পারিবারিক ঝামেলার সন্তোষজনক নিষ্পত্তি। প্রেম-প্রণয়ে শুভ। অতিরিক্ত উচ্চাভিলাষে মানসিক চাপ বৃদ্ধি। প্রতিকার: আজ দই খেয়ে ... বিশদ
জালনোট কনসাইনমেন্টের খবর পেয়ে এদিন ভোরে নিউ ফরাক্কায় ৩৪নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে একটি হোটেলে হানা দেয় পুলিস। ফরাক্কা থানার আইসি উদয়শঙ্কর ঘোষ অভিযানের নেতৃত্ব দেন। পুলিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই হোটেলের ৩৩ নম্বর রুমে হানা দিয়ে রঘুনন্দ নাইডু ও রাজেশ দেভাল নামে দু’জন জালনোট পাচারকারীকে ধরা হয়। ধৃতদের বাড়ি অন্ধ্রপ্রদেশের চিতোর জেলায়। ধৃতদের ব্যাগে তল্লাশি চালিয়ে ২০০০টাকার জালনোটের দু’টি বান্ডিল উদ্ধার করা হয়। রঘুনন্দার ব্যাগ থেকে ১৫০টি ও রাজেশের ব্যাগ থেকে ২০০টি মিলিয়ে মোট ৩৫০টি জাল ২০০০টাকার নোট উদ্ধার করা হয়েছে। অর্থাৎ, ধৃতদের কাছ থেকে সাত লক্ষ টাকার জালনোট, দু’টি মোবাইল ফোন, ট্রেনের টিকিট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
ধৃতদের জেরা করার পর পুলিসের এক অফিসার বলেন, জালনোটের কারবারের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে জাল বিছিয়ে রাখা হয়েছে। সেইমতো এদিন ভোরে সোর্স মারফৎ জালনোট হস্তান্তরের খবর মেলে। তার পরই অভিযান চালিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশের ওই পাচারকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়। ধৃতদের মধ্যে রাজেশ পেশায় লরিচালক। ধৃতরা অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে ট্রেনে হাওড়া হয়ে ফরাক্কায় আসে। হোটেলে এসে ধৃতদের কাছে জালনোটের বান্ডিল হস্তান্তর করে মালদহের বৈষ্ণবনগরের এক কারবারি। এই কনসাইনমেন্টের জন্য বৈষ্ণবনগরের কারবারিকে আসল এক লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে বলে ধৃতরা জানিয়েছে। ধৃতরা সেই জালনোট অন্ধ্রপ্রদেশের বিভিন্ন বাজার ও মান্ডিতে চালানোর টার্গেট নিয়েছিল। পুলিস সুপার বলেন, বৈষ্ণবনগরের ওই কারবারির নাম মিলেছে। তার খোঁজে তল্লাশি চলছে।
এদিকে, হোটেলে সিসি ক্যামেরা না থাকায় বৈষ্ণবনগরের ওই কারবারিকে চিহ্নিত করা নিয়ে সমস্যায় পড়েছে পুলিস। শুধু তাই নয়, ধৃত অন্ধ্রপ্রদেশের বাসিন্দাদের জেরা করার ক্ষেত্রে ভাষাও সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে কখনও পাথর, আবার কখনও মাছ বোঝাই লরি নিয়ে মুর্শিদাবাদ জেলা হয়ে উত্তরবঙ্গে পাড়ি দেয় রাজেশ। এই সুবাদে তার সঙ্গে জালনোট পাচারকারীদের আলাপ হয়। এদিনের চুক্তির ব্যাপারে কয়েক মাস আগে ফরাক্কা ও মালদহে ৩৪নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে লাইন হোটেলে জালনোট কারবারিদের সঙ্গে তার কয়েকবার আলাপ হয়েছে বলে রাজেশ জানিয়েছে। সম্ভবত পুলিসের নজর এড়াতেই জালনোট কনসাইনমেন্টের জন্য তারা সিসি ক্যামেরা বিহীন ওই হোটেল বেছে নিয়েছিল। তবে, রাজেশের সঙ্গীর ভূমিকা নিয়ে পুলিস এখনও ধোঁয়াশায় রয়েছে। কারণ, সে হিন্দি ও ইংরেজি ভাষা জানে না। অন্ধ্রের ভাষায় সে কী বলছে তা বোঝা যাচ্ছে না।
পুলিস সুপার বলেন, ধৃতকে জেরা করার জন্য অন্ধ্রপ্রদেশের ভাষা জানা ব্যক্তির সহযোগিতা নেওয়া হবে। সম্ভবত জালনোট কেনার অর্থ সে বিনিয়োগ করেছে বলে মনে হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, জেলায় জালনোটের আমদানি ক্রমশ বাড়ছে। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৭ সালে জেলা পুলিস ৫৯ লক্ষ ৬৩হাজার টাকার জালনোট সহ ৮৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। ২০১৮সালে ১কোটি ২৪লক্ষ ৫৮হাজার টাকার জালনোট সহ ৮৪জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চলতি বছর ৮ফেব্রুয়ারির মধ্যে ১০লক্ষ ২৮হাজার টাকার জালনোট সহ ১০জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিস। ধৃতদের অধিকাংশই দিনমজুর, বাড়ি মালদহ ও মুর্শিদাবাদ জেলায়। এর বাইরে ধৃতদের মধ্যে কয়েকজন বিহার ও ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা রয়েছে। এবারই প্রথম জালনোট পাচারচক্রের সঙ্গে অন্ধ্রপ্রদেশের যোগসূত্র মিলল।
এনিয়ে গোয়েন্দাদের সন্দেহ, পুলিসের নজর এড়াতেই সহজে বড়লোক হওয়ার টোপ দিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশের লরি চালকদের এই কারবারে শামিল করেছে জালনোট পাচারকারীরা। এর পিছনে বাংলাদেশে ঘাঁটি গেড়ে থাকা কারবারিদের হাত রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। কারণ, বিভিন্ন সময় উদ্ধার হওয়া জালনোটের অধিকাংশই বাংলাদেশ থেকে বৈষ্ণবনগর হয়ে এপারে এসেছে।