ব্যবসায় বাড়তি বিনিয়োগ প্রত্যাশিত সাফল্য নাও দিতে পারে। কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতি শ্বাসকষ্ট ও বক্ষপীড়ায় শারীরিক ক্লেশ। ... বিশদ
সমুদ্রগড় তাঁতহাট মালিক সমিতির এক কর্তা সুবীর কর্মকার বলেন, লকডাউনের জন্য আমরা তাঁতহাট বন্ধ করে দিই। বাইরে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন দামে শাড়ি বিক্রি হচ্ছে। কিছু ব্যবসায়ী নগদ টাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকছে। গরিব তাঁতশিল্পী প্রতিদিন কাপড় না বিক্রি করলে খাবে কী? যাঁদের পুঁজি বেশি, তাঁরা শাড়ি ঘরে রেখে দিচ্ছেন। কিন্তু আধিকাংশ তাঁতশিল্পী কম দামে শাড়ি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
পূর্ব বর্ধমান জেলার তাঁতবলয় হিসেবে পরিচিত সমুদ্রগড় অঞ্চল। এখানে ২০ হাজার তাঁতির বসবাস রয়েছে। উত্তরবঙ্গের হাজার খানেক তাঁতশিল্পী এই এলাকায় থেকে শাড়ি বোনেন। রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার তাঁত ব্যবসায়ীরা সমুদ্রগড় তাঁতহাটে এসে শাড়ি সংগ্রহ করেন। এই লকডাউনের মধ্যে বাড়িতে তাঁতের শাড়ি বুনছেন সমুদ্রগড়ের তাঁতশিল্পীরা। কিন্তু বর্তমানে তাঁদের তৈরি করা ওইসব শাড়ির ক্রেতা নেই। দু’সপ্তাহ ধরে সমুদ্রগড় তাঁতহাট বন্ধ রয়েছে। দূর-দূরান্তের ক্রেতারা আসতে পারছেন না। শাড়ি তৈরি হলেও তা বিক্রি করার জায়গা নেই। পুলিস বেশি লোকের জমায়েত হতে দিচ্ছে না। এরই মধ্যে সুতোর দোকান খোলায় দুই ব্যবসায়ীকে নাদনঘাট থানার পুলিস হেনস্তা করেছে বলে অভিযোগ। তাঁতশিল্পীরা বাইরে গিয়ে শাড়ি বিক্রি করতে পারছেন না। তাঁতশিল্পীদের এই দুঃসময়ের সুযোগ নিচ্ছেন একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী। আগে কয়েকটি শাড়ি বোনা হলেই তাঁতশিল্পীরা বিক্রির জন্য ছুটতেন। কিন্তু এখন সেই সুযোগ বন্ধ। তালা পড়েছে তাঁতহাটের ফটকে। এই অবস্থায় অসহায় তাঁতশিল্পীরা ভোরের আলো ফুটতেই শাড়ি নিয়ে দাঁড়াচ্ছেন এসটিকেকে রোডের পাশে। কিন্তু সেখানে ক্রেতা না থাকলেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নগদ টাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। ৩০ শতাংশ কম দাম হলে তাঁরা ওইসব শাড়ি কিনে নিচ্ছেন।
নসরৎপুর মধ্যপাড়ার দুঃস্থ তাঁতশিল্পী বিশ্বনাথ বসাক বলেন, রোজ আমি ও আমার স্ত্রী মিলে দুটি শাড়ি বুনি। সুতো ও মজুরি মিলে একটি শাড়ির পাইকারি দাম ৫০০ টাকা। ওই শাড়ি বিক্রি করে সংসার চালাই। লকডাউনের জন্য শাড়ি বিক্রির হাট বন্ধ। বাইরের ক্রেতারা এলাকায় আসছেন না। শাড়ি বিক্রি না করলে খাব কী। ভোরের দিকে শাড়ি নিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকি। আমার মতো অনেক দুঃস্থ তাঁতশিল্পী আসেন। দেড়-দু’ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকলেও ক্রেতার দেখা মেলে না। হাতে গোনা কয়েকজন ব্যবসায়ী টাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। ৫০০ টাকার শাড়ি ৩৫০ টাকায় বিক্রি বাধ্য হচ্ছি। একই দাবি নতুনপাড়ার বিনোদ মণ্ডল, গোয়ালপাড়ার তাঁতি রাজীবচন্দ্র বসাকেরও।
তাই লকডাউন না উঠলে তাঁতশিল্পীদের অবস্থা আরও খারাপ হবে বলে মনে করছেন সমুদ্রগড়, নসরৎপুর অঞ্চলের সাধারণ ব্যবসায়ীরা। এই সময় উৎপাদিত শাড়ি বিক্রির বিকল্প জায়গা নেই। স্থানীয় পঞ্চায়েতের উপপ্রধান আনারুল মণ্ডল বলেন, লুকিয়ে শাড়ির হাত বদল চলছে। অসহায় তাঁতিরা কম দামে শাড়ি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। অসাধু ব্যবসায়ীরা এই সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছে।