ব্রতীন দাস: করোনা সমগ্র মানব জাতিকে ঘরবন্দি করে ফেলেছে। নিজের ইচ্ছামতো ঘোরাফেরা বা বাজার-হাট করা এখন বিপজ্জনক। এই সময় যাঁদের বাড়ি সংলগ্ন কিছুটা জায়গা বা খোলা ছাদ, বারান্দা রয়েছে, তাঁরা সেই জায়গায় টবে শাক-সব্জি ফলাতে পারেন। যদি মাটি পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা থাকে, তাহলে দরকার নেই। শুধুমাত্র জলের উপর চাষ করা যেতে পারে। একে হাইড্রোপনিক্স পদ্ধতি বলে। প্লাস্টিকের ছোট পাত্রে, সসপ্যান কিংবা মগ জাতীয় পাত্রে জলের উপর সহজেই ছোলাশাক, কলমিশাক, মটরশাক, কুলেখাড়া, ধনেপাতা চাষ করা যায়। এতে শখ মিটবে। আবার নিজের হাতে ফলানো শাক খাওয়াও যাবে। দশ থেকে পনেরো দিনেই এইসব শাক পাওয়া যায়। এভাবে চাষের মূল কথা হল, জলের মধ্যেই শিকড় বৃদ্ধি পাবে। পাত্র যত বড় হবে, একসঙ্গে তত বেশি শাক পাওয়া যাবে। উদ্যানপালন বিশেষজ্ঞ ড. শুভদীপ নাথ জানিয়েছেন, এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, গাছের কাণ্ড ও পাতা যেন জলের উপরে থাকে। এবং শিকড় যেন ডুবে থাকে জলে। সেক্ষেত্রে জলের পাত্রের উপর ঝাঁঝরি বা জাল জাতীয় কিছু পেতে তার উপর শাক লাগানো যেতে পারে। ছোলা ও মটরশাকের জন্য একরাত বীজ ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর জল থেকে তুলে ওই ভিজে বীজ বেঁধে রাখতে হবে সুতির কাপড়ে। ফ্রিজে সব্জি রাখার ট্রেতে বীজ বাঁধা কাপড়ের পুঁটুলি একদিন রেখে দিতে পারলে ভালো। এতে বীজের অঙ্কুরোদগম দারুণ হয়। এবার অঙ্কুরিত বীজগুলিকে পাত্রে বসিয়ে দিতে হবে। এমনভাবে জল দিতে হবে যাতে অঙ্কুরের অগ্রভাগ জল স্পর্শ করে। পুরো অঙ্কুর ডুবে গেলে বীজ পচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে সাধারণ টিউবওয়েলের জল ব্যবহার করতে হবে। ফিল্টার করা জল দেওয়া যাবে না। কারণ, ওই জলে গাছের জন্য প্রয়োজনীয় মিনারেলের পরিমাণ অনেক কম থাকে। কলমি বা ধনেপাতার ক্ষেত্রে একরাত বীজ ভিজিয়ে রেখে পাত্রের ঝাঁঝরির উপর ছড়িয়ে দিতে হবে। যদি ঝাঁঝরির ছিদ্র বেশি ফাঁকা থাকে, তাহলে বীজ ছড়ানোর আগে টিস্যু পেপার বিছিয়ে দেওয়া যেতে পারে। কুলেখাড়ার ক্ষেত্রে বাজার থেকে কিনে আনা শাকের শক্ত ডাঁটা ঝাঁঝরির ছিদ্র দিয়ে জলের পাত্রের উপর সোজা করে দাঁড় করিয়ে দিতে হবে। ডাঁটা যেন এক থেকে দুই ইঞ্চি জলে ডুবে থাকে। তিন থেকে চার দিনের মধ্যে শাকের বৃদ্ধি শুরু হবে। নতুন পাতা গজাবে। ছোলা ও মটরের ক্ষেত্রে এক সপ্তাহের মধ্যে ঘন শাকের গোছ তৈরি হয়ে যাবে। তিন থেকে চারদিন অন্তর পাল্টে দিতে হবে পাত্রের জল। সার হিসেবে জলে গোলা জৈব এনপিকে ও হিউমিক অ্যাসিড কয়েক ফোঁটা দিতে পারলে ভালো। না পারলে কোনও অসুবিধা নেই। সাধারণ জলেই বেড়ে উঠবে শাক। কলমি ও ধনেপাতার ক্ষেত্রে বৃদ্ধি একটু ধীরে হয়। ছোলা, মটরশাক সাতদিনে তৈরি হয়ে যাবে। বাকিগুলির ক্ষেত্রে সপ্তাহ দু’য়েক সময় লাগবে। একবার বসিয়ে ধনেপাতা, কলমির দু-তিনবার কাটিং নেওয়া যাবে। পাত্রটি এমন জায়গায় রাখতে হবে, যেখানে দিনের বেশ কিছুটা সময় রোদ আসে। সকালের রোদ গাছের জন্য বিশেষ উপকারী।