এজন্য বাড়তি সতর্কতা অবশ্যই নিতে হবে। যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলা করার যথেষ্ট ক্ষমতা ভারতের আছে। সূর্যের মতো এই সত্যটি সবচেয়ে ভালো জানে একাত্তরের পরাজিত নায়ক পাকিস্তান। তবে, মানবিক পৃথিবীর বেশি উদ্বেগ অন্য একটি বিষয়ে—তালিবান জমানায় আফগান নারীর ভবিষ্যৎ। তালিবান কাবুল দখলের পরই আফগান বংশোদ্ভব আমেরিকান লেখক খালেদ হোসেইনি এক টিভি সাক্ষাৎকারে বলেন, তালিবান শুধরে যাওয়ার যে দাবি করছে তাতে আমার গভীর সন্দেহ রয়েছে। অন্য আফগানদের দুশ্চিন্তাটাই আমার মনে তোলপাড় হচ্ছে। শুধু মুখের কথা নয়, সংশোধন বা পরিবর্তনটা তালিবানকে বাস্তবে দেখাতে হবে। এই মুহূর্তে সারা পৃথিবীর নজর তালিবানের উপর। তাই তারা মানবাধিকার এবং মেয়েদের অধিকার দেওয়ার দাবিটা যে করবে, সেটাই স্বাভাবিক। খেয়াল করুন, তারা ‘ইসলামি আইনের চৌহদ্দিতেই’ এই অধিকার মঞ্জুরের কথা বলছে। খেলাটা যে এখানেই সেটা খেয়াল করতে বলেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন লেখক খালেদ। তিনি এও মনে করিয়ে দিয়েছেন, তালিবানের প্রথম জমানায় সম্ভবত আফগানিস্তানই হয়ে উঠেছিল মেয়েদের জন্য এই গ্রহের নিকৃষ্টতম স্থান। নয়া তালিবান জমানায় নারীকণ্ঠ নীরব হয়ে যাবে বলেই আশঙ্কা হচ্ছে তাঁর। হোসেইনি আরও বলেন, পূর্ববর্তী আফগানিস্তান সফরে সাধারণ মানুষ আমাকে বলেছিলেন যে আমেরিকা কাবুলত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলে রাষ্ট্র হিসেবে আফগানিস্তান তালিবানের হাত থেকে নাগরিকদের রক্ষা করতে পারবে না। তালিবান মাত্র এগারো দিনে যেভাবে গোটা আফগানিস্তান জবরদখল করল এবং দলে দলে নিরীহ আতঙ্কিত নরনারী মাতৃভূমিত্যাগে মরিয়া হলেন তা এক মর্মান্তিক অধ্যায়। তাঁর আবেদন, হঠাৎ ছিন্নমূল হয়ে পড়া অসহায় মানুষগুলির পাশে মানবিক মুখ নিয়ে দাঁড়াক সব দেশ এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলি।
তালিবানের শুধরে যাওয়ার অঙ্গীকারকে ‘পলিটিকালি কারেক্ট স্টেটমেন্ট’ বলে কটাক্ষ করেছেন লেখিকা রশিদা ভগত। নারীর অধিকার নিয়ে তাঁর সাহসী কাজকর্মও সর্বত্র প্রশংসিত। তিনি বলেছেন, মানুষও বোকা নয়, বোঝে কোন কথার কী মানে। ২০০৫ সালে তালিবান একটি পর্যুদস্ত শক্তি। রশিদা সেইসময় আফগানিস্তান সফর করেন। বিশেষ করে ঘুরে দেখেন কাবুল শহর এবং কাবুল থেকে বামিয়ানের মধ্যবর্তী বহু গ্রাম। বাগ-ই-জনানা (মেয়েদের পার্ক) এবং চিকেন স্ট্রিটে (কাবুলের বিখ্যাত শপিং এরিয়া) নানা বয়সি উচ্ছ্বল মেয়েদের দেখে তিনি আশ্বস্ত বোধ করেন। এতদিন তাঁর মনে সংশয় ছিল। এখানে এসে তা দূর হল। বুঝলেন, আফগান মেয়েরা অচেনা মানুষের সঙ্গে মিশতে ভয় পান না। রশিদা বলেছেন তাঁর এক অবাক অভিজ্ঞতার কথা: টপ ও জিনসে সজ্জিত তরুণীরা এসে আমাকে বলছেন, শাহরুখ খান আর হৃত্বিক রোশনের ফোন নম্বর দিন না প্লিজ! বয়স্ক বিবাহিতাদের আর্জি, জন্মনিয়ন্ত্রণের পিল পাঠিয়ে ভারতকে বলুন আমাদের পাশে দাঁড়াতে। বাচ্চা পেটে ধরতে ধরতে ক্লান্ত আমরা। একটু বিশ্রাম চাই। পরিস্থিতি এতটাই আশাপ্রদ যে সেখানে গিয়ে শুনেছেন আর এক অবিশ্বাস্য কাহিনি: তিন আফগান মহিলা ডাক্তার একদশক যাবৎ জার্মানিতে সেটেলড। ২০০৫-এ তাঁরা কাবুলের পরিবেশ দেখে আবেগবিহ্বল হয়ে পড়লেন। সিদ্ধান্ত নিলেন, আর পরদেশ-পরভুঁই নয়, পাকাপাকিভাবে সাতপুরুষের ভিটেতেই থেকে যাবেন, এখানকার মেয়েদের সেবা করেই কাটিয়ে দেবেন জীবন। যেমনি ভাবা তেমনই কাজ—বাগ-ই-জনানায় দাঁড়িয়ে হাসতে হাসতে ছিঁড়ে ফেললেন পাসপোর্টগুলি! শাহ জমানায় মেয়েরা তো মিশতেন, এমনকী বাগ-ই-জনানায় হলে সাক্ষাৎ করতেন এলোচুলেই। কিন্তু রাশিয়ার অনুপ্রবেশ এবং ১৯৯৫ সালে তালিবানের রক্তচক্ষুর কবলে পড়ার পর মেয়েরা গৃহবন্দি হয়ে পড়েন। বাগ-ই-জনানা ভূতুড়ে বাগানে রূপান্তরিত হয়।
মহিলাদের অধিকার মঞ্জুরি নিয়ে তালিবান নেতারা যখন লম্বা-চওড়া বুলি আওড়াচ্ছে, তখন এক বিদেশি মহিলা সাংবাদিক প্রশ্ন করলেন, নির্বাচিত মহিলা জনপ্রতিনিধিদের কি সরকারে শামিল করা হবে? সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওয় দেখা গেল, উদ্দিষ্ট তালিবান নেতা খানিক বিকট হেসে নিয়ে ফতোয়া দিল, ‘স্টপ দ্য ভিডিও’! ১৯ সেপ্টেম্বর প্রচারিত খবরে তো এরই প্রতিধ্বনি: কাবুলের স্থানীয় প্রশাসনিক দপ্তরে মহিলা কর্মীদের কাজে যোগদানে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। গত শুক্রবার ছেলেদের স্কুলগুলি খুলে দেওয়া হলেও মেয়েদের ব্যাপারে চুপ! এমনকী, নারীকল্যাণ মন্ত্রকটাই তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তালিবান সরকার। পশ্চিমি মহিলা সাংবাদিকরাও সেখানে (ইসলামি কায়দায়) মাথা ঢেকেঢুকে খবর সংগ্রহ করার ঝক্কি পোহাচ্ছিলেন। মূলত আফগান মেয়েদের দুর্ভাগ্যের কথা জানাচ্ছিলেন আমাদের। কিন্তু আমেরিকা পাততাড়ি গোটানোর পর সেই সাহসিনীরাও দেশে ফিরে যাচ্ছেন। কাবুল এয়ারপোর্টে পাহারায় নিযুক্ত কিছু ব্রিটিশ সেনা জওয়ানের কাছে শোনা গিয়েছে, কীভাবে কিছু আফগান মহিলা ছুটে এসেছিলেন তাঁদের পাশে থাকার কাতর আর্জি নিয়ে।
আফগান মানবাধিকার কর্মী মহবুবা সিরাজ মন্তব্য করেছেন, সারা পৃথিবী আমাদের বিচ্ছিন্ন করে দিল। আমরা পড়ে রইলাম দেশীয় নেকড়ের দলের মুখে। ১৯৯০ দশকের মতো তালিবানের হাতে পড়ায় প্রধানত মেয়েদের জীবন ফের দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। চরম দুর্ভাগ্যের শিকার হবেন আফগান শিল্পী, গায়ক, রাজনীতিক, বণিক শ্রেণিও। ।
যারা তাদের প্রেমে ডগমগ এই প্রশ্নটা কেন করছে না তালিবানকে: মেয়েদের কিছু অধিকার মঞ্জুর করার তুমি কে হে? মেয়েরা কেন তোমাদের কিছু অধিকার মঞ্জুর করার আসনে যাবেন না? মেয়েরা এটুকুই বলবেন, বাছা, জাস্ট পথ ছাড়ো। আমার কাজ আমাকে করতে দাও। নিজের চরকায় তেল দাও নিজে। আমার বাড়তি তেল নেই যে তোমাকে দেব এবং তুমি মহার্ঘ তেলের অপচয় করো আমার পিছনে, সেটাও আমি চাই না। চীন এবং রাশিয়া এই কাজটা করলে আফগান নারী তো বটেই সারা দুনিয়ার মেয়েরা তাদের ধন্য ধন্য করবে। তালিবানের ধৃষ্টতা তাতে কমতে বাধ্য। তার জন্য ছোট্ট একটা কাজ অবশ্য করতে হবে তাদের—অস্ত্র ব্যবসার নিজ নিজ আদিম কৌশলে আপাতত রাশ টানতে রাজি থাকতে হবে। রাশিয়া এবং চীন কি তাদের মেয়েদের এই ভয়ানক পরিণতি দেখতে চায়? তা তো নয়। বিশেষ করে শিক্ষা, খেলা এবং কাজের দুনিয়া সেই সাক্ষ্যই দেয়। সদ্যসমাপ্ত টোকিও ওলিম্পিকসেই দেখুন না: লিঙ্গবৈষম্য প্রায় দূর হয়ে গিয়েছে। এবার পুরুষ প্রতিযোগীর (৫,৯৮২) প্রায় সমান সংখ্যক ছিলেন মহিলারা (৫,৪৯৪)। ওলিম্পিকসের ইতিহাসে এটাই লোয়েস্ট জেন্ডার গ্যাপ। চীন মোট ৪৩১ জন অ্যাথলিটকে পাঠিয়েছিল, তাঁদের মধ্যে ২৯৮ জন মেয়ে। প্রতিযোগীদের নারী-পুরুষের অনুপাতে চীনেরটাই ছিল এবারের সেরা। লেবার পার্টিসিপেশন রেটেও চীনা মহিলারা (৬০.৬) পুরুষদের (৬৮.২) ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছেন। সারা পৃথিবীতে যত নারী নিজ যোগ্যতায় বিলিয়নেয়ার হয়েছেন তাঁদের ৬১ শতাংশ চীনা। আরও বিস্ময়কর হল, টপ টেনের মধ্যে ন’জন জি জিন পিংয়ের দেশের কন্যা। রাশিয়াতেও নানা বয়সিরা মেয়েরা বহু বছর যাবৎ বিশেষ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। নারী স্বাধীনতা ছাড়া এ কি কল্পনা করা যায়? এটাই যখন বাস্তব, তখন চীন-রাশিয়ারই অস্ত্রে বলীয়ান হয়ে তালিবান এই যে মানবাধিকারকে লাগাতার বলাৎকার করে যাচ্ছে, তাতে সিলমোহর দিচ্ছে কোন নীতিতে এই দুই ‘মহান’ রাষ্ট্র? শুধু চীন, রাশিয়ার ‘অর্ধেক আকাশ’ মুক্ত থাকলেই হল, তাই তো! তাদের নয়া শিকার পাকিস্তান। তাকে খুশি করার স্বার্থে ভারতের সর্বনাশ করার নীতি আঁকড়ে শান্তি ফিরবে আফগান ভূমিতে? এ কোন মূর্খামি!