পুজোপাঠে ও সাধুসঙ্গে মানসিক শান্তিলাভ। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর কর্মোন্নতি ও উপার্জন বৃদ্ধি। ... বিশদ
এগুলি তো নেতিবাচক দিক। তবে ইতিবাচকটি কি? অর্থাৎ কাকে নিয়ে থাকব, কার আশ্রয়ে থাকব, কে আমাকে এই দোলাচল মনোবৃত্তি থেকে মুক্তি দেবে? জগতে এমন কিছু আছে কি? আছে, তিনি হলেন মন্ত্র—মন্ত্র স্বয়ম্ভূ স্বয়ংক্রিয় স্বয়ংসিদ্ধ স্বয়ং ঈশ্বরের প্রতিমূর্ত্তি, যা অনাদিকাল থেকে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে বিরাজিত। যাঁর আশ্রয়ে আমার পূর্ব্বে লক্ষকোটি জীব আশ্রয়ে পেয়ে গেছে এবং আমার পরেও পাবে। আমি সেই মন্ত্রের নিশ্চিত আশ্রয়ে যাই না কেন। ঈশ্বর বা ব্রহ্মকে দেখতে জানতে বা শুনতে পাই না। কিন্তু বেদ ও তন্ত্রের কৃপায় মন্ত্র আমাদের কাছে এসেছে। আমরা সেই মন্ত্রের আশ্রয়ে নিজেদের সমর্পণ করি। ব্যক্তি নয়, দর্শন নয়, মতবাদ নয়, শুষ্ক ধর্ম্ম নয়—এদের কারও আশ্রয় নয়। এরা কেউ তোমাকে অন্তিমে রক্ষা করতে সমর্থ হবে না। সমর্থ হবে একমাত্র মন্ত্র।
অনাদিকাল ধরে মন্ত্র জগতে বিরাজিত, অনন্তকাল পর্যন্ত মন্ত্রই একমাত্র বিরাজিত থাকবে। এস বন্ধু, আমরা সেই পতিতপাবন তারকব্রহ্ম মহামন্ত্রের আশ্রয় গ্রহণ করি। তাঁরই সেবায় নিত্য রত হই, আমাদের সকল প্রয়াস তাঁকে আশ্রয় করেই গড়ে উঠুক। আমাদের সকল কৃতকার্যতা তাঁরই সেবায় নিরিখে নির্ণীত হ’ক।
সুখ বলতে অনুভব কর মন্ত্র, লোকসান যখন হবে তখন মন্ত্রেরই লীলা বলে বোধ কর। মন্ত্রই জীবজগতে নিত্যক্রিয়াশীল—এটি উপলব্ধি করার জন্য সর্ব্বদা প্রয়াসী হও। সংকল্প থেকে সৃষ্টি। ব্রহ্মের সংকল্প হল মন্ত্র স্বয়ং। সুতরাং মন্ত্রকে ছেড়ে আমি ভিন্ন সঙ্কল্পের পিছনে ছুটে দ্বিচারিণী হব কেন? মন্ত্রের এই নিত্য স্মরণ-মননের নাম জপসাধনা। সর্বত্র মন্ত্রের নিত্য উপস্থিতি প্রত্যক্ষ করাই হল মন্ত্রদর্শন। সহস্র আনুকূল্য প্রতিকূলতার মধ্যে মন্ত্রের মহিমময় বোধে আস্থা এবং প্রতিষ্ঠার নাম মন্ত্রসিদ্ধি। মন্ত্রের জীবন্ত উপস্থিতির দিকে নজর না-রেখে মন্ত্রের যান্ত্রিক আবৃত্তি দ্বারা জপসাধনা হয় না, মন্ত্রকে সর্ব্বত্র সর্ব্বভূতে প্রত্যক্ষ ক্রিয়াশীল দেখা যায় না, মন্ত্রদর্শন হয় না। মন্ত্রের একনিষ্ঠ সাধনাই হল সর্ব্বসুখ সর্ব্বপ্রাপ্তি সর্ব্বসিদ্ধির মূল। সাধকের সংকল্প শুধু একটি মাত্রই—আমি যেন সর্ব্বদা মন্ত্রনিষ্ঠ থাকতে পারি। বাকি সকল সংকল্প সাধক সমূলে বিসর্জন দেন। মন্ত্র তাঁকে যেখানে নিয়ে যায় সেখানেই তিনি নির্ভয়ে নিঃসংকোচে মন্ত্রের হাত ধরে যাবেন। ‘ইন্দ্রিয়গ্রামকে বাহিরের শাসনে পঙ্গু বা অকর্ম্মণ্য, অক্ষম বা অব্যবহৃত বা অবমেলা-ক্লিষ্ট রাখিতে পারিলেই কাজ হইল না, তাহার চাইতে শতগুণ অধিক প্রয়োজনীয় হইতেছে মনকে নির্ম্মল, নিষ্কলুষ, নির্ব্বিকার, নির্লিপ্ত এবং অচঞ্চল রাখা।