নিজস্ব প্রতিনিধি, সিউড়ি: পিছিয়ে থাকলেও লাগাতার জনসংযোগে জোর দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে দলবিরোধী কাজে যুক্ত থাকা নেতাদের আগেভাগে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই দুই সূত্রই বদলে দিয়েছে সিউড়ি বিধানসভার তৃণমূলের ভোট অঙ্ক। এবার ‘শতাব্দী এক্সপ্রেসের’ গতি আর সিউড়িতে শ্লথ হবে না বলে বলে জোর গলায় দাবি করছেন নেতারা। বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী ও শতাব্দী রায় জুটি দিনভর ছুটছে সিউড়ি পুনরুদ্ধারে। সেই ছোটাছুটির ফল পুরোপুরি মিলবে ভোটবাক্সে, অন্তত এমনটাই দাবি করছেন তৃণমূল নেতারা।দেখা গিয়েছে, ২০১৯ লোকসভাতে শতাব্দী সিউড়ি বিধানসভাতে বিজেপি প্রার্থীর থেকে ৯১০১ ভোট কম পেয়েছিলেন। যদিও ২০২১ সালে ৭ হাজারের সামান্য কিছু বেশি ভোটে তৃণমূলের বিকাশ রায়চৌধুরী জয়লাভ করেন। এমনিতে বরাবর সিউড়ি শহরকে বিজেপির গড় হিসেবে চেনা যায়। ফলে এত কিছু অঙ্ক মাথায় রেখে নিজেদের আগেভাগে প্রস্তুত করতে শুরু করে তৃণমূলের হাইকমান্ড। দুবরাজপুরের ব্লক সভাপতি হিসাবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব সামলেছেন ভোলানাথ মিত্র। তাঁর বাড়ি সিউড়ি বিধানসভার চিনপাই এলাকায়। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জেলাতে নবজোয়ারে আসার পর কর্মীদের থেকে প্রচুর অভিযোগ পেয়েছিলেন ভোলার বিরুদ্ধে। স্থানীয় চিনপাই সমবায় সমিতির ১৪ বছর ধরে সম্পাদক পদে ছিলেন তিনি। সেখানে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে থাকে। আর তারপরই নানা অভিযোগ পেয়ে অভিষেক ভোলাকে ব্লক সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেন। এরপর তাঁকে ছাড়াই পঞ্চায়েত ভোটে ভালো ফল করে শাসকদল। এমনকী ভোলার নিজের বুথে হেরে থাকা বুথও শাসকদল পুনরুদ্ধার করে। স্থানীয় নেতারা বলছেন, এর ফলে সমস্ত স্তরের কর্মীদের মধ্যে স্বতস্ফূর্ততা ফিরে এসেছে। আর তা মানছেন প্রার্থী শতাব্দী নিজেও। ওই এলাকায় শতাব্দী প্রচারে গেলে ব্যাপক জনসমর্থন তিনি দেখতে পান। মুখ ফিরিয়ে থাকা কর্মীরা দলে আবার ফিরে এসেছেন। তাই এই পরিস্থিতিতে লোকসভা ভোটেও ভোলাকে ‘ব্রাত্য’ রেখেই এগতে চাইছে নেতৃত্ব। নেতাদের গলাতেও সেই সুর শোনা যাচ্ছে। তাঁরা বলছেন, অনেক আগেই দলের শুদ্ধকরণের পথে হেঁটেছে রাজ্য নেতৃত্ব। আর তাতে সকল স্তরের কর্মীর সমর্থন মিলছে। লোকসভা ভোটে এর ফল মিলবে।
অন্যদিকে, সিউড়ি বিধানসভার প্রতিটি অঞ্চলে নিবিড় জনসংযোগে জোর দিয়েছে দল। বিধায়ক প্রতিদিন তিন থেকে চারটি এলাকায় বৈঠক করছেন। তাঁর তৈরি সাংগঠনিক টিম প্রতিটি অঞ্চলে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে। তাতে পানীয় জল, রাস্তার আলো, বিদ্যুৎ সংযোগ, ভাতা না মেলা সহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সমস্যা এই ক’দিনে মিটেছে। তাতে মানুষের আস্থা ফিরছে বলে আশাবাদী নেতারা। শতাব্দী এক্সপ্রেসের যে গতি এতদিন সিউড়িতে এলেই কমে যেত, তা এবার হবে না বলছেন বিকাশও। তিনি বলেন, আমাদের প্রতিটি অঞ্চলে কর্মী, নেতারা সর্বক্ষণ জনসংযোগ রেখে চলছেন। মানুষের সুখে দুঃখে আমাকে বিধায়ক হিসাবে পাশে পেয়েছেন। আমরা নিজেরাও নিজেদের সংগঠন নিয়ে মূল্যায়ন করছি। তাতে আমরা অত্যন্ত আশাবাদী। ১০ হাজারেরও অনেক বেশি ভোটে এখান থেকে আমরা লিড পাব। শতাব্দী বলেন, দলের বিরুদ্ধে যাঁরা কাজ করেছেন তাঁদের দল সরিয়ে দিয়েছে। মানুষ আমাদের কাজ দেখে ভোট দেবেন। সেই সাড়া সর্বত্র পাচ্ছি।
এই প্রসঙ্গে দুবরাজপুরের বিজেপি বিধায়ক অনুপ সাহা বলেন, ওরা স্বীকার করুক, ওদের দুবরাজপুরের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি কত দুর্নীতি করেছে। মানুষ অত সহজে এসব ভুলে যায় না। সবাই সংকল্প করেই রেখেছেন বিজেপিকে ভোট দেবেন।