উচ্চশিক্ষায় নামী স্বদেশি/ বিদেশি প্রতিষ্ঠানে সুযোগ পেতে পারেন। স্ত্রীর স্বাস্থ্য বিষয়ে চিন্তা। কর্মে অগ্রগতি। ... বিশদ
২৫ মে গুয়াহাটি যাওয়ার সময় থেকেই ঘূর্ণিঝড় রেমাল নিয়ে কিছুটা সংশয় ছিল। ভয় লাগছিল, বিমান না বাতিল হয়ে যায়। অবশ্য ভালোয় ভালোয় গুয়াহাটি পৌঁছতেই দেখি ওখানে আকাশ পরিষ্কার। গরমও বেশ। পরের দিন রাতে হঠাৎ ফোনে একটা মেসেজ পাই—আগামী দু’তিন দিন খাসি পাহাড়ে প্রবল বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। পাহাড়ে বৃষ্টির অভিজ্ঞতা নতুন কিছু নয়। অবশ্য তখনও বুঝতে পারেনি, ফোনের মেসেজ দেখে অদৃষ্ট মুচকি হাসছিলেন। ভোর থেকে শুরু হল বৃষ্টি। দুপুরের দিকে বৃষ্টি কিছুটা কমল। রাত হতেই আবহাওয়া যেন পুরো বদলে গেল। শুরু হল আকাশভাঙা বৃষ্টি। সঙ্গে কারেন্ট অফ। মোবাইলে চার্জ শেষ। সঙ্গে ছোট ছেলে। চিন্তা বাড়ছিল। হোটেল কর্তৃপক্ষ ঘণ্টাখানেকের জন্য জেনারেটার চালু করায় মোবাইলে প্রাণ ফিরল। কিন্তু ২৮ মে সকাল থেকেই ফোনের নেটওয়ার্ক উধাও। হোটেলের ম্যানেজার জানালেন, এই পরিস্থিতিতে সহজে নেটওয়ার্ক আসবে না। বাড়ির লোকজন চিন্তা করবে ভেবে বৃষ্টি মাথায় নিয়েই রওনা হলাম মাওলিনংয়ের উদ্দেশে। রাস্তায় দু’এক জায়গায় ক্ষীণ টাওয়ার মেলায় সুস্থ থাকার খবর বাড়িতে জানাতে পেরেছিলাম। ওখানে পৌঁছে দেখি, না আছে বিদ্যুৎ, না চলছে জেনারেটর। নেই নেটওয়ার্কও। যাবতীয় ফোন বন্ধ।
২৯ মে সকালে শিলং ফেরার পথ ধরলাম। প্রবল ঝড়-বৃষ্টির মধ্যেই। ১০ ফুট দূরের সবকিছু তখন ঝাপসা। ঝড়ের ধাক্কায় গাড়ি রকিং চেয়ারের মতো দুলছে। ভয় পেয়ে গাড়ি থামিয়ে ঝড় কমা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে অনুরোধ করলাম চালককে। তিনি সাফ জানালেন, দাঁড়ালে বিপদ আরও বাড়বে। ততক্ষণে ডানপাশের পাহাড় থেকে একটা-দু’টো করে পাথর ভেঙে গড়িয়ে পড়ছে। কয়েক জায়গায় গাছ ভেঙে পড়েছে। সেসব এড়িয়ে কিছুটা এগতেই দেখি, সামনে রাস্তা বলে আর যেন কিছু নেই। জল-কাদায় কোনওমতে লাফাতে লাফাতে চলল গাড়ি। দুপুর একটা নাগাদ একটা মোড় ঘুরেই দেখি সামনে গাড়ির লম্বা লাইন। শুনলাম ধস নেমেছে। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর পুলিসের একটা জিপ দেখি সামনের দিকে যাচ্ছে। সকাল থেকে কিছু খাওয়া হয়নি। সেভাবে কোনও ভারী খাবারও সঙ্গে নেই। যা ছিল, তা দিয়েই কোনওমতে খাওয়া হল। আরও দু’ঘণ্টা পর গাড়ি একটু একটু করে এগতে শুরু করল। শুনলাম ধস যত সরানো হচ্ছে, ততই পাথর পড়ছে। দেড় ঘণ্টা পর আবার গাড়ি চলল। প্রায় আড়াই কিলোমিটার রাস্তা পেরতে সময় লাগল প্রায় পাঁচ ঘণ্টা। ধসের ওই এলাকা ছেড়ে আরও কিছুটা এগতেই ফের বিপত্তি। আবার গাড়ির দীর্ঘ লাইন। ফের ধস। ধীরে ধীরে ধসের এলাকার সামনে পৌঁছলাম। পাশের পাহাড়ি ঝোরা ততক্ষণে ঝরনার চেহারা নিয়েছে। ধসের এলাকা থেকে গাড়ি কিছুটা পিছিয়ে দিল পুলিস। প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর রাস্তা খুলল। ধীর গতিতে গাড়ি যখন শিলং পৌঁছল, তখন রাত প্রায় ১০টা। পরদিন রওনা হলাম কলকাতার উদ্দেশে। ফিরতে ফিরতে শুধু মাথায় ঘুরছিল গাড়িচালকের একটা কথা। প্রথম ধসের জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে চালক বলছিলেন, ‘এখানে পাথর খাদান রয়েছে। পাথরবোঝাই ট্রাক বাংলাদেশে যায়। আমরা ক্রমাগত প্রকৃতি ধ্বংস করেই চলেছি। প্রকৃতিও এবার প্রতিশোধ নিচ্ছে। নিজের মতো করে।’