ব্যবসায় বাড়তি বিনিয়োগ প্রত্যাশিত সাফল্য নাও দিতে পারে। কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতি। শ্বাসকষ্ট ও বক্ষপীড়ায় শারীরিক ক্লেশ। ... বিশদ
সাতদিনের বেশি লড়াইয়ের পর গতকাল রাত ১২টাতেই বুঝতে পারি, লড়াকু ছেলেটা আর বোধহয় পারবে না। কার্ডিওথোরাসিক বিভাগের অধ্যাপক শুভেন্দুশেখর মহাপাত্রের ফোন পেলাম। শুনলাম, ওর নাড়ির গতি মৃদু হয়ে আসছে। যাবতীয় ওষুধপত্র দেওয়ার পরও রক্তচাপ পড়তে আরম্ভ করেছে। ৩০ বছর খুব কাছ থেকে জীবন-মৃত্যুকে দেখার অভিজ্ঞতায় বুঝতে পারি, আর হয়ত কিছুক্ষণ, তারপরই সব শেষ।
অথচ এই একরত্তিটার জন্য কী-ই না করে গিয়েছি আমরা! চেস্ট-এর প্রধান ডাঃ সোমনাথ কুণ্ডু থেকে শুরু করে অর্থোপেডিকের ডাঃ তন্ময় দত্ত....আরও কত ডাক্তার, কত নার্স এই লড়াইয়ের সাক্ষী! কম করেননি সুপার ডাঃ মিশ্র, অধিকর্তা ডাঃ বন্দ্যোপাধ্যায়ও। চাকরিজীবনের শেষার্ধে এসে জোরের সঙ্গে বলতে পারি, মানুষের প্রাণ বাঁচানোর জন্য শেষ মুহূর্তটুকু পর্যন্ত লড়াই করার এই পেশার থেকে সম্মানের কিছু হয় না।
যুক্তি-বুদ্ধি-বিজ্ঞানের পেশা ডাক্তারি। কিন্তু, তা বলে মোটেই নাস্তিক নই। বরং উল্টোটা, ভীষণরকমই আস্তিক। ঈশ্বরকে বলেছি, ওকে সুস্থ করে দাও। এখন বুঝি, প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করার প্রার্থনা ছিল তা। অল্পবয়সে এ ধরনের মৃত্যু ভীষণভাবে মন খারাপ করে দিত। জুনিয়রদের অনেককেই দেখি মৃত্যু হলে, রোগীর শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকলে, ভেঙে পড়েন। অনেকে মুখ লুকিয়ে কাঁদেন। আমরা তাঁদের কাউন্সেলিং করি, বোঝাই।
ঋষভের মৃত্যু মনের এককোণে চিরস্থায়ী একটা শূন্যতা তৈরি করে গেল। কিন্তু তা নিয়ে মনখারাপ করে, কাজকর্ম ফেলে পড়ে থাকার সময় নেই। কারণ ওর পাশের বেডে যিনি আছেন, তার পাশের বেডে, তার পাশে... সবাই কারও না কারও বাবা, কারও মা, কারও ভাই, কারও বোন, কারও স্বামী বা স্ত্রী। তাঁদের বাঁচাতে হবে না? লড়াই চলতেই থাকবে। সেটাই বোঝাই ছোটদের। বলি, তোমরা সেরাটা দিয়ে যাও। আমরা এটুকুই করতে পারি। ছোট্ট ঋষভের জন্য রইল বুকভরা ভালোবাসা, আদর। যেখানে থাক, ভালো থাক। এমন লড়াকু ছেলে কমই আসে পৃথিবীতে।