অলকাভ নিয়োগী ও সুমন তেওয়ারি, বিএনএ, বর্ধমান ও আসানসোল: দেশের রাজধানী খোদ দিল্লির দূষণ নিয়ে উদ্বিগ্ন গোটা দেশ। এমনকী, ওই দূষণ নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিমকোর্ট সরকারকে চরম ভর্ৎসনা করেছে। সেই দূষণ নিয়ে যখন বলিউড অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া মুখে মাস্ক পরে সচেতনতার বার্তা দিচ্ছেন কিংবা বারাণসীতে ভগবানের মুখেও মাস্ক পরানো হচ্ছে, তখন আসানসোল ও বর্ধমানের দূষণও সরকারকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। কারণ, সরকারি রিপোর্টেই দিল্লির দূষণের মাত্রাকে ছাপিয়ে গিয়েছে আসানসোল। শুধু তাই নয়, বর্ধমান শহরও দূষণে পিছিয়ে নেই। বেসরকারি সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী দিল্লিকে ছাপিয়ে গিয়েছে এই শহরও। সরকারিভাবে আসানসোলকে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স অনুযায়ী ‘খুব খারাপ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গত দু’দিন ধরেই সন্ধ্যার পর ঘন কুয়াশা দেখা দিয়েছিল। তারপর এই রিপোর্টে আতঙ্কও তৈরি হচ্ছে। দূষণের বিষাক্ত বাতাসে অনেকের শ্বাসকষ্টও হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ দেশের বিভিন্ন বায়ু দূষণের মাত্রা প্রকাশ্যে আনার জন্য ন্যাশনাল এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স প্রকাশ করে। সেখানেই উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। বুধবার দুপুর ২টোর সময় যেখানে দিল্লির এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স ছিল ২৬৫, সেখানে আসানসোলে ছিল ৩২২! মূলত বায়ুতে ভাসমান ধূলিকণা ও অতি সূক্ষ ধূলিকণার জেরেই এই ঘটনা। সেখান থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বুধবার আসানসোলে বাতাসে ভাসমান অতিসূক্ষ ধূলিকণার গড় ছিল ৩২২ মাইক্রোগ্রাম প্রতি ঘনমিটার। সেখানে দিল্লির আনন্দ বিহারে ছিল ২৬৫ মাইক্রোগ্রাম প্রতি ঘনমিটার।
প্রসঙ্গত, দুই প্রকার ধূলিকণারই সহনশীল মাত্রা ১০০ মাইক্রোগ্রাম প্রতি ঘনমিটার। বুধবার বিকেল ৫টার সময়ও কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্যষদের ‘পিএম ২.৫’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী দিল্লিতে দূষণের গড় মাত্রা ছিল ২৭২। সেখানে আসানসোলে ‘পিএম ২.৫’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী দূষণের গড় মাত্রা ছিল ৩০২! তবে, ন্যাশনাল এয়ারকোয়ালিটি ইনডেক্স অনুযায়ী বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা নাগাদ দিল্লির গড় দূষণের মাত্রা ছিল (পিএম ২.৫) ৩৩৩। সেখানে আসানসোল ছিল ২৭৬। অর্থাৎ এদিন দিল্লি আবার আসানসোলকে পিছনে ফেলে দিয়েছে।
অন্যদিকে, ‘এয়ার কোয়ালিটি’ নামক একটি সংস্থার রিপোর্টে বুধবার দিল্লির দূষণমাত্রা ছিল যেখানে ১৭৪, সেখানে বর্ধমান ছিল ১৭৭। অর্থাৎ দূষণের নিরিখে বর্ধমান শহরও নিরাপদ নয়। কেন্দ্রের হিসেবেই নয়, রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের রিপোর্ট থেকেও পরিষ্কার, বুধবার বর্ধমান জেলার দূষণ ছাপিয়ে গিয়েছিল কলকাতাকেও। তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী যেখানে বর্ধমান জেলার অতিসূক্ষ্ম ধূলিকণার গড় উপস্থিতি ছিল ১৩০.৬২ মাইক্রোগ্রাম প্রতি ঘনমিটার, সেখানে কলকাতায় সেই গড় ছিল ৮৭.৩১। ধূলিকণার উপস্থিতির বিচারেও কলকাতাকে টেক্কা দিয়েছে বর্ধমান। বুধবার ধূলিকণা উপস্থিতি ছিল গড়ে ১৮১ মাইক্রোগ্রাম প্রতি ঘনমিটার যা কলকাতায় ছিল ১৭৬.৫৩। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের রিপোর্ট অনুযায়ী বৃহস্পতিবারও বর্ধমান শহরে দূষণের মাত্রা ছিল ‘খুব খারাপ’। ‘ভেরি পুওর’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ওই রিপোর্ট অনুযায়ী এদিন বর্ধমানের গড় দূষণের মাত্রা ছিল (পিএম ২.৫) ১৭৬। পিএম১০ অনুযায়ী দূষণ ছিল, ২৭২.৭৭। তবে, বর্ধমানের থেকে আসানসোলের দূষণ অনেকটাই বেশি। অনেকের অভিযোগ, শিল্পাঞ্চলের সরকারি-বেসরকারি প্রায় কোনও কারখানাই পরিবেশবিধি না মেনে কারখানা চালিয়ে ব্যাপক দূষণ সৃষ্টি করছে। অথচ, তাদের বিরুদ্ধে কোনও কড়া ব্যবস্থা নিতেও দেখা যায়নি। তবে, দুর্গাপুর ভালো জায়গায় রয়েছে।
আসানসোলের মহকুমা শাসক দেবজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে। আমরা দ্রুত রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আধিকারিক, আসানসোল কর্পোরেশনের আধিকারিক ও বিডিওদের নিয়ে বৈঠকে বসব। কীভাবে দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যায় তা খতিয়ে দেখা হবে। কারখানাগুলির উপরও নজরদারি বাড়ানো হবে।