নিজস্ব প্রতিনিধি, নন্দীগ্রাম: ‘জানেন, আগে থেকেই খবর পেয়েছিলাম আমার বাড়ির সামনে দিয়েই যাবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে দুয়ারে দাঁড়িয়ে দেখব, ঠিক করেই রেখেছিলাম। সেজন্য রান্নার বেশি ঝামেলা আজ রাখিনি। আলু আর ডিম সেদ্ধ, পেঁয়াজ-লঙ্কা দিয়ে ঘষে ঘরের সবাই খেয়ে নিয়েছি সকাল সকাল। দুপুর ১টা থেকে টানা অপেক্ষা করছি তাঁকে চাক্ষুষ করার জন্য। আশা পূরণ হল সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ। আরও অপেক্ষা করতে হলেও কোনো অসুবিধা ছিল না। কেন জানেন, আমরা নন্দীগ্রামের বাসিন্দারা কোনও দাদাকে চাই না, দিদির উপরই ভরসা রাখি’—বক্তব্য নন্দীগ্রামের রেয়া পাড়ার বাসিন্দা টুম্পাদাসী গিরির। অভিষেকের জনজোয়ারের সাক্ষী থাকতে গোটা পরিবারকে নিয়ে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পূর্ণিমা গিরি, গৌরি গিরির সঙ্গে ছিলেন ৮০ বছরের কুলাবালা আর ছ’বছরের সৌমদীপ। চণ্ডীপুর থেকে নন্দীগ্রাম বাসস্ট্যান্ড ২০ কিলোমিটারের দীর্ঘ যাত্রাপথে সর্বত্রই একই ছবি। গেরুয়া শিবিরে স্বঘোষিত ‘ভরকেন্দ্র’ নন্দীগ্রাম থেকে আওয়াজ উঠল—‘বিজেপি’র গদ্দার হটাও’! বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ চণ্ডীপুর ক্রিকেট ময়দানের সামনে থেকে শুরু হয় অভিষেকের পদযাত্রা। কর্মসূচি শুরুর প্রথম ছবিটাই বলে দিয়েছিল, দিনের বাকিটা কেমন হতে চলেছে! জাতীয় সড়কের দু’পাশে তখন কাতারে কাতারে মানুষ। হাতে জোড়াফুলের পতাকা, মাথায় নব জোয়ার লেখা টুপি, সঙ্গে স্লোগান—‘এই বিজেপি আর না’। পদযাত্রার সামনে তেরঙা বেলুনের ছয়লাপ! সাউন্ড বক্সে বাজছে-‘‘জিতব আমি, জিতবে তুমি, উন্নয়ন হবে সবার’। অভিষেকের পায়ে পায়ে তখন শামিল তরুণ প্রজন্ম থেকে তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতারাও। চণ্ডীপুর এলাকার গোটা রাস্তাজুড়ে দুপুর থেকে দাঁড়িয়েছিলেন সাধারণ মানুষ। এড়াশিলের সামনে গ্রামবাসীদের দেখে দাঁড়িয়ে পরেন অভিষেক। ১০০ দিনের কাজের টাকা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন তাঁরা। প্রত্যুত্তরে অভিষেক বলেন, আপনারা সংগঠিত হন, দিল্লির বুকে বৃহত্তর আন্দোলনের জন্য। তারপর দেখি কে, আপনাদের টাকা আটকে রাখে।
হাঁসচড়া স্কুল বাজারের সামনেও রাস্তার দু’ধার অবরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল জনতার ভিড়ে। সেখানে পটচিত্র শিল্পীরা অভিষেককে সংবর্ধনা দেন। পুতুল চিত্রকর নামে বিশেষভাবে সক্ষম এক মেয়ে অভিষেককে পটচিত্র উপহার দেন। হুইল চেয়ার ও আর্থিক সাহায্য চায় সে। অভিষেক আশ্বাস দিয়েছেন। গত ৪ মে বিরোধী দলনেতার কনভয়ের গাড়ির ধাক্কায় মারা যান শেফ ইসরাফিল খান। তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন অভিষেক। কাকা শেখ আলাউদ্দিন খান বলেন, ইসরাফিলের স্ত্রীর জন্য একটা চাকরির আবেদন করেছি। এদিন, বড় পোলে গোটা পূর্ব মেদিনীপুর যেন উঠে এসেছিল। জনস্রোত ভাসিয়ে নিয়ে চলল অভিষেককে।