সংবাদদাতা, বালুরঘাট: রাজনৈতিক দলগুলির একের পর এক মিছিল মিটিংয়ের কর্মসূচিতে বালুরঘাট শহরবাসী রীতিমতো অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। গত এক সপ্তাহে একের পর রাজনৈতিক দলের মিছিলে শহরের যানজট সৃষ্টি হওয়ায় বাসিন্দাদের ব্যাপক সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়েছে। শহরবাসীর পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলি প্রশাসনিক ভবন চত্বরে গিয়ে পথসভা ও ডেপুটেশনের কারণে চরম বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে। রাস্তা আটকে সভা করার কারণে পথচারীদের সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। উচ্চস্বরে মাইক বাজানোর কারণে থানা মোড়ে গার্লস স্কুলের ছাত্রীদের পঠনপাঠনের ব্যাঘাত ঘটছে। এনিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। যদিও রাজনৈতিক দলগুলির দাবি, প্রশাসন তাদের অনুমতি দিলে তারা সভা করে। প্রশাসন অনুমতি না দিলে কেউ মিছিল মিটিং করবে না।
বালুরঘাটের মহকুমা শাসক বিশ্বরঞ্জন মুখোপাধ্যায় বলেন, আমাদের কাছে এনিয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ এলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। তৃণমূল কংগ্রেসের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সভাপতি অর্পিতা ঘোষ বলেন, প্রশাসনের তরফে অনুমতি নিয়ে মিছিল মিটিং করা হয়। তবে আমরা অধিকাংশ মিছিল মিটিং স্কুলের সময়ে করি না। করলেও প্রশাসনিক ভবন চত্বরকে বাদ রেখে হিলি মোড় অথবা বাসস্ট্যান্ডে করি।
বালুরঘাটের সংসদ সদস্য বিজেপির সুকান্ত মজুমদার বলেন, গায়ের জোরে শাসক দল থানা মোড়ে মাইক লাগিয়ে একের পর এক সভা করছে। প্রশাসনের ক্ষমতার বলে ১৪৪ ধারা থাকলেও সেদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শাসক দল মাইক লাগিয়ে গান বাজিয়ে গিয়েছে। প্রশাসন কীভাবে এসবের অনুমতি দেয় তা বুঝতে পারছি না। প্রশাসনের এসব বন্ধ করা উচিত।
আরএসপি’র জেলা সম্পাদক বিশ্বনাথ চৌধুরী বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ মিছিল মিটিং করে থাকি। সাধারণ মানুষের কোনও অসুবিধা আমরা করি না। আর স্কুল, অফিসের সময়েকে বাদ রেখে আমরা কর্মসূচি নিয়ে থাকি।
গত এক সপ্তাহে বালুরঘাট শহরে রাজনৈতিক দলগুলি এনআরসি ও কুমারগঞ্জের গণধর্ষণের প্রতিবাদে একের পর এক কর্মসূচি নিয়েছে। অধিকাংশ কর্মসূচি এনআরসি কেন্দ্রিক। তৃণমূল ও বামেদের তরফে সিএএ এবং এনআরসি’র প্রতিবাদে মিছিল করা হচ্ছে। অন্যদিকে এর সমর্থনে বিজেপি মিছিল করছে। শহরে গত কয়েক দিনে একের পর পক্ষে বিপক্ষে মিছিল মিটিং রাজনৈতিক দলগুলি করায় বাসিন্দারা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। রাজনৈতিক দলগুলি সারা শহরে মিছিল করে, প্রশাসনিক ভবনে পথসভা করে। মিছিলের জেরে শহরে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। অনেকে রাস্তায় জরুরি কাজে বেরিয়ে আটকে পড়তে হচ্ছে। মিছিল মিটিংয়ে যাতে কোনওরকম বিশৃঙ্খলা তৈরি না হয় সেদিক নজর দিয়ে পুলিসের তরফে শহরজুড়ে প্রচুর পুলিস মোতায়েন করা হচ্ছে। পুলিস একাধিক রাস্তা ব্যারিকেড দিয়ে আটকে রাখছে। এতে বাড়ি থেকে কেউ বেরিয়ে চরম সমস্যার মধ্যে পড়ছে। ডেপুটেশনকে কেন্দ্র করে থানা মোড় চত্বরে পুলিস মোতায়েন করা হয়। ডেপুটেশন চলাকালীন জেলা প্রশাসনিক ভবনের দু’টি দরজা দিয়ে সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এতে অনেকে সরকারি দপ্তরে কাজে এসে প্রশাসনিক ভবনে ঢুকতে না পেরে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। গার্লস স্কুলের মতো যেখানে হাজারের বেশি পড়ুয়া রয়েছে, সেখানেও তাদেরকে চরম সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। অন্যদিকে, স্কুল ছুটির পর রাস্তায় যানজট থাকায় তাদের বাড়ি পৌঁছতে দেরি হচ্ছে।