পুজোপাঠে ও সাধুসঙ্গে মানসিক শান্তিলাভ। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর কর্মোন্নতি ও উপার্জন বৃদ্ধি। ... বিশদ
শাস্ত্র অধ্যয়নের জন্য শ্রীরামকৃষ্ণ বেছে নিয়েছিলেন একটি অসাধারণ পদ্ধতি। সে-পদ্ধতিটির শ্রেষ্ঠতা ব্যাখ্যা করে তিনি বলতেন: ‘‘অনেকে মনে করে, বই না পড়ে বুঝি জ্ঞান হয় না, বিদ্যা হয় না। কিন্তু পড়ার চেয়ে শোনা ভাল, শোনার চেয়ে দেখা ভাল, কাশীর বিষয় পড়া, কাশীর বিষয় শোনা আর কাশীদর্শন অনেক তফাত।’’ বিদ্যার উপকরণ সংগ্রহের জন্য তিনি বেছে নিয়েছিলেন শ্রুতিমাধ্যম, কিন্তু সংগৃহীত উপকরণ স্বায়ত্তীকরণের উপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন সবচেয়ে বেশি। তিনি বলতেন: ‘‘দেখ, শুধু পড়াশুনাতে কিছু হয় না। বাজনার বোল লোকে মুখস্থ বেশ বলতে পারে, হাতে আনা বড় শক্ত।’’ শ্রীরামকৃষ্ণের এই ভাবনার মধ্যে আমরা শুনতে পাই বৃদ্ধ মনু মহারাজের উক্তির প্রতিধ্বনি। তিনি বলেছিলেন: ‘‘অজ্ঞেভ্যো গ্রন্থিনঃ শ্রেষ্ঠা গ্রন্থিভ্যো ধারিণো বরাঃ।/ ধারিভ্যো জ্ঞানিনঃ শ্রেষ্ঠা জ্ঞানিভ্যো ব্যবসায়িনঃ।।’’ অর্থাৎ অজ্ঞ অপেক্ষা গ্রন্থের পাঠক শ্রেষ্ঠ। শুধুমাত্র শব্দার্থ পাঠকের চেয়ে শ্রেষ্ঠ তিনি, যিনি পঠিত বিষয় ধারণা করেছেন। তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ তিনি যাঁর জ্ঞান হয়েছে। এবং এঁদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ তিনিই, যিনি জ্ঞানানুযায়ী কর্মানুষ্ঠান করেছেন। শ্রীরামকৃষ্ণ নিজে শাস্ত্রের মর্ম অনুসন্ধান করেছিলেন এই পদ্ধতিতে। শাস্ত্রের ব্যবহার সম্বন্ধে শ্রীরামকৃষ্ণের বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট হয়ে উঠেছে তাঁর একটি উক্তিতে। তিনি বলেছেন: ‘‘শাস্ত্রের দুই রকম অর্থ—শব্দার্থ ও মর্মার্থ। মর্মার্থটুকু বলতে হয়; যে-অর্থ ঈশ্বরের বাণীর সঙ্গে মিলে। চিঠির কথা, আর যে-ব্যক্তি চিঠি লিখেছে তার মুখের কথা অনেক তফাত। শাস্ত্র হচ্ছে চিঠির কথা; ঈশ্বরের বাণী মুখের কথা। আমি মার মুখের কথার সঙ্গে না মিললে কিছুই লই না।’’ শ্রীরামকৃষ্ণের ছিল বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি। সর্বপ্রকারে যাচাই করে তবেই তিনি বস্তুর সত্যতা গ্রহণ করতেন। কোন শাস্ত্রের মর্মার্থ বুদ্ধির সূক্ষ্মতা দিয়ে যাচাই করেও তিনি নিশ্চিত হতেন না। তিনি ঈশ্বরের, জগন্মাতার বাণীর সঙ্গে মিলিয়ে নিয়ে কোন বস্তু বা তত্ত্বের অভ্রান্ততা নিরূপণ করতেন।