পুজোপাঠে ও সাধুসঙ্গে মানসিক শান্তিলাভ। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর কর্মোন্নতি ও উপার্জন বৃদ্ধি। ... বিশদ
তদাগমবশাৎ সাধ্যং গুরুবক্তান্ মহাধিয়া।
শিবশক্তিকরাবেশাৎ গুরোঃ শিষ্যপ্রবোধকঃ।।
যেমন ভস্মাচ্ছন্ন অগ্নি মুখপ্রেরিত বায়ুর প্রভাবে প্রজ্জ্বলিত হইয়া উঠে, যেমন ঠিকসময়ে বীজের বপন সেচন প্রভৃতি সম্পন্ন হইলে উহা অঙ্কুর ও পল্লবাদিতে অভিব্যক্ত হয়, সেইরূপ গুরু-উপদিষ্ট ক্রিয়া দ্বারা প্রাতিভজ্ঞান অভিব্যক্ত হয়। এই অনুত্তর মহাজ্ঞান হইতে শ্রেষ্ঠ, কারণ ইহা বিবেক হইতে উৎপন্ন হয়। অতীন্দ্রিয় ও অপ্রমেয় চৈতন্য তত্ত্ব যখন বিচারভূমিতে অবতীর্ণ হইয়া আত্মবোধরূপে প্রকট হয়, তখন উহার নাম হয় বিবেক। ঐ অবস্থাতে জীব, ঈশ্বর, মায়াদি পাশ এই সকলের জ্ঞান আপনাআপনি উদিত হয় ইহাই প্রাতিভজ্ঞান। ইহা সর্বথা অভ্রান্ত বলিয়া ইহাকে সম্যক্জ্ঞান বা মহাজ্ঞান বলা হয়। ঐ সময় সর্বপ্রকার পরিচ্ছন্নজ্ঞান অর্থাৎ ইন্দ্রিয়জন্য ও অন্তঃকরণ জন্য যাবতীয় খণ্ডজ্ঞান অন্যের অধীনতা ত্যাগ করিয়া ঐ মহাপ্রকাশে বিশ্রান্তি লাভ করে অর্থাৎ উহাতে লীন হইয়া যায়। যেমন সূর্যের কিরণে দীপের প্রকাশ নিষ্প্রভ হয় সেইপ্রকার প্রাতিভজ্ঞানের উদয় হইলে যাবতীয় খণ্ডজ্ঞান নিষ্প্রভ হইয়া যায়।
বিবেক উৎপন্ন হইলে ইন্দ্রিয়গোচর শব্দাদিবিষয়ে দূরশ্রবণাদি বিচিত্রজ্ঞান উৎপন্ন হয়। তখন দেশ, কাল এবং আকারগত ব্যবধান সূক্ষতাদি থাকা সত্ত্বেও জ্ঞানের উপর উহাদের কোনপ্রকার প্রভাব পড়ে না। যোগশাস্ত্রে যে সকল বিভূতির বর্ণনা পাওয়া যায় সেগুলি বিবেকবান্ পুরুষ প্রাপ্ত হন অর্থাৎ শক্তিজ্ঞান লাভ হইলে উহার প্রভাবে তন্ত্রোক্ত ক্রিয়াকর্ম, ষট্চক্র, স্বরসাধন, মন্ত্রবেধ, পরকায়-পরকায় প্রবেশ প্রবেশ প্রভৃতি সকল বিষয়ে অধিকার জন্মে। একই ক্ষণে এই সকল সম্পৎ আয়ও হয়।
বিবেকের বুদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যাবতীয় ভাবের প্রতি চিত্তে বৈরাগ্য উৎপন্ন হয় ও বিকাশ-প্রাপ্ত হয়। চরম স্থিতিতে পরম চিদ্ভাবে বিশ্রান্তি ঘটে। তখন কোন সিদ্ধির প্রতি আসক্তি থাকে না—তখন মনে হয় ঐ সব ঐশ্বর্য নিয়া খেলা শিশুর পুতুল খেলামাত্র, ইহা স্বপ্ন বা ইন্দ্রজালের ন্যায় অলীক।