সংবাদদাতা, বিষ্ণুপুর: একদিকে ভোটের প্রচারে রাজনৈতিক দলগুলি ব্যস্ত, অন্যদিকে প্রচণ্ড দাবদাহে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিও মুখ ফেরাচ্ছে। তার জেরে রক্তের সঙ্কট তৈরি হচ্ছে। সমস্যা সমাধানে বিষ্ণুপুরে স্থায়ী রক্তদান কেন্দ্র স্থাপন করল স্বাস্থ্যদপ্তর। বুধবার বিষ্ণুপুরের সিএমওএইচ ব্লাড ব্যাঙ্ক এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানেই স্থায়ী রক্তদান কেন্দ্র চালুর সিদ্ধান্ত হয়। বৃহস্পতিবার থেকেই তা চালু হয়ে গিয়েছে। স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সময়ে যে কেউ এসে স্বেচ্ছায় রক্ত দিতে পারবেন। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মকর্তারা গরমের কারণে দিনের বেলার পরিবর্তে রাতে রক্তদান শিবিরের আয়োজনের প্রস্তাব দেয়। ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তা মেনে নিয়েছে। বিষ্ণুপুরের সিএমওএইচ গোপাল দাস বলেন, প্রতিবছরই গরমের সময় রক্তের সঙ্কট দেখা দেয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এই সময় খোলা জায়গায় শিবির করার সমস্যা রয়েছে। সেই জন্য ব্লাড ব্যাঙ্কের ভিতরে একটি স্থায়ী রক্তদান কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। ২৫ জুলাই পর্যন্ত তা চালু থাকবে। প্রথম দিনেই ভালো সাড়া পাওয়া গিয়েছে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে রুমের মধ্যে ছোট ছোট ক্যাম্পের আয়োজন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। খুব সকাল অথবা সন্ধ্যার পরেও তা আয়োজন করলে আমাদের কর্মীরা পৌঁছে যাবেন। ব্লাড ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, গোটা দেশে এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত রক্তের সঙ্কট দেখা দেয়। গরমের কারণে পর্যাপ্ত শিবির হয়নি। এবার লোকসভা ভোটের কারণে রাজনৈতিক দলের তরফেও শিবিরের আয়োজন হচ্ছে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে অত্যধিক গরমের কারণে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিও পর্যাপ্ত শিবিরের আয়োজন করেননি। সব মিলিয়ে রক্তের প্রবল সঙ্কট তৈরি হয়েছে।
হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালে রোজ গড়ে ৪০ইউনিট রক্তের প্রয়োজন হয়। অধিকাংশটাই আসে বিভিন্ন সংগঠন আয়োজিত শিবির থেকে। বছরের অন্যান্য সময় প্রতি মাসে গড়ে ১৪টি শিবির হয়। তাতে খুব একটা সমস্যায় পড়তে হয় না। কিন্তু, চলতি এপ্রিল মাসে গরম পড়তেই পর্যাপ্ত শিবির হয়নি। সেই জন্য রক্তের প্রবল সঙ্কট দেখা দিয়েছে। জরুরি প্রয়োজনেও রোগীদের রক্ত দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ডোনার নিয়ে এলে তবেই রোগী রক্ত পাচ্ছে।
ব্লাড ব্যাঙ্কের আধিকারিকরা বলেন, বৃহস্পতিবার বিষ্ণুপুর ব্লাড ব্যাঙ্কে বিভিন্ন গ্রুপ মিলিয়ে মাত্র ৪০ইউনিট রক্ত মজুত ছিল। তা একদিনেই শেষ হয়ে যাবে। তারপরে কীভাবে চলবে, সেটাই ব্লাড ব্যাঙ্কের আধিকারিকদের ভাবাচ্ছে। রক্তের এই আকালের সময় অ্যানিমিয়া, ডায়ালিসিস, অপারেশন সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে জরুরি রক্তের প্রয়োজন পড়ছে। সেই সঙ্গে থ্যালাসেমিয়া রোগীরাও রয়েছেন। সব মিলিয়ে জোগানে ঘাটতি থাকায় রোগীরা চরম বিপাকে পড়ছেন।