পড়ে গিয়ে বা পথ দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্তির যোগ থাকায় সতর্ক হন। কর্মে উন্নতি ও সাফল্যের যোগ। ... বিশদ
বরুণদার কিছু রাজনৈতিক সংস্পর্শও ঘটেছিল। যেমন— ইন্দিরা গান্ধী মন্ত্রিসভার সেকেন্ড-ইন-কমান্ড প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ওঁর খুবই সুসম্পর্ক ছিল। আবার ফরোওয়ার্ড ব্লকের মতো বামপন্থী দলের সঙ্গেও নৈকট্য ছিল বলে শুনেছি আমার বন্ধু সাংবাদিক সুমন চট্টোপাধ্যায়ের কাছে। বরুণদা আদতে বরিশালের মানুষ। দেশভাগের পর ওপার বাংলার মানুষের হৃদয়ে যে বেদনা, ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়েছিল, উনিও তাঁর ব্যতিক্রম ছিলেন না। এপ্রসঙ্গে বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। বামপন্থী মনোভাব থেকেই ‘মেঘে ঢাকা তারা’, ‘কোমল গান্ধার’-এর মতো ছবিতে ছিন্নমূল মানুষের কথা উঠে এসেছে। সেই ভাবনার সাজুয্য আমি বরুণদার মধ্যে খুঁজে পাই। আর উনি ছিলেন অত্যন্ত সুদর্শন পুরুষ। একটা সময় ওঁকে ‘সাংবাদিকতার জগতের উত্তমকুমার’ বলা হতো।
তরুণ বয়সে উনি ‘বর্তমান’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করতেন। অবশ্য, পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। আর উনি অন্য সংবাদপত্রে সাংবাদিকতার চাকরি গ্রহণ করেন। কিন্তু ওঁর মনে যে একটি পত্রিকা সম্পাদনার স্বপ্ন ছিল, তা বিনষ্ট হয়নি। আর সেই স্বপ্নই বাস্তবায়িত হল ১৯৮৪ সালের ৭ ডিসেম্বর। প্রকাশিত হল— ‘বর্তমান’। এখানেই উনি সফল, এটাই বরুণদার ব্যক্তিগত ক্যারিশমা। আমি আর একটু বাড়িয়ে বলতে চাই, সাংবাদিক বরুণ সেনগুপ্তর পাশাপাশি ব্যবসায়ী বরুণ সেনগুপ্তও সফল। নইলে এমন একটি প্রতিষ্ঠানকে সাফল্যের চূড়ায় নিয়ে যাওয়া অসম্ভব।
বরুণদা যে সংবাদপত্রে চাকরি করতেন, সেখানে আমার কোনও লেখা প্রকাশ হলে উনি তার প্রশংসা করতেন। মাঝেমধ্যে মহাভারতের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রশ্নও করতেন। মহাকাব্য, পুরাণ নিয়ে ওঁর যে এই আগ্রহ, তা দেখে রীতিমতো চমকে যেতাম। এরপর তো উনি ‘বর্তমান’ পত্রিকা প্রকাশ করলেন। মাঝে অনেকদিন যোগাযোগ ছিল না। কিন্তু উনি আমাকে ভুলে যাননি। ‘শারদীয়া বর্তমান’-এর দ্বিতীয় সংখ্যা থেকে আমি সেখানে লিখছি। সেটাও একটা অদ্ভুত ঘটনা। রমাপদ চৌধুরী তখন একটি অন্য পত্রিকায় রয়েছেন। কিন্তু উনিই আমাকে বললেন, পুজো সংখ্যায় লেখার জন্য বরুণদা নাকি আমাকে দেখা করতে বলেছেন। তারপর বরুণদারও ফোন পেলাম। সেই শুরু হল ‘বর্তমান’ গোষ্ঠীর পত্র-পত্রিকায় আমার লেখা। এরপর ‘সাপ্তাহিক বর্তমান’ ম্যাগাজিনে দু’টি ধাপে প্রায় সাড়ে ছ’বছর ধরে লিখেছিলাম ‘মহাভারত কথা’।
আর একটি প্রসঙ্গে না বললে বরুণদাকে নিয়ে আলোচনা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তা হল, বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্থানে তাঁর অবদান। উনি এতটাই দূরদৃষ্টি সম্পন্ন মানুষ ছিলেন যে, বুঝতে পেরেছিলেন বামফ্রন্ট সরকারের বিকল্প যদি কেউ থাকেন, তিনি মমতা। উনি ভবিষ্যতের নেত্রীকে চিনতে পেরেছিলেন। রাজনীতিক মমতাকে যে আমি পছন্দ করি, তাতে বরুণদার একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। কারণ তাঁর লেখা পড়ে, তাঁর সঙ্গে এরাজ্যের রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে আমার মনে একটি ইতিবাচক চিন্তার জন্ম নেয়।
আজ, ৭ ডিসেম্বর বরুণদার হাতে তৈরি ‘বর্তমান’-এর জন্মদিন। এই পত্রিকা সুবর্ণ জয়ন্তী পেরিয়ে শতবর্ষের দিকে এগিয়ে যাবে ঈশ্বরের কাছে এই প্রার্থনাই করি।