গৃহে শুভকর্মের আয়োজনে ব্যস্ততা। বন্ধুসঙ্গ ও সাহিত্যচর্চায় মানসিক প্রফুল্লতা। উপার্জন বাড়বে। ... বিশদ
লখনউ থেকে রায়বেরেলি। আমেথি অথবা ফৈজাবাদ। উত্তরপ্রদেশে হাই প্রোফাইল একঝাঁক লোকসভা আসনের ভোটগ্রহণ শেষ হল। কিন্তু শহর থেকে গ্রামাঞ্চল—মোদির হাই ভোল্টেজ হিন্দু-মুসলিম ভাষণের সামান্যতম প্রভাবও দেখা গেল না। রামমন্দিরও বড়সড় এজেন্ডা হিসেবে নজরে এল না। এই কিছুদিন আগে পর্যন্তও নিয়ম ছিল, মোদি কোনও জনসভা অথবা বিবৃতিতে যে কথা বলতেন, তৎক্ষণাৎ তাঁর দলের নেতা-মন্ত্রী-প্রার্থীরা সেই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে নিজেদের প্রচার চালাতেন। মোদির কথাই দলের কথা। মোদির বেঁধে দেওয়া লাইনই দলের লাইন। ১৯ এপ্রিল প্রথম দফার ভোটের পরই মোদি আচমকা বিকশিত ভারত, উন্নয়ন, ২০৪৭ সালের উন্নত ভারত ছেড়ে ধর্মীয় বিভাজনের উগ্র প্রচারে ঢুকে পড়েছেন। কখনও বলছেন, কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে গৃহবধূদের মঙ্গলসূত্র কেড়ে নেবে। গৃহস্থের গোরু-মহিষ কেড়ে নেওয়া হবে। ধর্মের ভিত্তিতে মুসলিমদের সংরক্ষণ দেওয়া হবে। কংগ্রেসের ইস্তাহার ঠিক যেন মুসলিম লিগের ইস্তাহার ইত্যাদি। কিন্তু লখনউয়ে বিধানসভা মার্গে বিজেপির অত্যাধুনিক পার্টি অফিস, অথবা রায়বেরেলি-আমেথি-ফৈজাবাদের পথসভাতেও এসব ইস্যুকে প্রচারের হাতিয়ার করছে না গেরুয়া শিবির।এই দৃশ্য অভাবনীয়। অথচ তাই ঘটছে।
বিজেপির যুব মোর্চার ধনঞ্জয় শুক্লা কিংবা অযোধ্যার মণ্ডল সভাপতি সত্যেন্দ্র পান্ডে, সকলেই হেসে প্রধানমন্ত্রীর এইসব বিবৃতিকে পাশ কাটিয়ে গিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্যে বারংবার ফিরে এসেছে ডাবল ইঞ্জিন, যা উত্তরপ্রদেশে এবার বিজেপির অন্যতম প্রধান সহায়ক ইস্যু। এই ডাবল ইঞ্জিন হল, কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া বিনামূল্যে রেশন, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, কৃষকদের ৬ হাজার টাকা এবং যোগী আদিত্যনাথের শাসকনকালে উত্তরপ্রদেশে গুন্ডাগিরির অনেকটাই অবসান হওয়া। এই দুই ফ্যাক্টরই বিজেপিকে সাফল্য এনে দিতে পারে। কিন্তু ব্যক্তি মোদি ফ্যাক্টর অনেক স্তিমিত। এবার উত্তরপ্রদেশে ২০১৯ সালের মতো মোদি ঝড় টের পাওয়া যায়নি। মোদির উপর মানুষ যে প্রবল ক্ষিপ্ত, এরকমও যেমন নয়, আবার মোদি হাওয়া প্রবলভাবে টের পাওয়া যাচ্ছে, তাও নয়। বস্তুত বিজেপি অথবা সমাজবাদী পার্টি—সর্বত্র প্রতিটি দল একটাই কথা বলছে, ‘এবার সবাই চুপচাপ।’ বিজেপির টার্গেট ভোট হল ‘লাভার্থী’ এবং যোগীর মাফিয়া বিরোধী শাসন ব্যবস্থা। কিন্তু এই দুই ফ্যাক্টরে ভর করেও কিন্তু ৮০ আসনের উত্তরপ্রদেশে সিংহভাগ দখল করতে পারবে না বিজেপি। কারণ, বহু বছর পর দু’টি ফ্যাক্টর সফলভাবে বিরোধীরা প্রতিষ্ঠা করতে পারছে। প্রথমত, কংগ্রেসের দেওয়া ইস্তাহারের প্রতিশ্রুতি এবার প্রবলভাবে আলোচিত। অর্থাৎ মহিলাদের মাসে সাড়ে ৮ হাজার টাকা। স্নাতক হলেই যুবকদের বছরে এক লক্ষ টাকার একটা অ্যাপ্রেন্টিসশিপ পাইয়ে দেওয়া। মজুরি ৪০০ টাকার বেশি হওয়ার গ্যারান্টি। সোজা কথায় মোদির গ্যারান্টির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লড়াইয়ে নেমেছে কংগ্রেসের গ্যারান্টি। আমেথির ফুরৎসগঞ্জ, তিলোই, মোহনগঞ্জ, কেশরিয়া ইত্যাদি গ্রামে সম্প্রতি প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর ছোট ছোট জনসভায় কংগ্রেসের গ্যারান্টিগুলি নিয়ে যে প্রবল উচ্ছ্বাসের করতালি চোখে পড়ল, সেটা কংগ্রেসের জন্য আশাব্যঞ্জক। আর বিজেপি বিরোধীদের জন্য দ্বিতীয় সুসংবাদ হল, ‘ইন্ডিয়া’র শক্তিশালী মঞ্চ। অর্থাৎ কংগ্রেস এবং সমাজবাদী পার্টির জোটে কোনও ফাটল অথবা অনিচ্ছাকৃত কৃত্রিম ঐক্য আর নেই। অখিলেশ যাদব স্পষ্ট করে দলকে নির্দেশ দিয়েছেন, যেখানে কংগ্রেস, সেখানে ধরে নিতে হবে আমরাই প্রার্থী। অর্থাৎ ১০০ শতাংশ জোট হয়েছে। এই জোটের পক্ষের রসায়ন হল, প্রধানমন্ত্রীর লাগাতার ধর্মীয় উগ্রতার ভাষণে মুসলিম ভোট এককাট্টা হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ এবার আর মুসলিম ভোট মায়াবতীর দল পাবে না। জোটই পাবে। আর উচ্চবর্ণের মধ্যে বিজেপির উপর চাপা ক্ষোভ। কারণ, যোগী আদিত্যনাথ সরাসরি ঠাকুর সম্প্রদায়কে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রশাসন থেকে দল, সর্বত্র। তাই ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয় সমাজ ক্ষুব্ধ। বিরোধীদের যেখানে যেখানে ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয় প্রার্থী, সেখানে তারা বিজেপি সমর্থকদের ভোটের কিয়দংশ পেতে পারেন।
আর তাই বিজেপির ভোটব্যাঙ্কে বড়সড় ফাটল ধরা নিয়ে চর্চা এখন পিছনের সারিতে। দলের প্রথম এবং প্রধান উদ্বেগ, মোদি ফ্যাক্টর ফিকে। ধরেই নেওয়া হয়েছে জয়ী হলে এটাই মোদির শেষতম টার্ম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। তাই সেই মোদি ম্যাজিক আর নেই। তাঁকে দেখা হচ্ছে লেমডাক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। এখন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে এরপর কে, এই প্রশ্নকে ঘিরে। সবথেকে বেশি উঠে আসছে অমিত শাহের নাম। মোদির পর প্রধানমন্ত্রী অমিত শাহ। তারপর যোগী আদিত্যনাথ। জোরদার চর্চার এই হল ক্রমতালিকা! তবে তার থেকেও বড় চর্চা, বিজেপি নাকি ৫০’এর মধ্যে আটকে যাবে উত্তরপ্রদেশে!