গৃহাদি নির্মাণে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণপ্রাপ্তির যোগ আছে। কাজকর্মের স্বাভাবিক গতি বজায় থাকবে। বাতের বৃদ্ধি। ... বিশদ
কয়লা, টাকার বান্ডিল, ক্ষমতার লড়াই, গুলির শব্দ... এটাই তো ওয়াসেপুর! কয়লার রাজধানী ধানবাদের ‘গহনা’। একটু থমকে গেলেন কাদরি। কতটা খোলাখুলি আলোচনা করা যায়? ভেবে নিলেন সেটাই। তারপর কান থেকে খুলে রাখলেন ইয়ারবাডটা। চওড়া সোফায় একটু গুছিয়ে বসলেন। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস, ‘এখন আরও খারাপ। কয়লা, স্ক্র্যাপ লোহা তো ছিলই। এখন মাথাচাড়া দিয়েছে জমি, প্রোমোটিং, রাঙ্গদারি।’ সেটা কী? ‘বুঝলেন না? সোজা কথায় বন্দুক দেখিয়ে তোলাবাজি। এক্সটরশন। আজকের গ্যাংওয়ার এই রঙ্গদারির দখল রাখতেই। খালি চোখে দেখলে মনে হবে, এলাকা শান্ত। কিন্তু না।’ একটু থমকালেন ‘ডেফিনিট’। বললেন, ‘সিনেমায় স্বাধীনতার আগে থেকে ২০০৪ পর্যন্ত ওয়াসেপুরের কাহিনি। গুনলে দেখবেন ওই ৫০ বছরে ৩০ থেকে ৩৫টা খুন হয়েছে। আর এখন? পুলিসের রিপোর্ট ঘাঁটলে জানতে পারবেন, ২০১২ থেকে ওয়াসেপুর গ্যাংওয়ারকে কেন্দ্র করে খুনের সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়ে গিয়েছে।’
কাদরি বুঝিয়ে দিলেন, ওয়াসেপুর আছে ওয়াসেপুরেই। আপাত শান্ত, কিন্তু ইঙ্গিত ঝড়ের। খাদান নিয়ে অভিজ্ঞদের কথায়, কয়লা চুরি ও ট্রেড ইউনিয়নকে হাতে রাখতে পারলেই কাঁচা টাকা। আর এর জন্য দরকার অসীম ক্ষমতা। তাই রমরমা বাহুবলীদের। এক কয়লা মাফিয়া ডন সূর্যদেও সিং (সিনেমায় রামাধির সিং) ছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চন্দ্র শেখরের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। ঝরিয়ার এই প্রাক্তন বিধায়কের হাতে ছিল ট্রেড ইউনিয়ন পরিচালনার সম্পূর্ণ ক্ষমতা। তার প্রমাণ এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে ধানবাদের সিং ম্যানশন। আবার বর্তমানে ধানবাদ কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী ঢুলু সিংও ট্রেড ইউনিয়ন ও কয়লা খাদানের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।
ফাহিম খান জেলে। তাও ওয়াসেপুরে বিলক্ষণ লড়াইয়ে আছে তার গ্যাং। বিপক্ষ? তারই ভাইপো কুখ্যাত গ্যাংস্টার প্রিন্স খান, ওরফে ওয়াসেপুরের দাউদ, ওরফে পিক। তাই গ্যাংওয়ার চলছে। লাগাতার। সূত্রের খবর, পিকে এখন ফেরার। আমিরশাহিতে। তাই প্রিন্স ওয়াসেপুরের দাউদ। তার বিরুদ্ধে রেড কর্নার নোটিস জারি করেছে ইন্টারপোল। গলা নামিয়ে অনেকেই বললেন, দেশের বাইরে থাকলেও ধানবাদ তার মুঠোয়। তার জলজ্যান্ত উদাহরণ, গত বছর মে মাসে ফাহিমের ছেলে ইকবালের উপর প্রিন্স গ্যাংয়ের গুলিবর্ষণ। এই ঘটনায় মৃত্যু হয় ইকবালের ডান হাত ঢোলুর। ক্ষত এখনও দগদগে ইকবালের মনে। একদা কলকাতায় বড় হয়ে ওঠা ইকবালের বুকে বুলেটের দাগ এখনও মেলায়নি। ওয়াসেপুরের বাড়ির নীচে গ্যারাজে বসে কথা বলছিলেন। পুড়ে যাচ্ছিল একটার পর কেটা সিগারেট। এই গ্যারেজেরই উল্টোদিকের একটা অফিস ঘর আর বাড়িতেই গুলিবৃষ্টি করেছিল সুলতান গ্যাং। অফিস মেরামত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বাড়ির দেওয়ালে গুলির দাগ এখনও পরিষ্কার (ছবি তোলা নিষেধ)। প্রিন্সের কথা উঠতেই রেগে গেলেন ইকবাল। বললেন, ‘সাপ ছোবল দিতে এলে আপনি কী করবেন? এটাও এক ব্যাপার। প্রশাসন মানুষকে নিরাপত্তা দিতে না পারলে নিজের সুরক্ষা নিজেকেই করতে হবে। তার জন্য যা করার, তাই করব। ভয় নেই। আমরা তৈরি আছি।’
সিনেমাতেও কিন্তু রামাধির সিংয়ের মুখে সেলফ ডিফেন্সে খুনের তত্ত্ব উঠে এসেছিল। জানা গেল, প্রিন্স খান আগে ডেয়ারির কারবার করে দিন গুজরান করত। তাকে প্রলোভন দেখিয়ে রাঙ্গদারির কাজে নামিয়েছে সিস্টেমই। তাই লড়াই চলছে। কাকা-ভাইপোর। দখলের। ক্ষমতার। বিজেপি-কংগ্রেস প্রকাশ্যে কেউ স্বীকার না করলেও সত্যিটা ঘুরে বেড়াচ্ছে এখানকার বাতাসে—ধানবাদের রাজনীতির প্রাণভোমরা এখনও ওয়াসেপুর। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে এক গ্যাং মেম্বার বলছিলেন, ‘রাজনীতি নয়, আমরা রক্তনীতিতে বিশ্বাস করি। কারও দম নেই আমাদের খতম করার। আমরাই শুধু আমাদের খতম করতে পারি।’