সন্তানের শরীর স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা। কাজকর্মে অগ্রগতি। সাহিত্য চর্চায় মানসিক প্রফুল্লতা। ... বিশদ
সন্ধ্যায় পুলিস সুপার ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় এনিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন। এদিন সাংবাদিক বৈঠকে পুলিস সুপারের পাশাপাশি অতিরিক্ত পুলিস সুপার(হলদিয়া) পারিজাত বিশ্বাস এবং হলদিয়ার এসডিপিও তন্ময় মুখোপাধ্যায় ছিলেন। তাঁদের মাথায় রেখেই ১৩জনের স্পেশাল টিম গঠন করেছিলেন এসপি। আপাতত জোড়া খুনের ঘটনায় রহস্য উদ্ঘাটন হলেও বাকি অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার করাই পুলিসের প্রধান কাজ। তাছাড়া খুনের মোটিভ এবং ঘটনার বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করাই পুলিসের মূল লক্ষ্য।
হাড়হিম করা খুনের ঘটনা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে পুলিস সুপার বলেন, এধরনের ঘটনা নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক যেন আর করতে না হয়। তিনি বলেন, জ্যান্ত অবস্থায় মা ও মেয়েকে খুন করা হয়েছিল। ১৮ফেব্রুয়ারি হলদিয়ার দুর্গাচক থানার ঝিকুরখালি এলাকায় হুগলি নদীর চরে দু’টি জ্বলন্ত দেহ পড়ে থাকার খবর পায় পুলিস। দেহ দু’টি ময়না তদন্ত করা হয়। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসক জানান, দেহ দু’টি মহিলার। এরপর আমরা ১৩জনের একটি স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম গঠন করি। সেই টিমই তদন্ত চালায়। পাশাপাশি ফেসবুকেও এনিয়ে নজরদারি চলছিল। শনিবার মৃত দুই মহিলার পরিচয় সম্পর্কে আমরা জানতে পারি। মৃতরা সম্পর্কে মা ও মেয়ে। বাড়ি নিউ বারাকপুরে। আমাদের পুলিস অফিসাররা তাঁদের বাড়িতেও গিয়েছিলেন। ওই পরিবারের এক সদস্য এখানে এসেছেন।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, নিউ বারাকপুরের বছর উনিশের বাসিন্দা রিয়ার সঙ্গে হলদিয়ার দুর্গাচক কলোনির শেখ সাদ্দামের প্রণয়ের সম্পর্ক ছিল। রিয়া হলদিয়ায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন। সাদ্দাম পেশায় একজন ঠিকাদার। পাশাপাশি শাসক দল ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। দু’জনের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় রিয়ার মা রমাদেবী দিন কয়েক আগে হলদিয়ায় আসেন। সেই সম্পর্ক নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে টানাপোড়েন চলার মধ্যেই গত ১৮তারিখ ভোরে মা ও মেয়েকে জ্যান্ত অবস্থায় নদীর পাড়ে পোড়ানো হয়েছে। তবে, তার আগে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে কি না তানিয়ে অবশ্য পুলিস সুপার কিছু মন্তব্য করতে চাননি।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, সাদ্দাম ওই খুনের ঘটনায় মঞ্জুর আলম মল্লিক সহ মোট চারজনের সাহায্য নিয়েছে। মঞ্জুর হলদিয়ার একটি কারখানার অস্থায়ী কর্মী। বাকি অভিযুক্তরা অবশ্য গা-ঢাকা দিয়েছে। তাদের সন্ধানে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিস। শনিবার দুপুরে দু’জনকে হলদিয়া থেকে পাকড়াও করা হয়। ঘটনার মূল অভিযুক্ত অবশ্য সাদ্দাম। সম্পর্কের টানাপোড়েনের পাশাপাশি খুনের পিছনে অন্য কোনও কারণ আছে কি না তা নিয়েও তদন্ত শুরু করেছে পুলিস।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝিকরখালি নদীতট এলাকা অনেকটাই নির্জন। সেই সুযোগে মা এবং মেয়েকে সেখানে নিয়ে গিয়ে জ্যান্ত অবস্থাতেই পোড়ানো হয়েছে। ঘটনার তিনদিন পর পুলিসের পক্ষ থেকে অজ্ঞাত পরিচয় দু’জনের পরিচয় জানার জন্য কিছু বর্ণনা দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হয়। বিভিন্ন জেলার পুলিসের কাছেও এই মর্মে বার্তা পাঠানো হয়। তারপর অবশ্য ফেসবুকে নজরদারি চালানো হয়। বিশেষ করে মৃত দু’জনের ফেসবুক বন্ধুরা সোশ্যাল মিডিয়ায় এনিয়ে পোস্ট করতেই তা নজরে আসে জেলা পুলিসের। সেই সূত্রে খোঁজখবর চালাতেই নিউ বারাকপুরের বাসিন্দা ওই মা ও মেয়ের তথ্য পায় পুলিস।
১৮ফেব্রুয়ারি সকাল ৭টা নাগাদ দুর্গাচক থানার পুলিসের কাছে দু’জনের জ্বলন্ত দেহ পড়ে থাকার খবর এসেছিল। তখনও দু’জনের দেহ থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছিল। সকালেই ওই খুনের ঘটনা ঘটানো হয়েছিল বলে পুলিস নিশ্চিত। সাদ্দামের সঙ্গে রিয়ার যোগাযোগ কীভাবে হয়েছিল এবং তাদের সম্পর্ক কতদিনের, মনোমালিন্যের কারণ সহ একাধিক প্রশ্ন খুঁজে বের করতে এবার তৎপর হয়েছে পুলিস। ধৃত সাদ্দাম হলদিয়া শিল্পাঞ্চল এলাকার পরিচিত মুখ। ওই ঘটনায় সেই যে মূল পাণ্ডা জানাজানি হওয়ার পর গোটা শিল্পশহরে হইচই পড়ে গিয়েছে।