শরীর-স্বাস্থ্যের আকস্মিক অবনতি। বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ আসতে পারে। সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক বিবাদ, ব্যবসায় নতুন সুযোগ ... বিশদ
কাশ্মীর উপত্যকার বদগাঁওয়ের সইবাগে জন্ম ও বড় হয়ে ওঠা ইউসুফ শাহের। ভারত সরকারের ডাক বিভাগে কাজ করতেন তার বাবা। ছোটবেলায় চিকিত্সক হওয়ার স্বপ্ন দেখলেও, পরে সরকারি আমলা হবেন বলে ঠিক করে সে। সেই মতো কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনো শুরু করে ইউসুফ। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই সে বর্তমানে নিষিদ্ধ ‘জামাত-ই-ইসলামি’ সংগঠনেরর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। তখন থেকেই দেশবিরোধী ভাবনায় হাতেখড়ি। শুধু তাই নয়, মৌলবাদী ভাবধারারও সক্রিয়ভাবে প্রচার করতে থাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এই ছাত্র। শেষে আর সরকারি আমলা নয়, ইসলামি শিক্ষক হিসেবে যোগ দেয় একটি মাদ্রাসায়।
হিজবুল প্রধান হিসেবে উপত্যকায় সন্ত্রাস ছড়াতে কাশ্মীরের যুব সমাজকে অস্ত্র তুলে নিতে উস্কানি দেওয়া তার অন্যতম কৌশল। যুব সমাজকে বিপথে চালিত করলেও কিন্তু নিজের পরিবারের কাউকেই নিজের পাপের (পড়ুন সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের) অংশীদার করেননি। তার ৫টি ছেলে ও ২টি মেয়ে রয়েছে। ৫ ছেলের মধ্যেই কাউকেই তিনি নিজের পথে টানেননি। তারা প্রত্যেকেই কোনও না কোনও সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকারি যুক্ত এবং সরকারি সুবিধা ভোগ করছে।
সালাউদ্দিনের বড় ছেলে সাকিল ইউসুফ শের-ই-কাশ্মীর ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস-এ স্বাস্থ্য সহকারী হিসেবে কাজ করে। চতুর্থ সন্তান এই হাসপাতালেরই চিকিত্সক। দ্বিতীয় ছেলে জাভেদ ইউসুফ রাজ্য শিক্ষা দপ্তরে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কর্মরত। আরেক সন্তান শাহিদ ইউসুফ শের-ই-কাশ্মীর ইউনিভার্সিটি অব এগ্রিকালচারাল সায়েন্স ও টেকনোলজিতে গবেষণা করছে। সর্বকনিষ্ঠ সন্তানও শ্রীনগরে নব উদ্যাগপতিদের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যুক্ত রয়েছে।
সালটা ১৯৮৭। রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে একবার ভাগ্য পরীক্ষা করার চেষ্টা করেছিল ইউসুফ শাহ। ওই একবারই। শ্রীনগরের আমিরা কাদাল কেন্দ্র থেকে মুসলিম ইউনাইটেড ফ্রন্টের হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করে। কিন্তু ন্যাশনাল কনফারেন্সের প্রার্থীর কাছে তিনি পরাস্ত হন। সেই নির্বাচনে হিংসা ছড়ানোর জন্য তাকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হয়। এরপর থেকেই কট্টর ভারত বিরোধী হিসেবে উঠে আসে বর্তমানে হিজবুল প্রধান সালাউদ্দিন। এরপর থেকেই তার নেতৃত্বে কার্যত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে জম্মু ও কাশ্মীর।
১৮৮৯ সালে জেল থেকে বেরনোর পরই হিজবুল মুজাহিদিনে যোগ দেন মহম্মদ ইউসুফ শাহ। সেই সময় হিজবুল প্রধান ছিলেন মহম্মদ এহসান দার ওরফে মাস্টার। পরে সে এই জঙ্গি সংগঠন থেকে আলাদা হতেই গোষ্ঠীর মাথায় বসে ইউসুফ। এরপরই নিজের নামও বদলে নেয় সে। দ্বাদশ শতাব্দীতে ক্রসেডে অংশ নেওয়া মুসলিম রাজনৈতিক ও সামরিক নেতা সালাউদ্দিনের নাম অনুসারে নিজের নাম বদলে ‘সৈয়দ সালাউদ্দিন’ (নম দি গুয়েরে) রাখার সিদ্ধান্ত নেয় ইউসুফ।
পাকিস্তানের মদতেই ভারতে একের পর এক নাশকতা চালানোর বিষয়টি একটি সাক্ষাতকারে নিজেই বলেছিল সালাউদ্দিন। সে কাশ্মীরে বসে পাকিস্তানের লড়াই লড়ছে বলেও জানিয়েছিল। মসনদে বসার পর প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নয়া পাকিস্তানের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। সেনা বা দুর্নীতির আকড় থেকে নয়, সবুজ ঘাসে গা ঘামিয়ে রাজনীতির কঠিন ময়দানে নেমেছিলেন তিনি। কথা দিয়েছিলেন, বারুদের গন্ধে নয় শিশুদের শৈশব কাটাতে হবে না। সুস্থ ও সুরক্ষিত পরিবেশে বড় হয়ে উঠতে পারবে সে। জঙ্গিদের মদত দিতে নয়, নাগরিক স্বার্থেই কাজ করবে আইনসভা। বিশ্বের শান্তিপ্রিয় দেশের মানচিত্রে পাকিস্তানকে উজ্জ্বলভাবে তুলে ধরতে শপথ নিয়েছিলেন তিনি। তবে বছর না ঘুরতেই প্রমাণ হয়ে গেল পাকিস্তান আছে পাকিস্তানেই।
সালাউদ্দিনের মতো জঙ্গিদের কাছে ভারতীয় সেনাবাহিনী চিরকালই শক্ত গাঁট। তাই তারা সরাসরি লড়াই না করে ছায়াযুদ্ধর কৌশল নিয়েই নিজেদের কাপুরুষতাকে আড়াল করতে চায়। হিজবুল কমান্ডার বুরহান ওয়ানি ২০১৬-তে সেনার গুলিতে খতম হয়। সেই ইস্যুকে নেতিবাচকভাবে কাজে লাগিয়ে সাধারণ কাশ্মীরিদের খেপিয়ে তোলে সালাউদ্দিন। হিজবুলের উস্কানির ফাঁদে পড়ে উপত্যকা কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। সেনাবাহিনীর উপর পাথরবাজি থেকে কাশ্মীরের বাসিন্দা, ভারতীয় জওয়ানদের খুন— কোনওটাই বাদ দেয়নি সালাউদ্দিন। সেই সঙ্গে হিজবুল ও তার সঙ্গীদের প্রত্যক্ষ মদতে জঙ্গি বিরোধী যে কোনও অভিযানে স্থানীয়দের সেনার বিরুদ্ধে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে থাকে জঙ্গিরা। এছাড়া, নিজেরা সন্ত্রাস চালানোর পাশাপাশি বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীকে অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করার অভিযোগ রয়েছে হিজবুলের বিরুদ্ধে। উপত্যকায় হিংসা ছড়াতে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রমূলক কাজে যুক্ত থাকায় সালাউদ্দিন ও লস্কর-ই-তোইবার প্রধান হাফিজ সইদের বিরুদ্ধে চার্জশিটও দাখিল করে এনআইএ।
ভারতে অস্থিরতা ছড়াতে সর্বদাই তত্পর থাকে পাকিস্তান। ভূস্বর্গে একাজে সালাউদ্দিনের নেটওয়ার্ককে তারা কাজে লাগাচ্ছে বলে অভিযোগ। সেনা ও স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে অঘোষিত যুদ্ধ চালাতে সমস্ত রসদ যোগাচ্ছে তারা। অর্থ-অস্ত্র পাঠিয়ে, হিংসা ছড়ানোর পরিকল্পনা করা, পাথরবাজদের টাকা দিয়ে সেনার বিরুদ্ধে হামলা চালাতে উস্কানি দেওয়ার মতো সমস্ত দেশবিরোধী কাজ ইসলামাবাদের অঙ্গুলিহেলনে করে চলেছে হিজবুল।