উচ্চশিক্ষায় নামী স্বদেশি/ বিদেশি প্রতিষ্ঠানে সুযোগ পেতে পারেন। স্ত্রীর স্বাস্থ্য বিষয়ে চিন্তা। কর্মে অগ্রগতি। ... বিশদ
দুই জুন তারিখটা অভিশপ্ত। করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল। মৃত্যু হয়েছিল অনেকের। অনেকে বেঁচেও গিয়েছিলেন। তবে তাঁদের পৃথিবীটা উল্টেপাল্টে যায়। তাঁদেরই একজন বাসন্তীর উত্তর মোকামবেড়িয়ার ছড়নেখালি গ্রামের রবীন নাইয়া। আর ইব্রাহিম আলি কাকদ্বীপ বিধানসভার মধুসূদনপুর পঞ্চায়েতের ৬৪ পল্লির বাসিন্দা। রবীনবাবুর পায়ে ও কোমরে মারাত্মক আঘাত লেগেছিল। একটানা কয়েক মাস বিছানায় ছিলেন। ডান পায়ে এখনও ক্ষত রয়েছে। অস্ত্রোপচার প্রয়োজন বলে চিকিৎসকরা বলেছেন। কিন্তু দুর্ঘটনার পর পাওয়া ক্ষতিপূরণের সব টাকা চিকিৎসা করাতেই শেষ। তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর আমি অক্ষম। অন্নসংস্থান করতে বড় ছেলে মাধ্যমিক পাশ করে একটি কাঠের দোকানে কাজে ঢুকেছে। ছোট ছেলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত। সে পর্যন্ত মিষ্টির দোকানে কাজ করছে। স্বপ্ন ছিল ছেলেদের পড়াশোনা করিয়ে মানুষ করে তুলব। হল না। যন্ত্রণা বাড়লে মনে হয় দুর্ঘটনায় মারা গেলেই বোধহয় ভালো হতো।’
ইব্রাহিম আলির গ্রামের ১১ জন করমণ্ডল দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিলেন। বেঁচে গিয়েছেন ইব্রাহিম একা। তিনি বলেন, ‘এই দুঃস্বপ্ন মন থেকে কবে মুছবে জানি না। কিন্তু এ যন্ত্রণা সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হবে।’ তাঁর দু’হাতেই অস্ত্রোপচার হয়েছে। ভারী জিনিস তোলা নিষেধ। ফলে চাষের কাজ কোনও কিছুই তাঁর পক্ষে করা সম্ভব নয়। কবে সক্ষম হবেন নিজেও জানেন না। স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে তাঁর সংসার। দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণের টাকায় সংসার চলছে। কিন্তু সে টাকায় কতদিন চলবে? এই প্রশ্ন তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে হাতের ক্ষত দেখিয়ে বললেন, ‘দু’হাতেই লোহার পাত বসেছে। কয়েক বছর পর বের করতে হবে। আর আগের মত কাজ করতে পারব কি না জানি না। বাড়িতে যখন একা বসে থাকি, চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেই ভয়াবহ দৃশ্য, লাশের স্তূপ, দুমড়ে মুছড়ে যাওয়া ট্রেনের বগি। চারদিকে কান্নার রোল, পরিজনদের খোঁজে উন্মাদের মত দৌড়ে বেড়াচ্ছেন লোকজন। এসব ভাবলে এখনও পা ঠকঠক করে কাঁপে।’