সঠিক বন্ধু নির্বাচন আবশ্যক। কর্মরতদের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মক্ষেত্রে বদলির কোনও সম্ভাবনা এই মুহূর্তে নেই। শেয়ার ... বিশদ
নির্বাচন ঘোষণাকালে কমিশন জানিয়েছিল নির্বাচনী প্রচারে সেনা বাহিনীর ছবি, সেনা পোশাক, সেনা বাহিনীকে নিয়ে বক্তৃতা করা যাবে না। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী সমেত একাধিক বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে পুলওয়ামার ঘটনা সামনে এনে সেনা বাহিনীকে নির্বাচনে ব্যবহার করতে তাঁদের দেখা গেছে। বিরোধীদের তরফ থেকে বারবার নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানালেও কমিশন কোনও কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এই বিষয়টিকে সামনে রেখে শতাধিক অবসরপ্রাপ্ত আইএস অফিসার এবং প্রাক্তন সেনা আধিকারিকরা ভারতের রাষ্ট্রপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। এই প্রাক্তন আধিকারিকরা রাষ্ট্রপতিকে তাঁর সংবিধান প্রদত্ত অধিকার প্রয়োগ করতে আবেদন জানিয়েছেন।
নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর মোতায়েন নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে প্রবল রাজনৈতিক তরজা চলছে। বিরোধীরা যখন রাজ্য পুলিসকে সরিয়ে রেখে কেবলমাত্র কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগ করে পশ্চিমবঙ্গের লোকসভা নির্বাচন চাইছে, তখন রাজ্যের শাসক দল কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলছে। রাজ্যের অনেক মন্ত্রী রাজ্য পুলিসের নিয়ন্ত্রণে লোকসভা নির্বাচন পরিচালনার জন্য সওয়াল করেছেন। তৃণমূল আবার, অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিকদের যেভাবে এরাজ্যে বিশেষ পর্যবেক্ষক হিসাবে পাঠানো হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বাস্তবে জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ২০(৩) ধারায় পর্যবেক্ষক হিসাবে সরকারি আধিকারিকের নিয়োগের কথা বলা হলেও সেই আধিকারিক কর্মরত অবস্থায় থাকবেন, না অবসরপ্রাপ্ত হলেও হবে আইনে সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কোনও উল্লেখ নেই। এক্ষেত্রেও জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের সংশোধন প্রয়োজন। পশ্চিমবঙ্গের অভিজ্ঞতায় দেখা যাচ্ছে, প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলি বিশেষ করে রাজ্যের শাসক দল প্রতিটি কেন্দ্রে প্রার্থীর পাশাপাশি একাধিক ডামি প্রার্থী দিয়ে ভোটের দিনে বুথে দলীয় লোকজন বাড়িয়ে ভোট প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে তৎপর থাকছে। এতে অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটছে। ডামি প্রার্থীদের শনাক্ত করা এবং তাদের নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখার মতো আইনি ভিত্তি নির্বাচন কমিশনের হাতে নেই। এ বিষয়েও নতুন আইন তৈরি করার প্রয়োজন রয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার বন্ধ করার জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো নির্বাচন কমিশনের আছে বলে মনে হয় না। জেলাস্তর পর্যন্ত সোশ্যাল মিডিয়ার মনিটরিং কমিটির সদস্যদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ এবং মনিটরিংয়ের জন্য উপযুক্ত সুব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন। বিদেশিদের দ্বারা প্রচার এই নির্বাচনে অন্যতম বিতর্কিত বিষয় হিসাবে উঠে এসেছে। উত্তর দিনাজপুরে তৃণমূলের প্রচারে বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা ফিরদৌসের রোড শো বা দমদম লোকসভায় টেলিভিশনের বাংলা সিরিয়ালের জনপ্রিয় অভিনেতা নুর গাজির তৃণমূলের প্রচারে যোগদান বা যাদবপুর লোকসভায় বিজেপি প্রার্থী অনুপম হাজরার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় মার্কিন কুস্তিগির গ্রেট খালির অংশগ্রহণকে নিয়ে তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। গ্রেট খালি ওরফে দলীপ সিং রানা হিমাচল প্রদেশের এক গ্রামে জন্মেছিলেন। পাঞ্জাব পুলিসের আধিকারিক হিসাবে কর্মরতও ছিলেন। কিন্তু, পরবর্তীতে দলীপ সিং রানা ডব্লুডব্লুই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হন। এবং, ২০১৪ সালে ফেব্রুয়ারিতে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নেন। পরবর্তী সময়ে ভারত সরকার তাঁকে ওভারসি সিটিজেনশিপ প্রদান করেন। ওসিআই-এর অর্থ হল, আজীবন ভিসা এবং এক প্রকার দ্বৈত নাগরিকত্ব বলা যায়। এঁরা যতদিন ইচ্ছা ভারতে থাকতে পারেন কিন্তু ওসিআই আইনে স্পষ্ট করে বলা আছে, তাঁরা এ-দেশের ভোটার হতে পারবেন না, এবং রাজনীতিতে অংশ নিতে পারবেন না। এছাড়া সরকারি পদ পাবেন না ও কৃষিজমি ক্রয় করতে পারবেন না। গ্রেট খালি যেহেতু ওসিআই-প্রাপ্ত নাগরিক তাই তাঁর অধিকার নেই ভারতীয় নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নেবার। অথচ, তিনি যাদবপুরের বিজেপি প্রার্থী অনুপম হাজরার মনোনয়ন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়ায় সরাসরি অংশগ্রহণ করেন যা আইনত তিনি পারেন না। এ বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে কমিশনের কাছে অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও, কমিশন কোনও ব্যবস্থা নিয়ে উঠতে পারেনি। কমিশনের আচরণে দিশাহীনতার ছাপ স্পষ্ট। উত্তর দিনাজপুরে ফিরদৌসের প্রচার বা কামারহাটিতে নুর গাজির প্রচারে ইতি টানতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক দ্রুত তাঁদের ভিসা বাতিল করে এই দেশ ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু বড় প্রশ্ন হল, নির্বাচন কমিশনের এক্ষেত্রে ভূমিকা আরও সুনির্দিষ্ট থাকা প্রয়োজন। নির্বাচনী বিধিতে কোথাও বিদেশিরা প্রচার করতে পারবে না এমন কোনও বিধি নেই। আইনের এই ফাঁকফোকর কাজে লাগিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস বিদেশিদের প্রচারে লাগিয়েছিল। এক্ষেত্রে আদর্শ আচরণবিধিতে স্পষ্ট নির্দেশিকা থাকা প্রয়োজন যাতে করে আগামী দিনে কোনও রাজনৈতিক দল নির্বাচনী প্রচারে বিদেশিদের ব্যবহার করতে না-পারে। বিষয়টি দেশের সার্বভৌমত্ব এবং সংহতির পক্ষে অত্যন্ত স্পর্শকাতর। আজ বিদেশি অভিনেতারা ব্যবহৃত হলে, কাল কাশ্মীরের নির্বাচনে সীমানার ওপার থেকে কোনও জঙ্গি সংগঠনের নেতাকে নির্বাচনে ব্যবহার করা হবে না তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। এই সমস্ত ক্ষেত্রেই উদ্ভূত অবস্থার প্রেক্ষিতে প্রয়োজন নির্বাচনী সংস্কার সাধনের জন্য বহু ক্ষেত্রে স্পষ্ট এবং শক্তিশালী আইন প্রণয়নের, না-হলে এবারের নির্বাচনে কমিশনকে যেভাবে দিশাহীন দেখা গেল, সেই ধারায় পরিবর্তনের কোনও সম্ভাবনা থাকবে না। আগামীতেও প্রয়োজন রয়েছে সর্বভারতীয় রাষ্ট্র কৃত্যক পরিষেবা (All India Service) অনুরূপ সর্বভারতীয় নির্বাচন পরিষেবার। তবেই কমিশনের পক্ষে নির্বাচনের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা সম্ভব।