কর্ম, বিদ্যা ক্ষেত্রে উন্নতির যোগ। আয় ব্যয় ক্ষেত্রে সমতার অভাব। স্বাস্থ্য ভালো থাকলেও আঘাতযোগ থাকায় ... বিশদ
বড়ঞা থানার বধূয়া গ্রামে বাড়ি আল্লারাখা শেখের। ২৬/১১ মুম্বই হামলা কেড়ে নিয়েছে বাড়ির মেজো ছেলে আসফর আলিকে। তখন আসফর বাইশ বছরের তরতাজা যুবক। ওইদিন মুম্বইয়ের ভিটি স্টেশনে সন্ত্রাসবাদীদের বুলেটে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। একদিন পর নিথর দেহ এসে পৌঁছেছিল বাড়িতে। সহানুভূতি জানাতে আল্লারাখার বাড়িতে লাইন লাগিয়ে দিয়েছিলেন রাজনৈতিক নেতারা। মাসখানেক পর থেকে কেউ আর খোঁজখবর রাখেননি। এখনও কেউ রাখেন না। মহারাষ্ট্র সরকারের তরফে ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলেন। রেলের ক্ষতিপূরণ পেতে ঘোরতর সঙ্কটে পড়েছে আসফরের পরিবার।
হামলার কয়েকমাস আগে মুম্বইয়ের একটি কোম্পানিতে কাজে যোগ দিয়েছিলেন আসফর। কাজ ছিল কোম্পানির সামগ্রী ভিটি স্টেশনে পৌঁছে দেওয়া। স্টেশন থেকে সামগ্রী ছাড়িয়ে কোম্পানিতে নিয়ে আসা। ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর ভিটি স্টেশনে ছিলেন আসফর। আচমকা সন্ত্রাসবাদী হামলা। এলোপাথাড়ি গুলি চালাচ্ছে পাক-জঙ্গিরা। আসফর তার মধ্যে পড়ে যান। গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।
সেই সময় অনেকে এসেছিলেন পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে। তৎকালীন বহরমপুরের সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরী পরিবারের প্রতি সহানুভুতি জানিয়ে ১০ হাজার টাকাও দিয়েছিলেন। মহারাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে পরিবারকে চার লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। রেল ট্রাইবুনালে ক্ষতিপূরণ পাওয়া নিয়ে মামলা চলে। সেই মামলায় জয়ী হয় আসফরের পরিবার। কিন্তু অ্যাকাউন্টের ভুলে ক্ষতিপূরণের টাকা এখনও পাননি আল্লারাখ শেখ। পরিমাণ প্রায় চার লক্ষ টাকা। আল্লারাখা সাহেব সোমবার বলছিলেন, ‘গত ১১ নভেম্বর রেলমন্ত্রক থেকে আমাদের কাছে চিঠি আসে। তাতে চার লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা জানানো হয়েছে। কিন্তু অ্যাকাউন্ট নম্বর ভুল হওয়ার কারণে সেই টাকা এখনও হাতে আসেনি।’
বর্তমানে আসফরের পরিবারে আটজন সদস্য রয়েছেন। মৃতের বাবা আল্লারাখা শেখ ও মা আনারকলি বিবি বয়সের ভারে আর ঠিকমত চলাফেরা করতে পারেন না। পরিবারের বড় ছেলের রোজগারেই সংসার চলে। আক্ষেপ করে আল্লারাখা সাহেব বলছিলেন, ‘ছেলে মারা যাওয়ার পর মাসখানেক ধরে অনেকে এসেছিলেন। ওঁরা সহানুভূতি জানিয়ে পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছিলেন। পরবর্তীতে কেউ মনে রাখেননি। কোনও নেতা বা আমলা কেউ আমাদের খোঁজও নেন না।’
মৃতের মা আনারকলি বিবি বলেন, ‘মুম্বই হামলার স্মৃতি এখনও আমাদের কাছে টাটকা। ছেলের মৃত্যুর পর কয়েকমাস ধরে আমরা ঠিকমত ঘুমোতেও পারিনি। আমাদের আর্থিক অবস্থাও ভাল নয়। তা সত্ত্বেও ছেলের স্মৃতি হাতড়াতে প্রতিবছর ২৬/১১ তারিখে এলাকার দুঃস্থদের একটু খাওয়ানোর ব্যবস্থা করি। এবারও করেছি। আমার ছেলে গরিব, দুঃস্থদের সাহায্য করতে খুব ভালোবাসত। আমাদের এই উদ্যোগে তাঁর আত্মা শান্তি পাবে।’