বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
নির্বাচনী প্রচার শেষ। রাত পোহালেই ভোট। বেকার যুবকদের এই শোচনীয় অবস্থা যেমন একুশের নির্বাচনে প্রভাব পড়বে, তেমনই তৃণমূল সরকারের বিগত বছরের জনমুখী প্রকল্প ও পরিকল্পনা মানুষের রায়দানে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। পদ্ম শিবিরের প্রার্থী হিসেবে বিধানসভা কেন্দ্রে লড়াইতে নেমেছেন প্রাক্তন জেলা সদর সভাপতি সন্দীপ নন্দী। ২০১১ সালেও তিনি নির্বাচনে লড়াই করে পরাজিত হন। শাসক দলের কে টিকিট পাবেন তা নিয়ে চর্চা ছিল বিভিন্ন শিবিরে। নির্বাচনের বেশ কয়েক মাস আগে বিধায়ক রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বয়সজনিত অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে নির্বাচনে লড়াই না করার সিদ্ধান্ত নেন। তারপর শহরের একাধিক গোষ্ঠীর নেতা টিকিট পাওয়ার আশায় ছিলেন। শেষমেশ খোকন দাসের উপর ভরসা রেখেছে দল। দক্ষিণের আসনে ত্রিমুখী লড়াইয়ে কার পাল্লা ভারী তা বলা কঠিন। ভোট কুশলীরা যে পরিসংখ্যান তুলে ধরে বিশ্লেষণে নেমেছেন তাতে কিছুটা হলেও শাসক দল এগিয়ে থেকে লড়াই শুরু করেছে।
২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্রে তৃণমূলের আধিপত্য বজায় ছিল। ৪৭.৩৪ শতাংশ ভোট পেয়ে সিপিএম প্রার্থী আইনুল হককে ২৯ হাজার ৪৩৮ ভোটে পরাজিত করেন তৃণমূলের রবিরঞ্জনবাবু। বিজেপি ৮.৩৪ শতাংশ ভোট পেয়ে চতুর্থ স্থানে ছিল। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রায় ৩৪ শতাংশ ভোটবৃদ্ধি করেছে। পাশাপশি নিজেদের সংগঠন বিস্তার করেছে শহরে। বামেদের ২২ শতাংশ ভোট কমে যায় লোকসভার নির্বাচনে। এই শক্তিক্ষয় বিজেপির ভোটব্যাঙ্ক মজবুত করেছে। তবে এবার বামেরা নিজেদের ভোটব্যাঙ্ক ফেরাতে সক্ষম হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। তাতে গেরুয়া শিবির কিছুটা হলেও চিন্তিত। বামেরা নিজেদের ভোট ফেরাতে পারলে যে শুধু বিজেপির ভোট টানবে এমনটা নয়। শাসক গড়েও থাবা বসাতে মরিয়া বাম প্রার্থী। তৃণমূলের ক্ষেত্রে এটা যেমন অস্বস্তি, তেমন দলের মধ্যে গোষ্ঠী সমস্যা বাড়তি মাথাব্যথার কারণ। টিকিট পাওয়ার পর খোকন দাস সমস্ত দ্বন্দ ভুলে সর্বস্তরের নেতাদের সঙ্গে বসেছিলেন। দ্বন্দ্ব মেটাতে তিনি সব চেষ্টা করে সফলও হয়েছেন। তবে শহরের একাধিক নেতা প্রথমদিকে ‘ধরি মাছ, না ছুঁই পানি’র মতো অবস্থান নিয়ে দলীয় প্রার্থীর সঙ্গে ভোট প্রচারে নেমেছিলেন। অনেকে বলছেন, দলের নেতারা সাবোতাজ না করলে খোকনের জয় আটকাতে পারবে না কেউ। দলের তরফে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছিল যে, যাঁরা প্রার্থীর জন্য মরিয়া হয়ে ভোটে নেমেছেন দল তাঁদের পুরস্কৃত করবে। পাশাপশি দলীয় প্রার্থী না জিতলে ও বিজেপি যদি ক্ষমতায় আসে রাজনৈতিক অস্তিত্ব সঙ্কট নিয়েও ভয় পাচ্ছেন নেতারা। তাই শেষে খোকন দাসকে জেতাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন সব নেতাই।
তবে বিজেপির অস্বস্তির কারণ গোষ্ঠীকোন্দল। বিজেপি প্রার্থী সন্দীপ নন্দী জেলা সদরের সভাপতি থাকাকালীন তাঁর অপসারণের দাবিতে বিরুদ্ধ গোষ্ঠী পার্টিঅফিসে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল। এমনকী পার্টিঅফিস ভাঙচুর ও কর্মীদের গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটে। শহরের বুকে গেরুয়া শিবিরের দুই গোষ্ঠীর সেই তাণ্ডবের ছবি মানুষ এখনও ভোলেননি। সেই অস্বস্তি নিয়ে দলীয় কোন্দল মিটিয়ে প্রার্থী লড়াইয়ে নেমেছেন। দলের সকলেই সামনে থেকে ময়দানে নেমেছেন। তবে তাঁরাও যে সাবোতাজের পথে হাঁটবেন না, সেটা বলা যায় না।
উদ্বাস্তু ও মতুয়া ভোটও এই কেন্দ্র কিছুটা প্রভাব ফেলবে। শহরের মতুয়ারা আশা করেছিলেন লোকসভার পর নাগরিকত্ব পাবেন। সেই আশাভঙ্গ বিজেপির বিরুদ্ধেই যাবে বলে মনে করছেন অনেকে। অসমের উদাহরণ টেনে মানুষকে সচেতন করে বাড়ি বাড়ি প্রচার করেছেন তৃণমূল প্রার্থী খোকন দাস। এছাড়া বর্ধমান পুরসভার চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল থাকার সময় শহরের কাঞ্চননগরের ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন তিনি। গোটা শহরকে কাঞ্চননগরের মতো সাজিয়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন প্রার্থী।
অন্যদিকে, আড়াই বছরের বেশি সময় বর্ধমান পুরসভায় পুরবোর্ড নেই। শহরের নাগরিক পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে বলে সরব হয়েছে বিজেপি। প্রার্থী সন্দীপ নন্দী ভোট প্রচারে সেগুলি তুলে ধরছেন। দীর্ঘদিনের দুই লড়াকু সৈনিকের সঙ্গে যুদ্ধে নেমেছেন প্রথমবার ভোটে দাঁড়ানো পৃথা। সংযুক্ত মোর্চার সর্বকনিষ্ঠ সিপিএম প্রার্থী হিসেবে তিনি এলাকা চষে ফেলেছেন। কর্মসংস্থান, মানুষের রুটিরুজির ব্যবস্থা ও কৃষকের ফসলের ন্যায্য দামের দাবি প্রচারে তুলে ধরছেন। জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী তিনিও।