নিজস্ব প্রতিনিধি, দুর্গাপুর:  ‘উনি যে কাজটা বাকি রেখেছেন, সেটা আমি করব। আর আলুওয়ালিয়াজি একবার যেখানে যেতেন, সেখান থেকে ওঁর কাজ দেখে অন্য জায়গায় পাঠানো হয়। বাকি কাজটা ওখানে করুন। উনি দু’বার কোথাও (নির্বাচনে) দাঁড়ান না। পুরো জায়গায় ঘুরে ঘুরে সংগঠন করেন।’ বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিদায়ী এমপি সুরেন্দ্র সিং আলুওয়ালিয়াকে পাশে বসিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে এ ভাবেই তির্যক মন্তব্য ছুড়ে দিলেন বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ। ঠোঁটকাটা দিলীপ ঘোষের এই মন্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চর্চা শুরু হয়েছে। তাঁরই কথার রেশ ধরে বলা হচ্ছে, বর্তমান দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের জন্য কোনও কাজ করেননি আলুওয়ালিয়া। এক যোগে অভিযোগ জানিয়েছে, তৃণমূল, সিপিএম ও কংগ্রেস। তাঁকে এলাকায় দেখা যেত না বলে একাধিকবার নিখোঁজ পোস্টার পড়েছে। তাঁর সেই ব্যর্থতা ঢাকতেই এই কেন্দ্রে প্রার্থী বদল করেছে বিজেপি, রাজনৈতিক মহলে এই চর্চার মাঝে দিলীপ ঘোষের এই মন্তব্য রীতিমতো আলোড়ন ফেলেছে। এদিন দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি অনুষ্ঠান ভবনের সাংবাদিক সম্মেলন করে  নিজের এমপি ফান্ডের টাকা খরচের রিপোর্ট কার্ড তুলে ধরেন আলুওয়ালিয়া। তাতে যে চিঁড় ভেজেনি, দিলীপের মন্তব্য থেকে স্পষ্ট হয়েছে বলে অনেকের মত। 
দীর্ঘদিন ধরে এমপির এলাকায় অনুপস্থিতি নিয়ে জোর চর্চা হয়েছে বর্ধমান ও দুর্গাপুরজুড়ে। রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন হোক বা করোনাকাল, এমপির খুব বেশি সক্রিয়তা দেখা যায়নি এলাকায়। তাঁর নামে নানা প্রান্তে পড়েছে নিখোঁজ পোস্টার। সেই ব্যর্থতা ঢাকতেই নাকি এই কেন্দ্রে বিদায়ী এমপিকে প্রার্থী করার সাহস পায়নি বিজেপি। বিরোধীরা উদাহরণ হিসেবে বলছেন, দার্জিলিং কেন্দ্র থেকেও এজন্য তাঁকে সরিয়ে আনতে হয়েছিল। 
এদিন কার্যত বিরোধীদের সুরেই যেন সুর মেলান দিলীপ ঘোষ। গত পাঁচ বছরে বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রে এমপি ফান্ড থেকে কী কাজ হয়েছে তা নিয়ে এদিন সাংবাদিক সম্মেলন হয়। সেখানে প্রশ্ন করা হয়, আলুওয়ালিয়াজির এলাকায় অনুপস্থিতির অভিযোগ দিলীপ ঘোষকে কি শুনতে হচ্ছে? আলুওয়ালিয়াজি এ প্রসঙ্গে বলেন, যাঁরা ধৃতরাষ্ট্র, তাঁরা দেখতে পান না। এজন্য অর্জুন হতে হয়। এ প্রসঙ্গে নীরবই থাকেন দিলীপ। 
এদিন সুরেন্দ্র সিং আলুওয়ালিয়া সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন, বিগত পাঁচ বছরে এমপি ফান্ড থেকে ১৬ কোটি ৮০ লক্ষ ৯১ হাজার ৩৩২ টাকার কাজের সুপারিশ জমা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই আসনের বিগত এমপিদের জমে থাকা টাকার ৪ কোটি ১৮ লক্ষ ১২ হাজার ৫৭৩ টাকার কাজের সুপারিশও তিনি জেলা প্রশাসনের কাছে জমা করেছেন। পরে তিনি বলেন, সুপারিশ করাই এমপিদের দায়িত্ব, কাজ সম্পন্ন করেন জেলাশাসক। 
তিনি বলেন, এমপি ফান্ড থেকে ৩১২টি কাজের সুপারিশ করা হয়েছিল। মাত্র ৬১টি কাজের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তাঁর দাবি, তিনি অ্যালয় স্টিল প্লান্টের বিলগ্নিকরণ আটকাতে সমর্থ হয়েছেন। ওডিএসপি, ডিভিসিতে নতুন বিনিয়োগ এসেছে। একাধিক এক্সপ্রেস ট্রেনের পানাগড় ও মানকরে স্টপ দেওয়াকেও নিজের কৃতিত্ব হিসেবে জাহির করেছেন এমপি। যদিও ডিভিসির জলধারগুলি ড্রেজিং করার বিষয়টি রাজ্যের ইস্যু বলেই এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি।