পুজোপাঠে ও সাধুসঙ্গে মানসিক শান্তিলাভ। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর কর্মোন্নতি ও উপার্জন বৃদ্ধি। ... বিশদ
পরচর্চা আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় নির্দোষ, কিন্তু তা সমাজের মহা ক্ষতিসাধন করে, বিশেষতঃ যারা ঐগুলিকে প্রশ্রয় দেয়। যারা অপরের দোষ দেখতে অভ্যস্ত তারা ঐসব দোষের কবলে পড়ে। কারণ প্রত্যেক মানুষের মনে ভাল-মন্দ সংস্কাররাশি এবং প্রবণতা জমা রয়েছে, এখন কেউ যদি অপর একজনের কোন নির্দিষ্ট দোষের নিন্দা শুরু করে তবে সে যতই নিন্দা করতে থাকবে ততই তার অবচেতন মনের সুপ্ত প্রবণতাগুলি ভেসে উঠবে এবং সক্রিয় হবে। ঠিক তেমনিভাবে যদি কেউ অপরের ভাল দেখা অভ্যাস করে তাহলে তার ভিতরের শুভ সংস্কাররাশি জেগে উঠবে এবং তার চরিত্রকে দৃঢ় করবে। সুতরাং স্বার্থে বা পরার্থে, সাধকের পরনিন্দা, পরচর্চা এবং অপরের দোষ দেখা বর্জন করতে হবে। শ্রীশ্রীসারদাদেবীর শেষ উপদেশটি কতই না মর্মস্পর্শী: ‘‘যদি শান্তি পেতে চাও, কারো দোষ দেখো না। জগৎকে আপনার করতে শেখ। কেউ পর নয়; এ জগতের সবাই তোমার নিজের।’’
ভারতে একটা প্রচলিত কথা আছে যে, মাছি ময়লাতেও বসে, মধুতেও বসে, কিন্তু মৌমাছি কেবল মধুর সন্ধান করে, ময়লার দিকে কখনো যায় না। মৌমাছির মতো হতে হবে। তাই কোন ব্রহ্মচারীকে দীক্ষিত হতে গেলে এই শপথবাক্য উচ্চারণ করতে হয়: ‘‘আমি যেন মৌমাছির দৃষ্টান্ত অনুসরণ করি।’’ আমরা যতই অধ্যাত্মজীবনে অগ্রসর হই, ততই আমরা অপরের মধ্যে ভাল দেখতে শিখি এবং সকলের প্রতি ততই আমাদের ভালবাসা, সহানুভূতি, অনুকম্পা বাড়তে থাকে। মানবজাতির প্রতি প্রকৃত মহাপুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে—তাঁরা বিন্দুতে সিন্ধু দেখেন। কারো ভিতর সামান্য ভাল গুণ থাকলে তাঁরা সেটাকে বড় করে দেখেন। এর মানে এ নয় যে তাঁরা আশাবাদী; তাঁরা দেখেন ভবিষ্যৎ-বিকাশের সম্ভাবনা এবং সেটাকে জোরদার করে তুলতে উৎসাহ দেন। তাঁরা জানেন যে ভগবানের কৃপায় মানুষ মুহূর্তের মধ্যে সমস্ত পাপ ও বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে যেতে পারে।
স্বামী ব্রহ্মানন্দজী বলতেন: ‘‘রাশীকৃত তূলা একটা দেশলাই-এর কাঠিতে পুড়ে ছাই হয়ে যায়; তেমনি পর্বত-প্রমাণ পাপরাশি ভগবানের এক কৃপাকটাক্ষে মুছে যায়। আজকের যে পাপী কাল হয়তো সে মহাপুরুষ।’’