দুবাই ও নয়াদিল্লি: দেশে ফিরল কুয়েতে অগ্নিকাণ্ডে মৃত ভারতীয়দের দেহ। শুক্রবার সকালে ৪৫ জনের দেহ নিয়ে কোচিতে অবতরণ করে বায়ুসেনার বিশেষ বিমান। সেখানে ৩১ জনের দেহ তাঁদের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। উপস্থিত ছিলেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুরেশ গোপী সহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতা। মৃতদের শ্রদ্ধা জানান তাঁরা। বিমানবন্দর থেকে দেহ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য ছিল অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা। এরপর বাকি ১৪ জনের দেহ নিয়ে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দেয় বিমানটি। বুধবার ভোরে কুয়েতের মানগাফ শহরের একটি বহুতলে ভয়াবহ আগুন লাগে। মৃত্যু হয় ৪৯ জনের। সরকারি সূত্রে খবর, মৃতদের মধ্যে ৪৫ জন ভারতীয়। আহত অবস্থায় আরও অনেকে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মৃতদের পরিচয় জানতে ডিএনএ পরীক্ষার সাহায্য নেয় কুয়েতের প্রশাসন। এখন পর্যন্ত ৪৮ জনের পরিচয় জানা গিয়েছে বলে খবর। এদিন বায়ুসেনার বিশেষ বিমানে চেপেই দেশে ফেরেন বিদেশ মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী কে ভি সিং। এদিকে, কুয়েতে যাওয়ার অনুমতি না পাওয়ায় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন কেরলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বীণা জর্জ। অগ্নিকাণ্ডে মৃতদের মধ্যে ২৩ জন কেরলের বাসিন্দা। আহতদের মধ্যেও এই দক্ষিণী রাজ্যের বেশ কয়েকজন মানুষ রয়েছেন। এই আবহে তাঁদের পাশে দাঁড়াতে কুয়েতে যেতে চেয়েছিলেন বীণা। এবিষয়ে তিনি বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডে মৃতদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি কেরলের বাসিন্দা। হাসপাতালে আমাদের রাজ্যের অনেকে চিকিৎসাধীন। দূতাবাস থেকে গুরুতর আহতদের সংখ্যা সঠিকভাবে জানানো হয়নি। তাই ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁদের সমস্যা কেন্দ্রের সামনে তুলে ধরতে চেয়েছিলাম। এই পরিস্থিতিতে কুয়েতে যাওয়ার অনুমতি না পাওয়া অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।’
বৃহস্পতিবার কুয়েতে যান বিদেশ মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী কে ভি সিং। পাঁচ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ভারতীয় শ্রমিকদের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। একইসঙ্গে মৃতদেহ দেশে ফেরানো নিয়ে সেখানকার মন্ত্রীদের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। এরপরই শুক্রবার ৪৫ জনের দেহ নিয়ে দেশে ফিরে আসে বায়ুসেনার বিমান। এবিষয়ে রাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সাধারণত এই ধরনের কাজ শেষ করতে প্রায় দশ দিন সময় লাগে। প্রশাসনের তৎপরতায় এত কম সময় কাগজপত্রের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সকলকে ধন্যবাদ জানাই।’
বুধবারের অগ্নিকাণ্ডে বন্ধুদের বাঁচাতে পারেননি অনিল কুমার। বর্তমানে পায়ে প্লাস্টার নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি। ঘটনার কথা মনে করতে গিয়ে রীতিমতো আঁতকে উঠলেন ওই যুবক। তাঁর কথায়, ‘সেদিনও ভোরে ঘুম থেকে উঠেছিলাম। বাথরুম থেকে বেরতেই দেখি, চারদিক ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অধিকাংশ মানুষ ঘুমচ্ছিলেন। দরজায় দরজায় গিয়ে সকলকে ডাকার চেষ্টা করেছিলাম। তারপর চার বন্ধুকে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে বাইরে আসার চেষ্টা করি। কিন্তু ধোঁয়ার কারণে যেতে পারিনি। অবশেষে প্রাণ বাঁচাতে তিনতলা থেকে নীচে ঝাঁপ দিয়েছিলাম।’
ছেলের কফিনের সামনে ভেঙে পড়েছেন বাবা। শুক্রবার কোচিতে।-পিটিআই