সঠিক বন্ধু নির্বাচন আবশ্যক। কর্মরতদের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মক্ষেত্রে বদলির কোনও সম্ভাবনা এই মুহূর্তে নেই। শেয়ার ... বিশদ
এতকাল উগ্র হিন্দুত্বের রাজনীতিকে আক্রমণ করে বিখ্যাত হওয়া দিগ্বিজয় সিংকে এখন সবথেকে সময় বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে হিন্দুত্বেরই বন্দনায়। কারণ তা না হলে একতরফা হিন্দুভোট বিজেপি প্রার্থী সাধ্বী প্রজ্ঞা পেয়ে যাওয়ার বিপদ আছে। আর উল্টোদিকে যিনি প্রার্থী সেই সাধ্বী প্রজ্ঞাকে বিজয়ী করতে তো মনে হচ্ছে গোটা দেশের তাবৎ হিন্দুত্ববাদী সংগঠন, সংস্থা আর ধর্মসম্মেলনের আহ্বায়করা ভোপালেই হাজির। ভোপালে দেখা যাচ্ছে সাধুসন্তদের অফিসিয়াল পরিচয়। কেউ বিজেপির সাধু, কেউ কংগ্রেসের সাধু। এখন বিকেল সাড়ে ৫ টা। হবিবগঞ্জে বিজেপির নির্বাচনী দপ্তরে ব্যস্ততা কম। অনর্গল মোবাইল বাজছে সুন্দরলাল পচৌরির। প্রচার কমিটির সম্পাদক। বিকেলেই রোড শো করতে আসছেন অমিত শাহ। উত্তর ভোপালে ঘুরবেন তিনি। ঠিক যেখানে সকালেই দিগ্বিজয় সিং এর ম্যাটাডোর প্রচার করেছে সেই এলাকাতেই ঘোরা হবে। তারই প্রস্তুতি চরমে থাকার কথা। কিন্তু সেরকম মারাত্মক টেনশন তো নেই। কেন? সুন্দরলাল বললেন, ওটা হয়ে যাবে। আমরা বরং দেখছি কংগ্রেসের যেসব প্রতিশ্রুতি ক্ষমতায় আসার পরও পালিত হয়নি। সেগুলি নিয়ে প্যামফ্লেট তৈরি হচ্ছে। বিলি করা হবে। অর্থাৎ রাজনৈতিক লড়াইতে আছে বিজেপি। আর সাধ্বী প্রজ্ঞার ভোটব্যাংক বাড়ানোর কাজটার দায়িত্ব নিয়েছে আর এস এস, বজরং দল, বিশ্ব হিন্দু পরিষদই। সবথেকে নিরাপদ প্রার্থী যিনি অনায়াসে দিগ্বিজয় সিং কে হারিয়ে দিতে পারতেন, সেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান কিংবা ফায়ারব্র্যান্ড লিডার উমা ভারতী, কেউই রাজি হননি দিগ্বিজয়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী হতে। তাহলে উপায়? তাই এসপার নয় ওসপার। বিজেপির হিন্দুত্ব উইং দায়িত্ব নিল এবং মালেগাঁও বিস্ফোরণের প্রধান অভিযুক্ত সাধ্বী প্রজ্ঞাকে প্রার্থী করে দেওয়া হল। ভোপাল আসন নিয়ে বিশেষ মাথাব্যথা ছিল না এতকাল কারও। কারণ এ আসন বিজেপির গড়। রাজনৈতিক বানপ্রস্থে চলে যাওয়া দিগ্বিজয় সিং আচমকা আবার রাজনীতির মূল স্রোতে ফিরে আসতে চেয়ে সরাসরি ভোপাল থেকেই প্রার্থী হয়েছেন। তাঁর এই কামব্যাক কি সফল হবে? আবার অন্যদিকে পাঁচ মাস আগে রাজ্য থেকে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া বিজেপি কি তাহলে উপলব্ধি করল নেহাৎ উন্নয়ন ভোটে জয়ের পথ প্রশস্ত করে না? তা না হলে উন্নয়নের মুখ শিবরাজ সিং চৌহান কেন হেরে যাবেন? অতএব এবার হিন্দুত্বের মুখ দিয়ে সরাসরি মেরুকরণ। সুন্দরলাল বললেন, দিগ্বিজয় সিং তো ঘোষিত হিন্দু বিরোধী। আমাদের এবার ধর্মযুদ্ধ। একটা কথা শুনে রাখুন, দেশ তখনই বেঁচে থাকবে মাথা উঁচু করে যতক্ষণ হিন্দুত্ব হবে চালিকাশক্তি। কংগ্রেসের কাউন্সিলার যোগেন্দ্র সিং চৌহান মনে করেন বিজেপি মহাভুল করল। বললেন, বিজেপির সময় খারাপ যাচ্ছে। বিনাশকালে বুদ্ধিনাশ। ভোপালের বিজেপি নেতাকর্মী তো ছেড়েই দিন সাধারণ বিজেপি সমর্থকদের ভোটই পাবেন না সাধ্বী প্রজ্ঞা। কেন জানেন? কারণ ভোপালের মানুষের প্রেস্টিজে লাগছে। তাঁদের বিজেপি এতটাই রাজনৈতিকভাবে মুর্খ বিচার করছে যে একজন সন্ত্রাস অভিযুক্ত সরাসরি উগ্র হিন্দুত্ববাদীকে দেখিয়ে ভোট চাইতে হচ্ছে। ভোপালববাসী উন্নয়নকে ভোট দিয়েছে এতকাল। তাঁরা সচেতন শিক্ষিত। তাঁদের এভাবে অপমান করেছেন নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহ। তাই নিজেদের শিক্ষিত সমর্থকদের ভোটই পাবে না এবার বিজেপি। কিন্তু আপনাদের প্রার্থী নিয়েও তো খুব একটা খুশি নয় কেউ? দিগ্বিজয় সিং এর মুখ্যমন্ত্রিত্বের শাসনকাল এতটাই মধ্যপ্রদেশকে পিছিয়ে দিয়েছিল যে কংগ্রেসের ফিরে আসতে সময় লাগলো ১৫ বছর। সেই দিগ্বিজয় সিংকে মানুষ কি আবার ভোট দেবে? যোগেন্দ্র সিং চৌহান এবার বললেন, মানুষ আবার কংগ্রেসমুখী হয়েছে। আমরা পাঁচ মাসে বুঝিয়ে দিয়েছি কংগ্রেস মানে কাজ পাওয়া। মেয়েদের বিয়ের টাকা ২১ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে আমাদের সরকার ৫১ হাজার করে দিয়েছে। লোন মকুব হয়েছে হাজার হাজার কৃষকের। আর কী চাই!
ফ্লাইওভারের সামনে থেকে তখন সাধ্বী প্রজ্ঞার ছবি লাগানো অটো যাচ্ছে মাইকে হনুমান চালিশা চালিয়ে, ভিতরে বসে আছেন এক গেরুয়া পরা সাধু। মাইক্রোফোনে বলছেন, সংসদ মে সন্ত ভেজিয়ে...সাধ্বী কো ভোট দিজিয়ে...। ভোপালে ধর্মযুদ্ধ! রাজনীতির কুম্ভমেলায়!