নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বায়োমেট্রিক কার্ড নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই মৎস্যজীবীদের মধ্যে জটিলতা রয়েছে। যাঁদের রয়েছে, তাঁরা ঠিকমতো গলায় ঝোলান না। আবার যাঁদের হারিয়ে যায়, তাঁরা সরকারি ঢিলেমির জন্য নতুন করে তৈরি করতে চান না। এমতাবস্থায় চরম সমস্যায় পড়েছেন ভারতীয় নৌবাহিনী এবং উপকূলরক্ষী বাহিনীর কর্তারা। এই সমস্যার কথাই রাজ্যের নৌবাহিনীর সদর দপ্তর আইএনএস নেতাজি সুভাষে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে উঠে এল। শুক্রবার উপকূল নিরাপত্তা সংক্রান্ত বৈঠকে ভারতীয় নৌবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল করমবীর সিং, রাজ্যের নৌবাহিনীর প্রধান কমোডর সুপ্রভকুমার দে, উপকূল রক্ষী বাহিনীর (উত্তর-পূর্ব) কমান্ডার ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মলয় দে। সেখানেই এই পরিচয়পত্র তৈরি সংক্রান্ত ঢিলেমি ও জটিলতা দ্রুত কাটাতে মুখ্যসচিবকে অনুরোধ করা হয়। বৈঠক সূত্রে খবর, মুখ্যসচিব তাঁদের জানিয়েছেন, রাজ্যের সব মৎস্যজীবীদের যাবতীয় তথ্য রাজ্যের মৎস্য দপ্তরের কাছে রয়েছে। ফলে কারও বায়োমেট্রিক কার্ড হারিয়ে গেলে, সেটি নতুন করে তৈরি করতে আর সমস্যা হবে না। তবে মৎস্যজীবীরা যাতে সবসময় গলায় সেই কার্ড ঝুলিয়ে রাখেন, সেটা নিশ্চিত করার ব্যাপারেও রূপরেখা স্থির হয়েছে সংশ্লিষ্ট বৈঠকে। নৌবাহিনীর এক কর্তা জানিয়েছেন, মৎস্যজীবীদের এই পরিচয়পত্র গলায় ঝুলিয়ে রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন। কারণ, এটাই জলসীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ রোখা এবং কোনও মৎস্যজীবী এরাজ্যের কি না, তা চিহ্নিতকরণের অন্যতম হাতিয়ার। তাই শুধু সচেতন করলে হবে না, তা উপলব্ধি করেছে রাজ্য সরকার। সেকারণেই মৎস্যদপ্তরের পাশাপাশি নৌবাহিনী ও উপকূলরক্ষী বাহিনীও বিশেষভাবে নজরদারি চালাবে এবং প্রত্যেকেই যাতে এই বায়োমেট্রিক কার্ড সঙ্গে রাখেন, তা নিশ্চিত করবে।
মূলত মৎস্যজীবীরা যে নৌকা নিয়ে বঙ্গোপসাগরে যাচ্ছেন, সেগুলির সবক’টি ফিরছে কি না বা যেগুলি ফিরছে, সেগুলি ভারতীয়ই কি না, এগুলি খুঁটিয়ে দেখা অত্যন্ত প্রয়োজন বলেই মনে করেন কর্তারা। তাঁরা এও জানিয়েছেন, নৌকা নিয়ে যে মৎস্যজীবীরা যাচ্ছেন, তাঁরাই ফিরছেন নাকি, লুকিয়ে অন্য কেউ এরাজ্যে ঢুকছে, তার উপর নজর রাখা দরকার। নৌবাহিনীর এক কর্তা জানিয়েছেন, নজরদারির ক্ষেত্রে কোনও খামতি থাকে না। উপকূলরক্ষী বাহিনী এবং নৌবাহিনী সীমান্ত এলাকায় অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে থাকে। তবে অনুপ্রবেশকারী বা জঙ্গিরা নানা কৌশল জানে। সেক্ষেত্রে তারা ছক কষেই চোরাপথ ব্যবহার করতে পারে। তাই এনিয়ে সতর্ক থাকতে হবে বলেই বৈঠকে উঠে এসেছে।
সম্প্রতি ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ক্রুজ পরিষেবা শুরু হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রচুর বিদেশি এই জলপথে যাতায়াত করবে। তাই ‘প্রোটোকল সিকিউরিটি’ বৃদ্ধির জন্য আলোচনা হয়েছে। মোবাইল টাওয়ার বসানো, অটোমেটিক আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম (এআইএস) বসানো সহ একাধিক আধুনিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।