কর্ম, বিদ্যা ক্ষেত্রে উন্নতির যোগ। আয় ব্যয় ক্ষেত্রে সমতার অভাব। স্বাস্থ্য ভালো থাকলেও আঘাতযোগ থাকায় ... বিশদ
রামপুরহাট শহরের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের চাকলমাঠ এলাকার বাসিন্দা বিশ্বনাথ দাস। তিনি একটি পাইকারি দোকানের কর্মচারী। ২০১১ সালে স্ত্রী মারা যাওয়ার পর একমাত্র ছেলেকে নিয়ে থাকতেন। গত ১৭ আগস্ট বিকেল থেকে হঠাৎই নিখোঁজ হয়ে যান তাঁর বছর তেইশের ছেলে তীর্থনাথ দাস। তীর্থনাথ একটি জিম সেন্টারে প্রশিক্ষকের কাজ করতেন। আত্মীয়স্বজনের বাড়ি থেকে শুরু করে সম্ভাব্য সমস্ত খোঁজাখুঁজি করেও ছেলেকে না পেয়ে পরের দিন বিশ্বনাথবাবু থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু তিনমাসের বেশি হয়ে গেল ছেলের হদিশ দিতে পারেনি পুলিস। বিশ্বনাথবাবু মহকুমা পুলিস আধিকারিক থেকে জেলার পুলিস সুপারের পর্যন্ত দ্বারস্থ হয়েছেন। কিন্তু ছেলের সন্ধান এখনও মেলেনি। বাধ্য হয়ে অসহায় বিশ্বনাথবাবু ছেলের ছবি হাতে মহকুমা শাসকের অফিসের বাইরে অবস্থানে বসেছেন। মাতৃহারা ছেলেকে দ্রুত ফিরিয়ে দেওয়ার আকুতি তাঁর চোখেমুখে। অসহায় বাবার পাশে দাঁড়িয়েছেন বেশ কিছু মানুষ। বিশ্বনাথবাবু বলেন, ছেলে অনলাইনে গেম খেলত। নিখোঁজ হওয়ার তিনদিন পর জানতে পারি একজনের কাছে স্কুটি বন্ধক দিয়ে ৬৫ হাজার টাকা ধার নিয়েছে। আমি ভেবেছিলাম হয়তো সে কারণে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে ও বাড়ি থেকে চলে গিয়েছে। তাই আমি দু’ দিনের মধ্যে টাকা মিটিয়ে স্কুটি ছাড়িয়ে আনি। ভেবেছিলাম এবার হয়তো ছেলে ফিরে আসবে। কিন্তু কই? ওই যুবককেই সন্দেহ করেছিলাম। পুলিস ওই যুবককে থানায় নিয়ে এসে জেরা করে ছেড়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, আগে আমার ছেলে অনলাইন গেম খেলত না। চক্রের পাল্লায় পড়ে গেমে আসক্ত হয়ে পড়ে সে। তাঁর দাবি, সেই চক্রই হয়তো ছেলের কাছে আরও টাকা পাবে। সেজন্য তাকে আটকে রেখেছে। রামপুরহাটে এই ধরনের ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। ওই চক্র ধরা পড়লেই ছেলে ফিরে আসবে। সর্বনাশা অনলাইন গেমে লাগাম টানা জরুরি।
অবস্থানে বিশ্বনাথবাবুর সঙ্গ দেওয়া পার্থপ্রতিম গুহ বলেন, তীর্থ ভিডিও গেমে আসক্ত ছিল। সে কারণে বাজারে ধারবাকি হয়েছিল। জেলার পাশাপাশি গোটা শহরজুড়েই অনলাইন গেম, ক্রিকেট বেটিংয়ের রমরমা। বাড়িতে বসে বিপুল টাকা রোজগারের প্রলোভনে পড়ে ভালো ঘরের শিক্ষিত ছেলেরা সর্বস্বান্ত হচ্ছে। অনেক অল্প শিক্ষিত যুবকও বাজি ধরছেন ক্রিকেট খেলায়। এঁদের মধ্যে কেউ কেউ সব হারিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। এর সঙ্গে কোনও চক্রের যোগ থাকতেও পারে। তবে আমাদের ধারণা এর পিছনে অনলাইন গেমের চক্র সক্রিয়। তাতে অনেকে প্রচুর টাকা ফিনান্সও করছেন। চিকিৎসকদের মতে, শুধু সর্বস্ব হারাচ্ছে তা নয়, অত্যাধিক গেমের নেশায় মস্তিষ্ক-মননে পড়ছে প্রভাব। • নিজস্ব চিত্র