পড়ে গিয়ে বা পথ দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্তির যোগ থাকায় সতর্ক হন। কর্মে উন্নতি ও সাফল্যের যোগ। ... বিশদ
‘খেরো খাতা’ আদতে রাফ খাতা। লেখক, কবি, সাহিত্যিক গবেষকদের ‘মনের আয়না’ও। খেয়ালে খাতার পরতে পরতে আঁকিবুকি কাটেন। ভাব-ভাবনা ফুটিয়ে তোলেন। ভাবের কাটাকুটি খেলা চলে। যতক্ষণ পছন্দ না হচ্ছে ততক্ষণ কাটতেই থাকেন। তার পর ফাইনাল। নজরুলের এমন ১৩টি খাতার খোঁজ আগেই পেয়েছিল কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। এবার সেগুলির ডিজিটালাইজেশনের কাজ শুরু হয়েছে। অর্থাৎ, খাতার প্রতিটি পৃষ্ঠা স্ক্যান করে কম্পিউটারে সুরক্ষিত রাখা। আর সেটা করতে গিয়েই তাজ্জব গবেষকরা। উঠে আসছে বিদ্রোহী কবির সাধন-ভজনের নানান অজানা দিক। খুলে দিয়েছে তাঁর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নির্ভেজাল বার্তা ও অন্তরের গভীর চাওয়া-পাওয়ার অভিমুখ।
দুষ্প্রাপ্য ওইসব খাতায় প্রচুর গান লিখেছেন নজরুল। ইসলাম ধর্মের ভক্তিমূলক সঙ্গীত থেকে গজল, হিন্দুধর্মের শ্যামাসঙ্গীত থেকে হরি-বন্দনা—সব সৃষ্টির একত্র সহাবস্থান। লেখার আগে পৃষ্ঠার উপরে লিখতেন—‘জয় শ্রী দুর্গা’। আবর একই সঙ্গে সাধনায় মগ্ন থাকতেন খোদা ও হরির। ‘খেরো খাতা’র একটি অংশে লেখা—‘খোদার রহম চাও যদি, নবি জিরে ধর…।’ ঠিক তার পরের অংশে কবি লিখছেন—‘আমি নিবেদিত শ্রীহরির নামে…।’ আবার নজরুল কি জ্যোতিষশাস্ত্র নিয়েও চর্চা করতেন? সেই আলোচনাতেও ইন্ধন জুগিয়ে দিয়েছে ‘খেরো খাতা’গুলি।
গবেষকরা জানিয়েছেন, বেশ কয়েকটি পৃষ্ঠায় দেখা গিয়েছে জ্যোতিষ চর্চার ছক। সেই ছকে কার ভাগ্য গণনা করেছিলেন, তা অবশ্য জানা যায়নি। তবে তিনি যে, খোদা, দুর্গা, কালী, শ্রীহরির একযোগে সাধনা কিংবা রাম-রহিমকে মেলানোর মাঝেও জ্যোতিষশাস্ত্র নিয়ে নাড়াচাড়া করতেন, সেটা প্রকাশ্যে এনে দিয়েছে ‘খেরো খাতা’গুলি। এমন বহুমুখী প্রতিভা সত্ত্বেও কবির জীবনে চরম আর্থিক অনটন পিছু ছাড়েনি। তারও প্রমাণ মিলেছে ছত্রে ছত্রে। কোনও কোনও পৃষ্ঠায় লেখা, কোন গান কাকে দিয়ে গাওয়াবেন। আবার কোনও পৃষ্ঠার এক কোনে লেখা, কার কাছে কত টাকা পাবেন। আর্থিক অনটনের যন্ত্রণাও লিখে রেখেছিলেন ‘খেরো খাতায়’— ‘আজ আমার টাকাটা পেলে বেশ ভালো হতো।’
কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অধ্যাপক শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ব্রিটিশ লাইব্রেরির ফান্ডে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় ও আসানসোল বিবি কলেজ যৌথ উদ্যোগে কবির খেরোর খাতা ও পারিবারিক চিঠিগুলির ডিজিটেলাইজ করা হচ্ছে। বিভিন্ন গান শুরুর আগে কবি খাতার উপর লিখেছেন, জয় শ্রী দূর্গা। খাতায় তাঁর জ্যোতিষ চর্চার প্রমাণ মিলেছে।’
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর আক্রমণের প্রেক্ষিতে ‘খেরো খাতা’য় অজানা নজরুল অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক বলে মনে করছেন বহু গবেষক। সম্প্রীতির কবি দুই বাংলাতেই সময় কাটিয়েছেন। কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার পর বাংলাদেশের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে শিক্ষার আদান-প্রদানে মউ হয়েছিল। বর্তমান পরিস্থিতিতে সে সব এখন অকার্যকর। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার চন্দন কোনার বলেন, ‘এখন কোনও শিক্ষার আদান-প্রদান হচ্ছে না।’
তাই হয়তো জাতীয় কবির ‘খেরো খাতা’র খোঁজ রাখার গরজ হারিয়ে অশান্ত বাংলাদেশ!