ব্যবসায় বাড়তি বিনিয়োগ প্রত্যাশিত সাফল্য নাও দিতে পারে। কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতি শ্বাসকষ্ট ও বক্ষপীড়ায় শারীরিক ক্লেশ। ... বিশদ
জেলার প্রচুর মানুষ প্রতিবছর সোনার গয়না তৈরির কাজে রাজস্থানের জয়পুরে পাড়ি দেন। সেখানে কেউ সাত বছর কেউ ১০ বছর ধরে পরিবার নিয়ে ভাড়া বাড়িতে আছেন। লকডাউনের জেরে তাঁরা এখন সেখানে গৃহবন্দি হয়ে রয়েছেন। কেতুগ্রামের সীতাহাটি পঞ্চায়েতের শাঁখাই গ্রামে বেশ কয়েকটি পরিবার রাজস্থানের জয়পুর শহরের সুভাষচকে আটকে পড়েছেন। সেখান থেকেই ফোনে এই দুরাবস্থার কথা জানিয়েছেন।
শাঁখাই গ্রামের কায়স্থপাড়ার বাসিন্দা তন্ময় দে ও তাঁর স্ত্রী বুল্টি দে তাঁদের সাড়ে তিন বছরের ছেলে তুহিনকে নিয়ে গৃহবন্দি হয়ে রয়েছেন। বুল্টিদেবী বলেন, আমরা ১০ বছর ধরে এখানে রয়েছি। আমার স্বামী এখানে সোনার গয়না তৈরির কাজ করেন। ভাড়া বাড়িতে রয়েছি। লকডাউনের পর খুবই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছি। ঘরে ছেলের জন্য আর এক ফোঁটাও দুধ নেই। জানালা দিয়ে উট দেখিয়ে কত আর ছেলেকে খিদের জ্বালা ভোলাব? জমানা টাকা প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। কারখানা থেকে মাইনে দেয়নি। একবেলা ভাত আর আলু সেদ্ধ করে খাচ্ছি। বাইরে বেরতে দেওয়া হচ্ছে না। আমরা এখানে অনেক বাঙালি পরিবার ভাড়া বাড়িতে আছি। কেউ আমাদের সাহায্য করছে না। শুধু জয়পুরের স্থায়ী বাসিন্দাদের সরকার থেকে রেশন দিচ্ছে। রাস্তার কুকুরদের গাড়িতে করে তুলে নিয়ে যাচ্ছে।
তন্ময়বাবু বলেন, ঘরে আর দু’দিনের খাবার মজুত রয়েছে। বাড়ির সামনে আর সব্জির গাড়িও আসছে না। কীভাবে এখন খাব সেই চিন্তায় রাতের ঘুম উবেছে। এখন ঈশ্বরই ভরসা। পরিবার নিয়ে কীভাবে বাঁচব বুঝতে পারছি না। গোলাপি শহর এখন শ্মশানের চেহারা নিয়েছে। রাস্তায় শুধু পুলিস আর সংবাদ মাধ্যমের গাড়ি দেখা যাচ্ছে। দু’দিন আগে আমাদের সুভাষচকে কয়েকজন বাসিন্দাকে করোনা সন্দেহে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছে। তারপর থেকে বাড়িওয়ালা আর বাড়ি থেকে বের হতে দিচ্ছেন না।
শাঁখাই গ্রামেরই আরএক যুবক তরুণ দে জয়পুরের সুভাষচকে আটকে পড়েছেন। তিনি বলেন, বাড়িতে আমার দেড় মাসের ছেলে রয়েছে। আর এখানে আমরা এভাবে আটকে পড়েছি। এখন কীভাবে এই পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করছি ভগবানই জানে। কারখানা বন্ধ থাকায় বেতন দেয়নি। কীভাবে বাড়ি ভাড়ার টাকা মেটাব বুঝতে পারছি না। আমাদের এখানে কেউ সাহায্যে করছে না। বাড়িতে বাবা-মা কান্নাকাটি করছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আমরা রাজ্যে ফেরার আবেদন জানাচ্ছি। বাড়িতে না ফিরতে পারলে এখানে আমরা না খেতে পেয়ে মরে যাব।
মন্তেশ্বরের একই পরিবারের ছ’জন কেরলে গৃহবন্দি রয়েছেন। চারমাস আগে মামুদপুর-১ পঞ্চায়েতের বরুণা গ্রামের ওই ছ’জন কেরলে শ্রমিকের কাজে যান। বর্তমানে তাঁরা কেরলের চেলেভুর এলাকার একটি বাড়িতে গৃহবন্দি হয়ে আছেন। তাঁদের মধ্যে আলম মণ্ডল নামে একজন বলেন, খাওয়া-দাওয়ায় খুব অসুবিধা হচ্ছে। বাড়ির ছেলেমেয়েদের জন্য মন খারাপ করছে। কবে বাড়ি ফিরতে পারব বুঝতে পারছি না।