সব কর্মেই অর্থকড়ি উপার্জন বাড়বে। কর্মের পরিবেশে জটিলতা। মানসিক উত্তেজনা কমাতে চেষ্টা করুন। ... বিশদ
শান্তিপুর শহরের লক্ষ্মীতলা মুচিপাড়া এলাকার বাসিন্দা অসীম দেবনাথ। তাঁর বাবা সত্তরোর্ধ্ব অশোক দেবনাথ দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে অসুস্থ। জানা গিয়েছে, ব্রেন স্ট্রোকের পর থেকে মাঝেমধ্যেই অশোকবাবুকে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক পরীক্ষা করাতে হতো। গত ৩০ মার্চ তাঁকে বেশ কয়েক ধরনের রক্ত পরীক্ষার পরামর্শ দেন ডাক্তার। সেইমতো অশোকবাবুর ব্লাড স্যাম্পল সংগ্রহ করতে তাঁদের বাড়িতে আসে বিশ্বনাথ দে নামের এক ব্যক্তি। অশোকবাবুর ছেলে অসীম বলেন, বিশ্বনাথ আমার পূর্ব পরিচিত। শহরের একটি প্যাথলজির হয়ে সে রোগীদের রক্ত সংগ্রহ করে বলে জানতাম। এমনকী এক বছর আগে আমার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও ব্লাড স্যাম্পল নিয়েছিল সে। সে কারণেই তাকে বাড়িতে এসে বাবার ব্লাড স্যাম্পল নিয়ে যেতে বলেছিলাম। এজন্য ১ হাজার টাকাও নিয়েছিল বিশ্বনাথ।
অসীমবাবুর অভিযোগ, একদিনের মধ্যেই বাবার রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট দেওয়ার কথা ছিল ওর। কিন্তু দু’-তিনদিন কেটে যায়। বিশ্বনাথের কাছে বারবার সেই রিপোর্ট চাইলে সে গড়িমসি করতে শুরু করে। অবশেষে পাঁচ দিন পর অন্য এক প্যাথলজি সংস্থার নাম লেখা ছয় পাতার একটি রিপোর্ট আমাকে দেয় সে। ব্লাড টেস্টের সেই রিপোর্ট সহ বাবাকে নিয়ে অসীমবাবু চিকিৎসকের কাছে যান। কিন্তু রিপোর্ট দেখে সন্দেহ হয় চিকিৎসকের। তখনই দেখা যায়, আট নম্বর পাতায় ব্লাড টেস্টের রিপোর্টের নীচে তারিখের জায়গায় গত ১৬ মার্চ উল্লেখ করা রয়েছে। অথচ রক্ত নেওয়া হয়েছিল এপ্রিল মাসের ৪ তারিখ। ব্লাড টেস্টের রিপোর্টে থাকা কিউআর কোড স্ক্যান করতেই অসীমবাবু বুঝতে পারেন যে তিনি প্রতারিত হয়েছেন। দেখা যায় সেই রিপোর্টটি আসলে অন্য কোনও রোগীর। প্যাথলজি সংস্থার সেই রিপোর্ট ব্যবহার করে সেখানে ফটোশপের মাধ্যমে নিখুঁতভাবে রোগীর নাম বদলে অশোক দেবনাথের নাম লিখে দেওয়া হয়েছে।
অসীমবাবু বলেন, যদি ভুলবশত এই রিপোর্ট দেখেই চিকিৎসক আমার বাবার চিকিৎসা করতেন, তাহলে বাবার প্রাণহানিও হতে পারতো। হয়তো বহু মানুষ এভাবেই ওই অভিযুক্তের দ্বারা প্রতারিত হয়েছেন। সে কারণেই আমি প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ জানিয়েছি। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছে শান্তিপুরের বাইগাছিপাড়া এলাকার বাসিন্দা অভিযুক্ত বিশ্বনাথ দে। সে বলে, আমার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যে। ভিত্তিহীন গল্প সাজিয়ে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আমি কারও ব্লাড স্যাম্পল নিতে যাইনি। যে প্যাথলজির নাম রিপোর্টে ব্যবহার করা হয়েছিল, সেই সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সেখান থেকে জানানো হয়েছে, বিশ্বনাথ নামের কেউই তাদের সঙ্গে যুক্ত নয়। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এসডিও। যদিও রক্ত পরীক্ষার নামে এই প্রতারণা চক্রের ঘটনায় রীতিমতো উদ্বিগ্ন শহরবাসী। নাগরিকদের একাংশ বলছেন, শেষ পর্যন্ত রক্ত পরীক্ষার নামেও যে জালিয়াতি হতে পারে ভাবাই যায় না। শহরে এরকম অনেক প্যাথলজি রয়েছে, যেখানকার রিপোর্ট একেবারেই ভরসাযোগ্য নয়। তার মধ্যে কতগুলো যে আদৌ অনুমোদনপ্রাপ্ত, সেটা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।