গৃহে শুভকর্মের আয়োজনে ব্যস্ততা। বন্ধুসঙ্গ ও সাহিত্যচর্চায় মানসিক প্রফুল্লতা। উপার্জন বাড়বে। ... বিশদ
হুড়া বিজেপির শক্ত ঘাঁটি। সেটা টের পাওয়া গেল লক্ষ্মীনারায়ণ স্পেশাল টি স্টলে গিয়ে। মনতোষ মাণ্ডি আর তাঁর স্ত্রী জবারানি দোকান চালান। চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছিলেন দামোদর মাল। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, কৃষকবন্ধুর জন্য পাল্লা ভারী তৃণমূলের, দামোদর একথা বলামাত্র টোটো চালক অভিষেক মোদক জানালেন প্রতিবাদ। তাঁর দাবি, ‘হুড়ায় জিতবে বিজেপিই।’ অভিষেকের কথায় সায় দিলেন মনতোষ। চুলের জট ছাড়াতে ছাড়াতে জবারানি স্বামীকে বলেন, ‘তুমি গ্রামের কোনও খবরই রাখ না। মেয়েরা বেশিরভাগই তৃণমূলের দিকে।’ কেউ কেউ পাল্টা যুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করলেন, কিন্তু মনতোষ আর মুখে রা কাটলেন না।
দুঁদে রাজনীতিবিদ বলতে যা বোঝায়, বিজেপির পুরুলিয়া জেলা সভাপতি বিবেক রাঙা ঠিক তাই। জ্যোতির্ময় সিং মাহাতকে নিয়ে দলের ক্ষোভ একাহাতে সামলাচ্ছেন। তাঁর দাবি, এবার বিজেপি আরও বেশি ভোটে জিতবে। রামের ভোট বামে ফেরার বিষয়ে তাঁর জবাব, ‘একদিন হয়তো ওরা সিপিএমের ভোটব্যাঙ্ক ছিল। কিন্তু একের পর এক নির্বাচনে আমাদের ভোট দিয়েছে। তাই ওরা আর কেউ বাম নেই, সবাই রামের হয়ে গিয়েছে।’
তৃণমূল প্রার্থী শান্তিরাম মাহাতর মাথাটা বরফের চেয়েও ঠান্ডা। শান্তিরামবাবু তখন তৃণমূলের জেলা সভাপতি। আঢ়ষার কিছু কর্মী গাড়ি ভাড়া করে জেলা অফিসে এসে তাঁকে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। উত্তেজনা কমতেই শান্তিরামবাবু জানতে চাইলেন, খাওয়া হয়েছে? উত্তর ‘না’ হওয়ায় পকেটে হাত ঢুকিয়ে গুনে গুনে টাকা বের করে বললেন, অনেক বেলা হয়েছে, খেয়ে নে। বাকিটা তোদের গাড়ি ভাড়া। তারপর আর কারও রাগ থাকে? যারা ‘মুর্দাবাদ’ ধ্বনি দিচ্ছিল, তারাই ‘জিন্দাবাদ’ বলতে বলতে চলে গেল।
এহেন শান্তিরামবাবুকে প্রার্থী করে শীর্ষ নেতৃত্ব তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের গোড়ায় ফুটন্ত জল ঢেলে দিয়েছে। শান্তিরামবাবু বলেন, ‘চার টার্ম বিধায়ক ছিলাম। গতবার ৪৩৫ ভোটে হেরেছি। এখন আমি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নই। কিন্তু মানুষ এখনও সমস্যার কথা জানাতে আমার কাছেই আসে। এটাই আমার শক্তি।’
২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে পুরুলিয়া জেলায় বিজেপি ধারাবাহিকভাবে ভালো ফল করেছে। উনিশের নির্বাচনে পুরুলিয়া কেন্দ্রে ২ লক্ষেরও বেশি ভোটে জিতেছিল বিজেপি। একুশের ভোটে জেলায় ন’টির মধ্যে ৬টি পেয়েছিল বিজেপি। তা সত্ত্বেও বিজেপি পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্রে এগিয়ে রয়েছে মাত্র ৮ হাজারে। পঞ্চায়েত ভোটের হিসেবে তৃণমূল এগিয়ে প্রায় দেড় লক্ষ ভোটে। এই অঙ্কটাই তৃণমূলকে অক্সিজেন দিচ্ছে।
পুরুলিয়ার ভাংড়া পঞ্চায়েত গতবার পেয়েছিল বিজেপি। এবার ১৪টির মধ্যে ১১টি আসনেই জিতেছে তৃণমূল। পঞ্চায়েতে লিড ছিল পৌনে দু’হাজার। এবার টার্গেট তিন হাজার, জানালেন তৃণমূলের বাইক মিছিলে যোগ দেওয়া সম্পূর্ণ ওঝা, নেহেরু মাহাতরা। পিছন থেকে তাড়া দিলেন অঞ্চল সভাপতি বিকাশ মাহাত। বললেন, ‘চল, সময় নষ্ট করিস না। যেতে হবে অনেকটা পথ।’