নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: মাত্র এক বছরের মধ্যে দুই মেগা ধর্ম-ইভেন্ট ভারতের আর কোনও রাজ্য সরকার পায়নি। ২২ জানুয়ারি ২০২৪ ছিল রামমন্দির উদ্বোধন। ১৩ জানুয়ারি ২০২৫ থেকে পূর্ণকুম্ভ। আয়তন, জনপ্রিয়তা, ভিড়, বাণিজ্য এবং আর্থিক লেনদেনে দুয়ের মধ্যে কোনও তুলনাই হয় না। কুম্ভমেলা সপ্তম শতক থেকে ভারতের ধর্মীয় মহোৎসব। তবে হিউয়েন সাংয়ের লিখে যাওয়া সেই কুম্ভ ছিল নিছক ধর্মের উদযাপন। কিন্তু এবার তার ভিতরে লুকিয়ে থাকছে আর একটি কুম্ভমেলা। বাণিজ্যের। কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি (সিআইআই) কিংবা কনফেডারেশন অব অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্সের ইউপি শাখা একটি সমীক্ষা রিপোর্ট তৈরি করেছে। সেখানে বলা হচ্ছে, প্রায় দেড় মাসের কুম্ভমেলায় অন্তত ২ লক্ষ কোটি টাকার বাণিজ্য হতে চলেছে। অর্থাৎ, যোগী আদিত্যনাথ ও নরেন্দ্র মোদির চিত্রনাট্যের কুম্ভমেলা শুধু ধর্মের উৎসব নয়, সঙ্গে বৃহৎ এক বিজনেস সম্মেলনও।
ভারতের আনুমানিক জনসংখ্যা কত? ১৪০ কোটি। আর আগামী ৪৫ দিন ধরে প্রয়াগরাজের কুম্ভমেলায় পর্যটক, ভক্ত, পুণ্যার্থী, দর্শক, নাস্তিক, আস্তিক, রাজনীতিক, অরাজনীতিক, ধার্মিক, অধার্মিক মিলিয়ে কত মানুষ আসতে চলেছেন? অন্তত ৪০ কোটি! কেন্দ্রকে অন্তত সেই রিপোর্টই দিয়েছে যোগীর সরকার। সমীক্ষায় ধরা হয়েছে, প্রতিদিন ১৭ হাজার কোটি টাকার পণ্য সরবরাহ হবে। ময়দা, চিনি, চা, মশলায় ব্যবসা হবে ৪ হাজার কোটি টাকার। অসংখ্য ভাণ্ডারায় অন্তত ১ হাজার কোটি টাকার ভোজ্য তেল দরকার। শুধু দুগ্ধজাত পণ্যের ‘এস্টিমেট’ ধরা হয়েছে ৪ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া রয়েছে গঙ্গাজল নেওয়ার জারিকেন, ই-রিকশ, অটো, বাস, নৌকা, হিটার, স্নানের আগেপরে পোশাক বদলের জায়গা। হোটেলের দর কত উঠেছে শাহি স্নানের সময়? দেড় লক্ষ টাকা প্রতিদিন। বিমান ভাড়া কিছু রুটে ২২ হাজার টাকা ছুঁয়েছে ইকনমি ক্লাসেই।
শুধু গঙ্গা, যমুনা ও লুপ্ত সরস্বতীর সঙ্গম তীরবর্তী তটভূমিই কুম্ভমেলা নয়। মোট সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর এলাকা। একদিকে সঙ্গম, অন্যদিকে সিভিল লাইনস। একদিকে আকবর ফোর্ট, অন্যদিকে শায়িত হনুমান মন্দির। সিভিল লাইনস থেকে রাজপথ পেরিয়ে মেলার দিকে অগ্রসর হলে দেখা যাবে লক্ষ লক্ষ মানুষ হাঁটছে। আদতে পূর্ণকুম্ভমেলা কোনও মেলা নয়। গড়ে উঠেছে একটি আদ্যন্ত শহর। যে শহরে হাজার হাজার তাঁবু। অস্থায়ী হাসপাতাল। অসংখ্য মন্দির। তাবৎ সরকারি দপ্তর। একঝাঁক পুলিস থানা। হোটেল রেস্তরাঁর ঢল।
এই ৪ হাজার হেক্টর জুড়ে ৪৫ দিন ধরে ৪০ কোটি মানুষের আনাগোনা হবে। ৫ লক্ষ থেকে দেড় কোটি—হোর্ডিং, ফ্লেক্স, এলইডি, অডিও ভিস্যুয়াল প্যাকেজের জন্য মোটা টাকা দিতে হচ্ছে রাজ্যকে। কুম্ভকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করলেই ‘ফেল কড়ি মাখো তেল’! মোবাইলে রিলস করতে চাইলেও কিছু ক্ষেত্রে আগাম অনুমতি এবং মাশুল দিতে হবে। যোগী আদিত্যনাথ বিলক্ষণ বুঝেছেন, কুম্ভ নামক দৈব পিকনিকেও বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী!
সুখটান। গঙ্গাসাগর মেলা উপলক্ষ্যে বাবুঘাটের ট্রানজিট ক্যাম্পে। ছবি: পিটিআই